ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

করোনায় মৃত্যুর ৮০ শতাংশই পঞ্চাশোর্ধ্ব

করোনায় মৃত্যুর ৮০ শতাংশই পঞ্চাশোর্ধ্ব
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যায় ধারাবাহিকভাবে রেকর্ড ভাঙা-গড়া চলছে। সর্বশেষ দুইদিন মৃতের সংখ্যা ছিল নব্বইয়ের ওপর। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা গতকাল ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল মৃত্যু হয়েছে ৯৪ জনের। মৃত ১০ হাজারের মধ্যে ৮০ শতাংশের বয়স ছিল পঞ্চাশোর্ধ্ব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে মৃতদের বয়সভিত্তিক এমন চিত্র উঠে এসেছে।

গত বছরের জুন থেকে পরবর্তী তিন মাস দেশে তীব্র ছিল করোনার সংক্রমণ। এরপর সংক্রমণ কমলেও নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বাড়ে। জানুয়ারিতে কমলেও ফেব্রুয়ারির শেষে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। এর মধ্যে চলতি বছরের মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ। প্রথম পর্যায়ের চেয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এ সময় দৈনিক সুস্থ হওয়ার চেয়ে শনাক্তের সংখ্যা বেশি। মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা নয় হাজার ছাড়ায় ৩১ মার্চ। আট হাজার থেকে মৃত্যু নয় হাজার ছাড়াতে সময় লেগেছিল ৬৭ দিন। আর সর্বশেষ এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে। দেশে চলমান এ মহামারীতে এটিই দ্রুত সময়ে এক হাজার মৃত্যুর রেকর্ড। এর আগে এক হাজার মৃত্যুতে সবচেয়ে কম ছিল ২৩ দিন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১০ হাজার ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৭ হাজার ৪৯৯ জন পুরুষ ও ২ হাজার ৫৮২ জন নারী। বয়স বিবেচনায় তাদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব ছিলেন ৮ হাজার ১৫৫ জন, যা মোট মৃতের ৮০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এছাড়া ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছিলেন ১ হাজার ১২৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ছিলেন ৪৯৮ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিলেন ১৯২ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিলেন ৭১ জন এবং শূন্য থেকে ১০ বছরের শিশুর সংখ্যা ৪০ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪ হাজার ১৯২ জনের শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এতে মোট আক্রান্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭ হাজার ৩৬২ জনে। গত চারদিন ধরে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমে যাওয়ায় শনাক্তের সংখ্যাও কমেছে। গত ১২ এপ্রিল ৩৪ হাজার ৯৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৭ হাজার ২০১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হন। এরপর ১৩ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯৫৫টি নমুনার বিপরীতে ৬ হাজার ২৮ জন, ১৪ এপ্রিল ২৪ হাজার ৮২৫টি নমুনার বিপরীতে ৫ হাজার ১৮৫ জন এবং গতকাল ১৯ হাজার ৯৫৯টি নমুনার বিপরীতে ৪ হাজার ১৯২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।


বিভাগভিত্তিক হিসাবে মৃতদের ৫ হাজার ৮৫৪ জন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। বাকিদের মধ্যে ১ হাজার ৮০৮ জন চট্টগ্রামের, ৫৪১ জন রাজশাহীর, ৬২৮ জন খুলনার, ৩০১ জন বরিশালের, ৩৪৬ জন সিলেটের, ৩৯১ জন রংপুরের এবং ২১২ জন ময়মনসিংহের বাসিন্দা ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২৫৭টি পরীক্ষাগারে ১৯ হাজার ৯৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫১ লাখ ১৫ হাজার ৫৭২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২১ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮৩। আর শনাক্ত রোগীদের মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশে। গতকাল বাড়ি ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো ৫ হাজার ৯১৫ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে ওঠায় মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ২১৪ জন।

২০১৯ সালের ৩১ মার্চ চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর দুই মাসের মধ্যে বিশ্বের শতাধিক দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগীর মৃত্যুর খবর জানায় সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম ও মৃতের সংখ্যা ৩৮তম। 


টিএইচএ/
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন