সমুদ্রগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান


কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার পূর্বদিকেই কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান কিংবা ইকোপার্ক। আগত পর্যটকদের কাছে ঠিক এভাবেই পরিচিত এ নামটি। তবে অব্যাহত বালুক্ষয় আর ভাঙনের কবলে এর সুন্দর্য্য হারিয়ে সৈকতে এখন নামেই শুধু লেখা রয়েছে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান। আর পাশেই পড়ে আছে এর ধংসস্তুপ। অভিযোগ রয়েছে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান ঘোষণার দশ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি আজও। ফলে সাগরতীরে আসরে পড়া অব্যাহত উত্তাল ঢেউয়ের তা-বে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধেক বাউন্ডারি দেয়ালসহ উদ্যানের বিভিন্ন ছোট বড় আকর্ষনীয় স্থাপনা।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইনে পটুয়াখালী জেলাধীন সংরক্ষিত বনের কুয়াকাটা ইকোপার্ক বনাঞ্চল এলাকার গঙ্গামতি, কুয়াকাটা ও খাজুরা ক্যম্পের ১৬১৩ হেক্টর সংরক্ষিত বন এলাকা নিয়ে ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তৎকালীন ভূমি সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার এক চিঠিতে আন্ধারমানিক নদীর মোহনা থেকে গঙ্গামতি সৈকতের পাড় পর্যন্ত এবং ওয়াপদা বেড়িবাঁধের বাইরে সাগর পাড় পর্যন্ত নির্ধারিত এলাকা জাতীয় উদ্যানের অধীভূক্ত করা হয়। ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর এ ঘোষণা দেয়া হয়। তবে এরপর কয়েকদফা চিঠি চালাচালির মধ্যেই থমকে যায় এর উন্নয়ন কার্যক্রম। ফলে লাগাতার ভাঙনে ইকোপার্ক এলাকার দৃষ্টিনন্দন লেক, সবুজ বনাঞ্চল এবং অবকাঠামোসহ অর্ধেকটা সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এরই মধ্যে সমুদ্রগর্ভে গিলে খেয়েছে হাজারো একর বনভূমি।
জানা যায়, মহিপুর রেঞ্জের অধীন গঙ্গামতি, কুয়াকাটা ও খাজুরা ক্যাম্পের ১৬১৩ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমিতে উদ্ভিদ, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ও পর্যটন সুবিধাদি উন্নয়নের লক্ষ্যে কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় খাজুরা ক্যাম্প অধীন এলাকা থেকে গঙ্গামতি পর্যন্ত সৈকত এলাকায় এখন আর বনভূমি কিংবা সংরক্ষিত বনাঞ্চল নেই। তেমনি সাগরবক্ষে বিলীন হয়ে গেছে সংরক্ষিত বাগানের হাজার হাজার ছইলা, বাইন, কেওড়া, কড়াই, গড়ান, নারিকেল, নিম, তাল থেকে শুরু করে গুল্ম জাতীয় গাছপালা। সরকারের জাতীয় উদ্যান গড়ার কর্মকে ভেস্তে দিয়ে বনদস্যুরাও সবুজ বনাঞ্চল বিরানভূমিতে পরিণত করেছে। উদাসীন ও লোভী বনকর্মীরা বনদস্যুদের দোসর হিসেবে কাজ করেছে বলেও এমন একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ফলে আজও জাতীয় উদ্যান কেবল ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা সহকারী বন সংরক্ষক তারিকুল ইসলাম জানান, পর্যটন এরিয়া হিসেবে আমরা কুয়াকাটা ইকোপার্ক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কারণ ওখানে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা ঘুরতে আসে। ওখানে বেশ কিছু এলাকা সাগরগর্ভে বিলীনসহ বহু অবকাঠামো ভেঙে গেছে। নতুন করে সেগুলো মেরামত করতে হবে। করোনার জন্য গত দুই বছর যাবত আমরা কোনো প্রজেক্ট হাতে পাইনি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বনাঞ্চল তথা ইকোপার্ক রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যানসহ সৈকত ভাঙন সরেজমিন তদন্ত শেষে স্টার্ডি করে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আশা রাখি খুব শিগগিরই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
এইচেকআর
