ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news
শোক দিবসে দোয়া-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে

গণমাধ্যমকর্মীদের রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম সমাপ্ত

গণমাধ্যমকর্মীদের রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম সমাপ্ত
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

করোনায় ঝুঁকি জেনেও যারা মাঠে কাজ করছেন তাদের জন্য আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। সরকারি-বেসরকারি প্রশাসন, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান যারা যারা এই ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বরিশালের গণমাধ্যম কর্মীদের ‘উদ্যোগ’। করোনাকালীন সময় ধারাবাহিকভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্যোগে বরিশাল নদী বন্দরে রান্না করা খাবার সরবরাহ অব্যাহত ছিল।

আজ ১০ আগস্ট এই পর্বে লকডাউনের শেষ দিনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দোয়া-মোনাজাত এবং খাবার বিতরণের মধ্য দিয়ে খাবার বিতরণ কাজ সাময়িক সমাপ্ত করা হয়েছে। আগামীতে লকডাউন চালু হলে আবারো গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। ২০১৯ সালের গোড়ার দিকে চীনের একটি প্রদেশে আঘাত হানে করোনা। চীন সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ালেও ঝুঁকিতে পড়ে গোটা বিশ্ব। কোনভাবেই এর ছোবল থেকে মুক্তি পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। করোনার এই যুদ্ধ মোকাবেলা কেবল সচেতন ও সতর্কতা ছাড়া আর যেন কিছুই করার নেই। কেবল অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর মিছিল দেখছে উন্নত দেশগুলো। এতো মৃত্যুর মিছিলের মধ্যে দাঁড়িয়েও একদল মানুষ কাজ করেছেন এবং করে চলেছেন।

যারা মাঠে থেকে আমাদের সচেতন করছেন, সতর্ক করছেন। নিজেদের সুরক্ষা ব্যবস্থা সেভাবে না থাকার পরও তারা দিন-রাত সেবা করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ, সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও গণমাধ্যম। পৃথিবী জুড়ে এখন কেবল একটা আওয়াজ ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন’ ‘সচেতন থাকুন, সতর্ক থাকুন’।

 বলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব কিংবা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখলেই এই দুর্যোগ থেকে বাঁচা সম্ভব। করোনা শুরুর পর থেকে যদি সারা বিশ্বের মানুষ ওই নির্দেশনা অনুযায়ী বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত তার পরিণতি আরও ভয়াবহ হতো। কারণ দূরে থাকলে করোনায় মৃত্যুর মিছিলের সৎকার কে করাতো? পৃথিবীর নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নিত? করোনার ভয়াবহতার তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিত কে? কে কিভাবে খাদ্য চাহিদা মেটাতো? কর্মহীন এবং দুঃস্থরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো? 

এমন অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়াও কঠিন হতো। এমন প্রশ্ন যাতে না ওঠে সেজন্য সারা পৃথিবীতে একদল মানুষ জীবন বাজি রেখে কাজ করে চলেছে। সামাজিক দূরত্ব রাখার নির্দেশনার মধ্যেই তারা ঝুঁকি নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। যার যার পেশার বাইরেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। আর তারা ঝুঁকি নিচ্ছেন বলেই আজ পৃথিবীর এই দুর্যোগ মোকাবেলায় কিছুটা হলেও ইতিবাচক অগ্রগতির দিকে হাঁটা সম্ভব হচ্ছে। যিনি এবং যারা আমাদের নিরাপদ রাখতে নিরন্তরভাবে কাজ করে চলেছেন তাদের কাছে আমরা ঋণি হয়ে থাকবো আজন্ম। এদের একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে গণমাধ্যম। যাদের আমরা সাংবাদিক বলে চিনি এবং জানি। সারা বিশ্বে ডাক্তার, নার্সদের মতো গণমাধ্যম কর্মীরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকেই প্রাণ দিয়েছেন। আক্রান্ত অবস্থায় আছেন অনেকে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। 

বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীরা নিবিড়ভাবে মাঠে থেকে সচেতনতা ও তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে দাঁড়িয়েছেন কর্মহীন ও দুঃস্থ মানুষের পাশে। বরিশালে করোনা মোকাবেলায় গণমাধ্যমকর্মীদের সবচেয়ে বড় কাজ হচ্ছে ছিন্নমূল এবং অসহায় মানুষের পাশে রান্না করা খাবার নিয়ে উপস্থিত থাকা। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে যখনই লকডাউন হয়েছে তখনই তারা সাধ্যমত রান্না করা খাবার নিয়ে দাঁড়িয়েছে দুস্থ ও অসহায়দের পাশে। বরিশালের বেশ কিছু গণমাধ্যমকর্মী বরিশাল নদী বন্দর এলাকায় থাকা দুই শতাধিক অসহায় শিশু এবং দুঃস্থদের রান্না খাবার সরবরাহ করে চলেছে। পেশাগত দায়িত্বের বাইরে এটা এক অনন্য উদ্যোগ। তারা এটার নামও দিয়েছেন ‘উদ্যোগ’। 

গণমাধ্যমকর্মীদের এই উদ্যোগের সঙ্গে সহযোগী হয়ে পাশে থাকছেন সমাজের অপেক্ষাকৃত সচ্ছল এবং সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরা। তাদের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিদিন রাতে খাবার রান্না করে ওই ছিন্নমূল ও দুঃস্থদের হাতে হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। কাল ১১ আগস্ট লকডাউন উঠে যাচ্ছে। তাই এই পর্বে তাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ কার্যক্রম শেষ করেছেন। তবে সব দুর্যোগে তারা এই মানুষগুলোর পাশে আছেন ও থাকবেন বলে জানিয়েছেন। 

গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোক্তা শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সহসভাপতি এসএম জাকির বলেন, ২০২০ সালের মার্চ মাসে নদী বন্দরে কর্মহীন ও অসহায় মানুষের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে উপস্থিত হন তারা। পরবর্তী সময় এই উদ্যোগের সঙ্গে বরিশালের সর্বস্তরের গণমাধ্যমকর্মীরা যুক্ত হন। সহযোগী হন জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরাকারি পর্যায়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ধারাবাহিকভাবে খাবার সরবরাহ করা হলেও লকডাউন উঠে যাওয়ায় উদ্যোগের খাবার সরবরাহ কার্যক্রম সাময়িক সমাপ্ত করা হয়েছে। ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়। আগামীতেও আমরা অসহায় মানুষের পাশে থাকবো।
 

##-সাইফুর রহমান মিরণ


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন