‘জুতা পায়ে গলা টিপে সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করেন ওসি’


মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টের বিপরীতের আমার কর্মরত মসজিদে আমি এশারের নামাজের পর অপেক্ষা করছিলাম। রাত সাড়ে ৯টার দিকে একটি গুলির আওয়াজ শুনে দৌড়ে চেকপোস্ট এলাকায় আসি। দেখি ইন্সপেক্টর লিয়াকত এক লোককে গুলি করেছেন। প্রথম গুলির পর পর আরেকটি গুলি করেন। কাছে গিয়ে লাথি দিলে লোকটি সড়কে নেতিয়ে পড়ে। তখন আরও দুই রাউন্ড গুলি করা হয়। রাস্তায় লুটিয়ে পড়লেও তখনো তিনি জীবিত ছিলেন। পানি পানি বলে ছটফট করছিলেন।
কিন্তু কেউ তাকে পানি দেয়নি। অল্পক্ষণ পর টেকনাফের দিক থেকে আসা গাড়ি থেকে নেমে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তিনি গাড়ি থেকে নেমে ইনসেপ্ক্টর লিয়াকতের সাথে কথা বলেন। পরে গুলিবিদ্ধ লোকটির কাছে আসে প্রদীপ। তখন লোকটি পানি চায় আবার। কিন্তু প্রদীপ সিনহাকে পানি না দিয়ে বুকে লাথি মারেন। জুতা পায়ে লোকটির গলা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন ওসি প্রদীপ। পরে জানতে পারি মারা যাওয়া লোকটি আর্মির মেজর (অব.) সিনহা।
আলোচিত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের ৩য় দিনে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এমন সাক্ষ্য দিয়েছেন পঞ্চম সাক্ষী বাহারছড়ার বায়তুন নুর জামে মসজিদের ইমাম ও হেফজখানার শিক্ষক হাফেজ মো. আমিন। এসব কথা জানিয়েছেন মামলার সাথে জড়িত একাধিক আইনজীবী।
মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের ৩য় দিনে তিনিই একমাত্র সাক্ষ্য দেন। তার জবানবন্দি নেওয়ার পর ১৫ আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন বলে জানিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।
সিনহা হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকার্যের ৬ষ্ঠ দিনে পঞ্চম সাক্ষী হিসেবে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী হাফেজ মো. আমিনের জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) ১০টা ৫ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দিয়েছিলেন আমিন। তাই সিনহার সফরসঙ্গী সিফাতের মতো হাফেজ আমিনের জবানবন্দি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, হাফেজ আমিনের সাক্ষ্য গ্রহণের বিষয়ে ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, হাফেজ আমিন মূলত রোহিঙ্গা। সে নিজেই জানে না ওই মসজিদের কমিটিতে কারা আছে। যিনি মসজিদ কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম জানেন না সে কি করে সে মসজিদের ইমাম হয়। তাই আমরা মনে করছি সে যা বলে সব মিথ্যে বলছে।
হাফেজ আমিনকে রোহিঙ্গা দাবি করে রানা দাশ গুপ্ত বলেন, মূলত সাক্ষী আমিন টেকনাফের শামলাপুরের ২৩ নং ক্যাম্পে বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিক। যেখানে ক্যাম্প থেকে বের হতেই অনুমতি লাগে সেখানে সে কি করে প্রত্যক্ষদর্শী হয়।
কিন্তু এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বাদিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিভিন্ন তালবাহানায় সময় ক্ষেপণ করছেন। অপ্রয়োজনীয় কথা বলছেন যাতে সাক্ষীরা বিভ্রান্তিতে পড়ে।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, মামলার ৫নং সাক্ষী আদালতকে যথার্থ বলেছেন। তিনি রোহিঙ্গা নাগরিক নন, বাংলাদেশি নাগরিক। এছাড়া তিনি হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য নিজ চোখে দেখেছেন। তিনি যা দেখেছেন তাই আদালতে বর্ণনা করেছেন। তাকে রোহিঙ্গা বলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি মামলাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার আসামি পক্ষের কৌশল। এতে বিভ্রান্ত হবার কিছু নেই।
এমবি
