ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

Motobad news

মসজিদে কুবার ইতিহাস

মসজিদে কুবার ইতিহাস
ছবি : সংগৃহীত
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন মসজিদ তিনটি। মক্কার মসজিদুল হারাম, মদীনার মসজিদে নববি ও জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা। এরপর হলো মসজিদে কুবা। এই মসজিদে নামাজ আদায় করলে এক ওমরাহর সমপরিমাণ সওয়াব। আল্লাহর রাসুল (সা.) নবুওয়ত লাভের পর এটিই ইসলামের ইতিহাসে নির্মিত প্রথম মসজিদ।

পাঠকদের জেনে রাখার সুবিধার্থে এই মসজিদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও ইতিহাস তুলে ধরা হলো-


মসজিদে কুবা ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নির্মিত মসজিদ। মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় মদিনার অদূরে কুবায় এ মসজিদ নির্মাণ করেন। এর আগে মক্কায় তিনি কোনো মসজিদ নির্মাণ করেননি। হিজরতের প্রথম দিন কুবা অবস্থানকালে এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। মসজিদের নির্মাণকাজে সাহাবাদের সঙ্গে স্বয়ং রাসুল (সা.) অংশগ্রহণ করেন।

ইতিহাসবিদরা বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন ভিত্তি স্থাপন করেন, তখন কেবলার দিকের প্রথম পাথরটি নিজ হাতে স্থাপন করেন।

কুবা মসজিদের জায়গাটি ছিল- হযরত কুলসুম ইবনুল হিদম (রা.)-এর খেজুর শুকানোর পতিত জমি। তিনি ছিলেন আমর ইবনে আওফের গোত্রপতি। এখানে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ১৪ দিন (কেউ বলেন ১০ দিন) অবস্থান করেন ও তার আতিথ্য গ্রহণ করেন।


মক্কা শরিফ থেকে ৩২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত এই মসজিদ কুবা গ্রামে অবস্থিত। মসজিদে নববি থেকে এর দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার।

কুবা একটি বিখ্যাত কূপের নাম। সময়ের পরিক্রমায় এ কূপকে কেন্দ্র করে যে জনবসতি গড়ে উঠেছে, তাকেও কুবা বলা হতো। এরই সূত্রে মসজিদের নাম হয়ে যায় মসজিদে কুবা।

পবিত্র কোরআনে কুবার অধিবাসী ও  মসজিদে কুবার প্রশংসা করেন আল্লাহ তাআলা। তিনি বলেন, ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত সেখানে অবস্থান করা আপনার জন্য অধিক সঙ্গত। সেখানে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা পবিত্রতা পছন্দ করে। আর আল্লাহ পবিত্র ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তওবা, আয়াত : ১০৮)


মসজিদে কুবা শুরু থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করা হয়। নবীর আমলের পর ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান ( রা.) তার খেলাফতকালে মসজিদে কুবার সংস্কার ও পুনর্নিমাণ করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও বেশ কয়েকবার এই মসজিদের পুনর্নিমাণ ও সংস্কার করা হয়। উমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), ওসমানি সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ও তার ছেলে প্রথম আবদুল মাজিদ প্রমুখ শাসকরা মসজিদে কুবার সংস্কারকাজ করেন।

৪৩৫ হিজরিতে আবু ইয়ালি আল-হোসাায়নি কুবা মসজিদ সংস্কার করেন। তিনি মসজিদের মিহরাব তৈরি করেন। ৫৫৫ হিজরিতে কামাল আল-দিন আল-ইসফাহানি মসজিদে আরও বেশ কিছু সংবর্ধনের করেন। পরবর্তী সময়ে ৬৭১, ৭৩৩, ৮৪০ ও ৮৮১ হিজরিতে ওসমানি সাম্রাজ্যকালে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। ওসমানি শাসনামলে ১২৪৫ হিজরিতে সর্বশেষ সংস্কার করেন সুলতান আবদুল মজিদ।

১৯৮৬ সালে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের সময় সর্বশেষ সম্প্রসারণ হয়। তখন পুরো মসজিদে এক ধরনের সাদাপাথর ব্যবহার করা হয়, যা অন্যকোনো মসজিদে সাধারণত দেখা যায় না।


মসজিদে কুবার বর্তমান আয়তন ১৩ হাজার ৫০০ স্কয়ার মিটার। চারটি উঁচু মিনার, ছাদে ১টি বড় গম্বুজ এবং ৫টি অপেক্ষাকৃত ছোটো গম্বুজ রয়েছে। এছাড়া ছাদের অন্য অংশে ৫৬টি ছোট গম্বুজের অবয়ব রয়েছে। ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে এই মসজিদে।

মূল মসজিদ ছাড়াও এখানে রয়েছে আবাসিক এলাকা, অফিস, অজুখানা, দোকান ও লাইব্রেরি। তবে মসজিদের মূল আকর্ষণ বিশাল গম্বুজ এবং চার কোণায় চারটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদের চতুর্দিকের সুবজ পাম গাছের বলয় মসজিদটিকে বাড়তি সৌন্দর্য দিয়েছে।


মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ আসেন। মসজিদে নারী ও পুরুষদের নামাজের জায়গা ও প্রবেশ পথ আলাদা। অজুর জায়গাও ভিন্ন। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদের ভেতরের কারুকাজও বেশ মনোমুগ্ধকর।

মূল মসজিদ ভবনের মাঝে একটি খালি জায়গা আছে, সেখানেও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। দামি কারপেট বিছানো মেঝেতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। এছাড়াও রয়েছে জমজম পানির ব্যবস্থা।

মসজিদের উত্তর দিক নারীদের জন্য সংরক্ষিত। ১১২ বর্গমিটার অংশজুড়ে ইমাম ও মুয়াজ্জিনের থাকার জায়গা, একটি লাইব্রেরি, প্রহরীদের থাকার জায়গা এবং সাড়ে ৪শ’ বর্গমিটার স্থানে ১২টি দোকানসমৃদ্ধ একটি বাণিজ্যিক এলাকা।

মসজিদে ৭টি মূল প্রবেশ দ্বার ও ১২টি সম্পূরক প্রবেশ পথ রয়েছে। প্রতিটি ১০ লাখ ৮০ হাজার থার্মাল ইউনিট বিশিষ্ট তিনটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র মসজিদকে ঠান্ডা রাখছে।

মসজিদের বাইরে এ মসজিদ সম্পর্কে বর্ণিত পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিসের বাণীগুলো সুন্দরভাবে লিখে রাখা হয়েছে। ঐতিহাসিক কুবা মসজিদ শ্বেতবর্ণের একটি অনন্য স্থাপত্যকর্ম হওয়ার দরুন বহু দূর থেকে দৃষ্টিগোচর হয়।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন