রাখাইন কন্যার স্বপ্নজয়


‘অল্প অল্প করে যখন বুঝতে শিখেছি তখন আমার পরিবারে বেশ আর্থিক দৈন্য ছিল। কৃষক বাবার ঘরে তখন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। এ অবস্থার মধ্যে আমাকে ধর্মীয় শিক্ষায় কিছুটা শিক্ষিত করার প্রয়াসে বাবা পাড়ার এক প্রান্তে থাকা ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে ভর্তি করালেন। এরপর থেকে প্রতিদিন সকালে পাড়ার অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ঠাকুরবাড়ি যাই। শুরু হলো আমার পাঠশালা জীবন।’ এ গল্প কুয়াকাটার কালাচাঁনপাড়ার আদিবাসী রাখাইন মেয়ে ম্যান মে’র। অদম্য প্রত্যয়ী ম্যান মে এখন বাংলাদেশ পুলিশের এক গর্বিত উপপুলিশ পরিদর্শক।
ম্যান মে জানান, তাকে নিয়ে তার পরিবার বেশিদূর যাওয়ার স্বপ্ন দেখেনি। তার পড়ালেখায় মনোযোগ এবং মেধার প্রতি লক্ষ্য রেখে কালাচাঁনপাড়ার শাসনাসুখাকারী বৌদ্ধ বিহারের ধর্মযাজক প্রয়াত উচেনা মহাথেরো ভিক্ষু বাংলা-ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার কথা প্রথমে ভাবেন। এখানকার আদিবাসী রাখাইন ছেলে মেয়েদের নিজস্ব ভাষায় উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ নেই, ফলে তিনি তাকে পাড়ার নিকটবর্তী আমজেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ালেখায় বিশেষ কোনো ব্যয় না থাকায় পরিবার থেকে তখন আপত্তি তোলা হয়নি।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, ম্যান মে একজন মেধাবী ছাত্রী হওয়ার পাশাপশি খুবই বুদ্ধিমতী এবং মার্জিত স্বভাবের ছিলেন। পড়ালেখার প্রতি তার বিপুল আগ্রহ ছিল। অদম্য ইচ্ছাই তাকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। ম্যান মে বলেন, কালাচাঁনপাড়া থেকে গৃহিণী মা অংমাউ প্রতিদিন আমজেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতেন। বর্ষা কিংবা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কোনোটিই নিয়মিত স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমার বাধা হতে পারেনি। তিনি জানান, তার পড়ালেখায় শুরুতে বাবা চিংমং রাখাইনের উদাসীনতা থাকলেও হাই স্কুলে যেতেই বাবা অনুপ্রেরণা জোগাতে থাকেন। যদিও বাবা চিংমং মাধ্যমিকের গন্ডি পেরুতে পারেননি, কিন্তু দেশের প্রচলিত শিক্ষায় তার মেয়ে ম্যান মে উচ্চশিক্ষিত হোক এটা শেষমেশ তিনিও চাইতেন। ম্যান মে জানান, পঞ্চম শ্রেণি শেষ হতেই দেখা দেয় বিপত্তি। শত বাধা ডিঙ্গিয়ে সফল হয়েছেন তিনি।
এইচকেআর
