ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও প্রাসঙ্গিক চিন্তা ভাবনা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও প্রাসঙ্গিক চিন্তা ভাবনা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সচেতন প্রতিটি মানুষই একবাক্যে স্বীকার এবং বিশ্বাস করি মানুষ সৃষ্টির সেরা  জীব। মানুষ মরণশীল, মানুষ তাঁর জীবদ্দশায় স্বীয় কার্যক্রমের মাধম্যেই মৃত্যুর পরও যুগ থেকে সহস্রাব্দ্র অমরত্ব লাভ করে সৃষ্ট কর্মের মাধ্যমে। তন্মধ্যে বাঙালি কয়েকজন হলোঃ- রাজা রামমোহন, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধায়, বঙ্কিম চট্টোপাধায়, কাজী নজরুল ইসলাম, মীর মশাররফ হোসন, ফকির লালন শাহ্, হরিনাথ মজুমদার, মৌলানা ভাসানী, হাসন রাজা, ডাঃ মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, শেখ মুজিবর রহমান, বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া কামাল প্রমুখ। আমি আলোচ্য এ প্রবন্ধে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কিছু আলোকপাত করবো। প্রথমেই বলে নিচ্ছি- জ্ঞানসম্রাট, বিশ্বকোষ, সাহিত্য শিরোমনি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখার বা সমালোচনার ধৃষ্টতা আমার নেই। সাহিত্য চর্চার সাথে সম্পৃক্ততার কারণে বাংলাদেশী ও ভারতীয় অনেক পত্র-পত্রিকা সাময়িকী আমার কাছে আসে এবং সেগুলি পাঠান্তে রবীন্দ্র জীবনী নিয়ে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর তথ্য জ্ঞাত হই। ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ সমগ্র বাঙালির শ্রদ্ধা বা গর্বের পাত্র নয় যদি তাই হতো তাহলে প্রিন্স দ্বারকনাথ, দেবেন্দ্রনাথ, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সহ ঠাকুর বাড়ির অনেকেই সেই শ্রদ্ধার অংশীদার হতেন। রবীন্দ্র রচনাবলী এবং রবীন্দ্র সংস্কৃতি ও জীবন দর্শন বাঙালি তথা বিশ্বমানবের কাছে সমাদরে বরণ হয়ে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ইংরেজদের প্রবাদ ছিল বাঙালি দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিতে জানে না, বাঙালি গুণীর কদর বোঝেনা। পরিবেশ পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বিশ্বকবির স্বীকৃতি পেয়ে বাঙালি হয়েও কবিগুরু সমগ্র বাঙালিকে উপহাস করে বলেছিলেনÑ “সাত কোটি বাঙালির হে মুগ্ধ জননী/ রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি”। কোন দুঃখে বলেছিলেন, কেন বলেছিলেন তা আজ ক্রমান্নয়ে পরিস্কার হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তন করে সহস্র মানবের সমাবেশ দেখে অভিভুত হয়ে আবেগ আপ্লুতে কণ্ঠে বলেছিলেন “কবিগুরু তোমার কথা আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, বাঙালি মানুষ হয়েছে, মানুষের অধিকার আদায় করে তা প্রমাণ করেছে। সেদিনের সেই দীপ্ত কণ্ঠে যে বাঙালিদের তিনি শ্রদ্ধার সাথে মর্যাদা দিয়ে বরণ করেছিলেন পরবর্তীতে ৭৫‘র ১৫ই আগষ্ট স্বপরিবারে জীবন দিয়ে তাঁর মূল্যায়ন পেয়েছেন। বাঙালি জাতির জনক স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন দ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান কতিপয় বাঙালি জাতির কাছে তাইতো আজও বিতর্কিত। বাঙালি জাতির স্বাধীন দেশের জাতীয় সংগীত রচয়িতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁদের কাছে বিতর্কিত হবে এটাই তো স্বাভাবিক। আলো আর অন্ধকারের এই খেলায় আজও তাঁরা অমর কিন্তু যাঁরা মুখরোচক সাহিত্য রচনা করে ক্ষণিকের জন্য কিছু পাঠকের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছেন বা ক্ষমতার সুবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় সমলোচনামূলক প্রবন্ধ লিখে খ্যাতি অর্জনের অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন তাদেরকে নিজ ভবিষ্যত পরিণতি ভাববার জন্য রবীন্দ্র পরবর্তী অসংখ্য কবি সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞদের অস্তিত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হবার অনুরোধ রেখে তাদের বক্তব্য পাঠকদের উপস্থাপন করছি।


    বাংলাদেশ ও ভারতের সুপরিচিতি প্রয়াত কবি সাহিত্যিক ও উপন্যাাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই উক্তিটি তুলে ধরছি। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে প্রকাশিত বহুল প্রচারিত আনন্দ বাজার পত্রিকায় গত ২৭ মে ১৯৯৫ এ “রবীন্দ্র মাফিয়া” শীর্ষক একটি ফিচারে তিনি লিখেছিলেনÑ “রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন পালন, সেটা এখন ক্রমশই হুজুগ হয়ে উঠেছে। এ যুগের ছেলে-মেয়েরা রবীন্দ্র সংগীত শুনতে চায়না। কোনো আগ্রহ নেই রবীন্দ্র সংগীতের প্রতি। পুরোহিত যেমন দেবতার পূজো দিয়ে চাল কলা বেঁধে প্রণামী নিয়ে বাড়ি যান, রবীন্দ্র শিল্পীরা অনেকটা কবি পক্ষে সেইরকম। রবীন্দ্র সংগীত মডার্ণ জেনারেশনের কাছে বোরিং। একই সুর, কোনোরকম ফের নেই। বড্ড সে­া।

 

আধুনিক জীবনের গতির সঙ্গে যায়না। এ যুগের ছেলে মেয়েরা যখন বড় হবে, এখন যারা রবীন্দ্রনাথকে বিশুদ্ধ রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের প্রভাব যখন কমে আসবে, তখন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এই শ্রদ্ধাঞ্জলি হয়তো আর থাকবে না।’ রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন-‘‘রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকাও আমি পছন্দ করিনা। কে বলেছিল তাকে বিশ্বকবি হতে! বিশ্বকবি কথাটারতো কোন মানে নেই। কিন্তু তবু তাকে তথাকথিত বিশ্বকবি হিসেবে খাড়া করার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। এজন্য তিনি নিজেই দায়ী। শুধুমাত্র কবি লিখলেই তো যথেষ্ট হতো, এখন তাঁকে বিশ্বকবি হিসেবে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব যেন আমাদের।” উপন্যাসিক আবুল বাশার বলেছিলেন-“মাফিয়া কথাটিতে আমার আপত্তি নেই।” এই তথাকথিত রবীন্দ্র ভক্তরাই তৈরী করেছেন সুরক্ষিত রবীন্দ্রবলয়। রবীন্দ্রনাথ আর কালমার্কসের মধ্যেও কোন তফাৎ নেই। কমিউনিষ্টরা যেমন মার্কসকে এক্সপ্লয়টেশন করে যাচ্ছেন তেমনি রবীন্দ্রনাথকে রবীন্দ্র ভক্তরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই এক্সপ্লয়টেশন করে যাচ্ছেন।... এই সর্বব্যাপী রবীন্দ্র নির্ভরতা কিন্তু জাতির স্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়,” ইত্যাদি। 


     কোন কোন লেখকের উক্তিতে জমিদার হিসেবে রবীন্দ্রনাথ কোন সুনামের অধিকারী ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ করা হয়। তিনি নাকি প্রজাহিতৈষী ছিলেন না, প্রজাপীড়ক ছিলেন, ছিলেন শোষক। ব্যক্তি চরিত্র পরশ্রীকাতরতা নিয়েও বিভিন্ন বক্তব্য পত্রিকার পাতায় নজরে পড়েছে। মহঃ হেলাল উদ্দিন গত ১ নভেম্বর’৯৭ ( পাক্ষিক পালা বদল, ঢাকা) ‘শুধু রবীন্দ্রনাথ নয় গোটা ঠাকুর পরিবারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন যে ঠাকুর পরিবার প্রজা পীড়নের ব্যাপারে অন্যান্য জমিদারদের তুলনায় কোন অংশে কম ছিলেন না।” ১৮৭৩ সনে পাবনা বিদ্রোহ জমিদারের বিরুদ্ধে প্রজা বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ ঠাকুর পরিবারের বিরুদ্ধেও সংঘটিত হয়েছিল। পাবনার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ঠাকুর জমিদারদের শাহাজাদপুর মহল্লায় মুন্সেফ কোর্টের খাজনা সংক্রান্ত বিরোধে প্রজারা মামলা দায়ের করেন। কোর্টের রায় ঠাকুর পরিবারের বিরুদ্ধে যায়। সিরাজগঞ্জ মহকুমা শাসকের বিভিন্ন রিপোর্টে ঠাকুর পরিবারের প্রজা পীড়নের সাক্ষ্য পাওয়া যায়। এ সকল প্রসঙ্গে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও কথাশিল্পী সিদ্দিকুর রহমান ‘দৈনিক আজকের কাগজ’ এ প্রকাশিত “সাম্প্রতিক রবীন্দ্র বিরোধী অশুভ সংকেত” শীর্ষক প্রবন্ধে যথার্থই উল্লেখ করেন। “রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এপারের চেয়ে ওপারেই বড় বেশি বাঁদরামো করা হচ্ছে।...” লেখকরা কোন অকারণে নাথুরামের ভূমিকা নিয়ে ফুলকে হত্যা করতে চায় এটাই আজ রবীন্দ্র ভক্তদের জিজ্ঞাসা?


    স্বল্প পরিসরে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আলোকপাত করা সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ একটি বিশাল সমুদ্র। সমুদ্রের তলা থেকে মুক্তা খুঁজে আনতে যেমন অনেক গভীরে ডুবতে হয় তেমনি রবীন্দ্রনাথকে জানতে হলে, বুঝতে হলে উপলব্ধি করতে চাইলে অনেক পড়তে হবে জানতে হবে। আজকের এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি রবীন্দ্রনাথ হতে তাঁকে অনেক চড়াই-উৎরাই যেমন অতিক্রম করতে হয়েছে তেমনি নিরলস সাধনা ও একাগ্রতার মাঝে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আজ আমরা জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা করিনা, সম্মান প্রদর্শন করিনা। আমরা বিনম্রচিত্তে শ্রদ্ধা ও সম্মান জ্ঞাপন করি বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রাণপুরুষ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। সেখানে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের কিছু জটিলতা টেনে তাঁর সার্বিক সাহিত্য অবদানকে খাটো করার অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। অনেকে ধর্মীয় গোঁড়ামিতে, কেউ কেউ ভাবাবেগে, আবার কেউ গূঢ় রহস্য না জেনে কান কথায় ঈর্ষান্বিত হয়ে রবীন্দ্রনাথকে এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন। 


    রবীন্দ্র সার্ধশত বর্ষ জন্মজয়ন্তীতে বিশ্বব্যাপী যে রবীন্দ্র মহৎসব পালিত হচ্ছে তা কোন হুজুগের বশবর্তী হয়ে নয়, কোন বিশেষ দল বা ব্যক্তির পরিচালনায় নয়। রবির সৃজনশীল সংস্কৃতি সাধনার আলো বিশ্বব্যাপী যে জ্যোতি ছড়িয়ে ভুবনকে আলোকিত করেছে, মানব হৃদয়কে মোহিত করেছে তার সুরের অমৃতধারায় তারই বহিঃপ্রকাশ। বিকৃত সমালোচকদের মুখে ঝামা ঘষে রবীন্দ্র প্রতিভার আলোয় নিজে যেমন  আলোকিত, বিশ্বমাঝে বাঙালিও আজ আলোকিত। হিংসা বিদ্বেষ দিয়ে নয় মানবতা দিয়ে মানবের সুস্থ সমালোচনা করুন। ‘জন্ম হোক যত্রতত্র, কর্ম হোক ভাল’ এ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সমালোচকদের উদ্দেশ্যে শুধু এটুকু বলবো- ব্যক্তি নয় স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথকে সম্মান প্রদর্শন করবেন। তাঁর অমিয় সৃষ্টির মাঝেই নিহিত আছে আমাদের অমিতশক্তি। সত্যকে যেমন অস্বীকার করা যায়না, তেমনি রবীন্দ্রনাথকে এড়িয়ে বাঙলা শিল্প-সংস্কৃতি সহ আজকের সুনাম কল্পনা করাও বৃথা শ্রম ছাড়া কিছুই নয়, একথা অনস্বীকার্য।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে অনন্য গ্রন্থ গীতাঞ্জলি প্রথম প্রকাশ হয় ১৯১০ এর আগষ্ট মাসে (১৯১৭ বঙ্গাব্দে ৩১ শ্রাবণ)। ১৩১৭ তেই রবীন্দ্রনাথ ৫০ বছরে পদার্পণ করেন। বাংলা গীতাঞ্জলিতে আছে মোট ১৫৭টি গান ও কবিতা। তার মধ্যে ২০টি ‘শারদোৎসব’ও ‘গান’ এ পূর্বেই ছাপা হয়। বাকি ১৩৭টি গান ও কবিতা গীতাঞ্জলির জন্যই লেখেন। ঐ ১৩৭টি গান ও কবিতা লেখেন ১৩১৬ সালে ১৩ ভাদ্র থেকে ১৩১৭’র ২৯ শ্রাবণের মধ্যে (৯২ দিনে)।গীতাঞ্জলির শেষ গানটি লেখেন বই প্রকাশের দু’দিন আগে অর্থাৎ ২৯ শ্রাবণ, ১৩১৭। ১৩৭টি গান ও কবিতার মধ্যে ৫৬টি সুর দেওয়া গান এবং  ৮১টি সুর না দেওয়া গান। ১৩৭টি কবিতা ও গান লিখেছেন: বোলপুরে: ৯৬টি, শিলাইদহে: ১৬টি। 


    ইংরাজি গীতাঞ্জলি (এরঃধহলধষর: ঝড়হম ঙভভবৎরহমং) প্রকাশ পায় ১৯১২ খৃষ্টাব্দে ১ নভেম্বর ইণ্ডিয়া সোসাইটির উদ্যোগে। ১৯১৩ সালের ১৩ নভেম্বর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পেলেন তাঁর নিজস্ব ইংরেজি তর্জমায় ‘এরঃধহলধষর-ঝড়হমং ঙভভবৎরহমং’-এর জন্য। কেবল বাংলা বা ভারতে নয় এশিয়া মহাদেশেই এই মহাসম্মান এলো এই প্রথম। এবং তাও একটি পরাধীন দেশের প্রায় অপরিচিত এক কবির কলমের জোরে। ভাবতে ভালো লাগে সে বছর রবীন্দ্রনাথ ছাড়া আরো ২৭ জনের নাম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে (বেশিরভাগই ইউরোপীয়) প্রস্তাবিত হয়েছিল সুইডিশ আকাদেমির কাছে। প্রস্তাবিত হয়েছিল শাসকদেশ ব্রিটেনের খ্যাতিমান কবি ও ঔপন্যাসিক টমাস হার্ডির (১৮৪০-১৯২৮) নামও। প্রস্তাব করেছিল খোদ ব্রিটেনেরই ‘রয়্যাল সোসাইটি অব লিটারেচার অব ইউনাইটেড কিংডম।’ প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছিলেন সোসাইটির ৯৭ জন সদস্য। আর রবীন্দ্রনাথের নামের প্রস্তাবক ছিলেন সম্পূর্ণ এককভাবে টি. সার্জমুর- যিনি অবশ্য ওই সোসাইটির একজন সদস্য এবং আরো বড়ো কথা, তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের ও তাঁর রচিত সাহিত্যের একান্ত গুণগ্রাহী। সুইডিস আকাদেমির ১৮ জন স্থায়ী সদস্যের মধ্যে ১৩ নভেম্বর তারিখে ভোট দিয়েছিলেন ১৩ জন সদস্য (আবার ১৩ সংখ্যা)। এর ১২ জনই ভোট দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের স্বপক্ষে। সুইডেনের স্টকহলমের ডেটলাইন দিয়ে খবরটি ছিল : ‘ঝঃড়পশযড়ষস, ঞযঁৎংফধু, ঘড়া ১৩, ঃযব ঘড়নষব চৎরুব ভড়ৎ ষরঃবৎধঃঁৎব ভড়ৎ ১৯১৩ যধং নববহ ধধিৎফবফ ঃড় ঃযব ওহফরধহ চড়বঃ জধনরহফৎধ ঘধঃয ঞধমড়ৎব।’ ‘রয়টার’ সংবাদ সংস্থার দ্বারা বিশ্বের সর্বত্র এই খবর প্রচারিত হলো। খবরের সঙ্গে নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য উল্লেখ করা হয়েছিল ৮০০০ পাউণ্ড আর ছিল ১৯০১ থেকে ১৯১২ পর্যন্ত সাহিত্যে পুরস্কার প্রাপকদের নামও।


    পুরস্কারের অর্থমূল্য ৮০০০ পাউণ্ড বলে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা অবশ্যই পুরস্কারদাতা দেশ সুইডেনের অর্থের বিনিময়মূল্য সূচক। সুতরাং সুইডিশ কারেন্সিতে এই পরিমাণ কত ? ১২ ডিসেম্বর ১৯১৩ তারিখে ঘড়নষব ঋড়ঁহফধঃরড়হ-এর পক্ষ থেকে ঐ. ঝবফবৎযড়ষস রবীন্দ্রনাথকে এই অর্থের প্রাপ্তিজ্ঞান এবং ঈযধৎঃবৎবফ ইধহশ ড়ভ ওহফরধ-র কলকাতা শাখা থেকে তা ভারতীয় মুদ্রায় ভাঙিয়ে নেবার পরামর্শাদি সম্বলিত যে পত্র লেখেন, তার প্রথমেই আছে দঞযব ঝবিফরংয অপধফবসু যধারহম ফবপরফবফ ঃড় পড়হভবৎ ঁঢ়ড়হ ুড়ঁ ঃযরং ুবধৎ’ং ঘড়নষব চৎরুব ভড়ৎ খরঃবৎধঃঁৎব বি যধাব ঃযব যড়হড়ঁৎ ঃড় ঢ়ষধপব ধঃ ুড়ঁৎ ফরংঢ়ড়ংধষ ঃযব ধসড়ঁহঃ ড়ভ ঃযব ংধরফ ঢ়ৎরুব শৎড়হবৎ ১৪৩, ০১০৮৯...।’ ঐ পত্রের শেষে প্যারাগ্রাফের অব্যবহিত পূর্বের প্যারায় ছিল, ঙঁৎ পযবপশ ড়ভ ঃযব ঢ়ৎরুব ধসড়ঁহঃ রং সধফব ড়ঁঃ রহ ঝবিফরংয পঁৎৎবহপু ড়হ ড়ঁৎ নধহশ রহ     ংঃড়পশযড়ষস, নঁঃ বি ধৎব ধংশরহম ড়ঁৎ নধহশ ঃড় ঢ়ৎড়ারফব ঢ়ধুসবহঃ নবরহম বভভবপঃবফ ঃড় ুড়ঁ রহ জঁঢ়ববং, রভ ফবংরৎবফ...’কিন্তু পুরস্কারের অর্থ স্টকহলম-এর ব্যাঙ্ক ভারতীয় মুদ্রা ‘টাকা’য় দিয়েছিল কিনা এমন তথ্য জানা যায় না। যা পাওয়া যায়, তাতে উপরোক্ত চাটার্ড ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখা থেকেই রবীন্দ্রনাথ চেকটি পেয়েছিলেন। এমনও হতে পারে যে, ঝঃড়পশযড়ষস-এর ব্যাঙ্ক কলকাতায় চার্টার্ড ব্যাঙ্ককে সে মর্মেই নির্দেশ (ধফারংব) দিয়েছিল।
    ‘রয়টার পরিবেশিত সংবাদে পুরস্কারের অর্থমূল্য ব্রিটিশ কারেন্সিতে ৮০০০ পাউণ্ড বলে প্রচারিত হয়েছিল। টাকা ও পাউণ্ডের সে সময়কার বিনিময় হার সম্ভবত ছিল ১৫ টাকা সমান ১ পাউণ্ড। এই হিসাবে মোট অর্থ ভারতীয় মুদ্রায় হয় ১,২০,০০০/- টাকা। আমরাও প্রায় সকলেই জানি, রবীন্দ্রনাথ যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, তার অর্থমূল্য ছিল একলক্ষ বিশ হাজার টাকা। আমাদের এই জানাটা ভ্রান্ত ছিল না। রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ও তাঁর গ্রন্থে এই পরিমাণ অর্থমূল্যেরই উল্লেখ করেছেন।


    এখন দেখা যাক, রবীন্দ্রনাথ চার্টার্ড ব্যাঙ্ক থেকে ৮০০০ পাউণ্ডের বিনিময়ে কিংবা সুইডিশ মুদ্রা ১৪৩,০১০ সমান ৮৯ ক্রোনারের বিনিময় মূল্য বাবদ কত পেয়েছিলেন ? পাওয়ার কথা ছিল ১,২০,০০০/- টাকা। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ২৪ জানুয়ারি ১৯১৪ তারিখে চার্টার্ড ব্যাঙ্ক থেকে পেয়েছিলেন একটি চেক ১,১৬,২৬৪ টাকার অর্থাৎ আমাদের জানা পরিমাণের চেয়ে ৩,৭৩১ টাকা কম। এই চেকটি তিনি বেঙ্গল ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা দেন। ২৮ জানুয়ারি সেখান থেকে চেকে প্রথমে ৪৮,০০০/- টাকা তুলে পতিসর কৃষিব্যাঙ্কে জমা দেন বার্ষিক শতকরা ৭ টাকা হারের সুদে। এর দুদিনের মাথায় অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি কালীগ্রাম কৃষিব্যাঙ্কে জমা দেন (ঐ একই সুদের হারে) ২৭,০০০/- টাকা। অর্থাৎ মোট ৭৫,০০০/- টাকা তুলে জমা দেন দু’টি কৃষিব্যাঙ্কে। এই টাকার সুদ যাতে শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রমে পাঠানো হয়, তার ব্যবস্থাও করা হয়।


      এত জটিলতার মধ্যে যাওয়া মানে খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজা। অতএব ব্রিটিশ কারেন্সির পাউণ্ডের হিসাবে যাই থাক, কিংবা রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় যা-ই বলুন, রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার বাবদ চেকে মোট টাকা পেয়েছিলেন ১,১৬,২৬৯/- টাকা তার বেশি বা কম নয়। এই সময়ে নানাভাবে অর্থকষ্ট চলছিল রবীন্দ্রনাথের। ধার দেনা ছিল প্রচুর। শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রমের ব্যয়াদি সংকুলানের জন্য রবীন্দ্রনাথ ছিলেন দারুণভাবে চিন্তাগ্রস্থ। এমনকি অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যাদিও অর্থের অভাবে করা যাচ্ছিল না। নোবেল পুরস্কার লাভের সংবাদ পাওয়ার পর শোনা যায়, রবীন্দ্রনাথ নাকি জগদিন্দ্রনাথ রায়, নেপাল চন্দ্র রায় প্রমুখদের বলেছিলেন, যাক, এবার শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রমের ড্রেন তৈরির একটা সুরাহা হলো। কথাটার প্রমাণিকতা না মিললেও সম্ভাব্য তাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না, কারণ অর্থাভাবে বহুবিধ কাজই আটকে ছিল এবং ধারদেনাও শোধ হচ্ছিল না। সুতরাং এহেন অবস্থায় রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কারের টাকার সর্বাধিক অংশ তাঁদের জমিদারির অর্ন্তভূক্ত অঞ্চলের কৃষিব্যাঙ্কে জমা রাখলেন কেন (কলকাতা অথবা বোলপুরে কোন ব্যাঙ্কে না রেখে)? অবশ্য, এই জমা টাকার সুদ বাবদ প্রাপ্য অর্থ ব্রহ্মচর্যাশ্রমে দেবার ব্যবস্থা হয়েছিল। তাতে কিছুটা সুরাহা যে হয়েছিল, সে কথা স্বীকার্য।


    ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন রোধে প্রত্যক্ষভাবে বিরোধিতা করেন। গান গেয়ে বাঙালিকে উজ্জীবিত ও আন্দোলিত করেছিলেন। তিনি দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবতেন। তিনি জালিমানওসালা বাগে ব্রিটিশ প্রশাসনের নারকীয় হত্যাকান্ডের পর ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ডি লিট উপাধী প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি তার সময়কালে প্রতিভাবান সাহিত্যিকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উৎসাহ প্রদান করেন। তাকে ঘিরে প্রগতিশীল সাহিত্য বলয গড়ে উঠে। বাংলা সাহিত্যে তার অবদান নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। তার অধিকাংশ রচনাই ক্লাসিক, যা সর্বকালের সর্বযুগের মানুষের সম্পদ। তিনি তার লেখনী শক্তির দ্বারা বাঙলা সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধি করেছেন। তিনি বিশ্বের শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে পরিবর্তনের হাওয়া নিয়ে এসেছিলেন। তিনি একটি যুগের স্রষ্টা, যে যুগ হচ্ছে রবীন্দ্র যুগ, বলাকা যুগ। শিল্প সাহিত্যে তার পৃষ্টপোষকতা প্রশংসার দাবীদার।


    সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদান ও গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজী অনুবাদ করে তিনি ১৯১৩ সালে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন। তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি সর্বপ্রথম নোবেল পুরষ্কার পান। তার জীবন অভিজ্ঞতায় ভরপুর। তিনি সুদীর্ঘকাল ধরে একটি শতাব্দী জীবনের ইতিবৃত্ত দেখেছেন। মানব সভ্যতার নানা পরিবর্তনের ধারা কে প্রত্যক্ষ করেছেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার কাব্য প্রতিভা আরো বেশি উজ্জ্বলতা পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা মহা বিস্ময়ে আবৃত।

 

তিনি তার বিস্ময়কর সৃষ্টির মাধ্যমে সকলকে বিমোহিত করলেন। তিনি জীবনের আনন্দ, বেদনা, সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ, চাওয়া-পাওয়া প্রভৃতির অনবদ্য রূপকার। তার লেখায় আছে মহামানবের, মহাজীবনের চিরন্তন মহাসংগীতের ঐক্যবান। তিনি মানুষের চিরন্তন দুঃখ বেদনার মহান ভাষ্যকার। তিনি তার সৃষ্টির জন্য বিশ্ববাসীর নিকট সমাদৃত। রবীন্দ্রনাথ এর কবিতা ও গানের জনপ্রিয়তা সারা বিশ্বব্যাপী। তার সকল রচনাই পরিণত, শিল্পগুণ সম্পন্ন এবং বৈশিষ্টমন্ডিত। তিনি তার লেখায় অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর এবং উজ্জ্বলতা আনতে সক্ষম হয়েছেন। দীর্ঘ জীবনের চিন্তা সাধনা ও শ্রমের ফলে মানবচিত্রের অন্দর মহলের গভীরতম জীবনবোধকে পরম মমতায় চিত্রায়িত করতে সক্ষম হয়েছেন। পরিণত বয়সে তিনি প্রবেশ করলেন কোমল ও প্রশান্তি ভুবনে। তার কাব্যশক্তি অসাধারণ।


    বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জগতে তাঁর অমূল্য গ্রন্থগুলি যে চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। তিনি পাঠকের জিজ্ঞাসা ও আকাক্সক্ষার দিগন্তকে খুলে দিয়েছেন। তিনি বাঙালি কবি ছিলেন এটা আমাদের অহংকার। তার লেখা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ নাটক ও উপন্যাস, গান  এবং অংকিত চিত্ত আমাদের শুধু নয় বিশ্বব্যাপী মূল্যবান সম্পদ।


বাংলাদেশ সরকার সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর কুঠিবাড়িতে শান্তিনিকেতনের আদলে ‘রবীন্দ্র বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন যা বাংলাদেশী বাঙালি, রবীন্দ্রভক্ত সহ আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বিরাট প্রাপ্তি। আমরা রবীন্দ্র প্রেমী তথা সচেতন বাঙালিরা সর্বান্তকরণে প্রার্থনা করি বাংলাদেশেও ‘রবীন্দ্র বিশ্ব ভারতী’ আদলে রবীন্দ্র চর্চা ও গবেষণার তথা সুস্থ বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন। যাতে অতীতের মতো সরকার পরিবর্তনে কিংবা রাজনৈতিক কিংবা প্রশাসনিক কোন জটিলতায় এই মহতী উদ্যোগ অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে না থাকে। যাঁর রচিত সঙ্গীতকে আমরা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত-এর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছি, যাকে নিয়ে বিশ্ব মাঝে আমরা বাঙালিরা পরিচিতি লাভ করে সময়ের সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জাতিসংঘে তুলে ধরে বিশ্বের অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান অর্জন করেছি তাঁর মতো নোবেল বিজয়ী প্রথম বাঙালি তথা বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি সম্মানে ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে রবীন্দ্র চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে এ উদ্যোগ অনেক আগেই গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা আমাদের উচিত ছিল। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিশ্র“তি থাকা সত্বেও রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক যে কারণেই হোক এতদিন সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোন সরকার এগিয়ে আসেনি, এবারে তাঁর সুযোগ্য কন্যা তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার গৃহীত প্রকল্প রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় শাহজাদপুরে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করবেন এটাই জাতির প্রত্যাশা।


    ৭  মে ১৮৬১ সালে জন্মগ্রহণ করে সুদীর্ঘ ৮০ বছর জীবদ্দশায় অনেক দুঃখ জ্বালা, বিরহ-বিচ্ছেদ, অবজ্ঞা বিরূপসমালোচনার মাঝেও বাংলা শিল্প সাহিত্যকে পরিপূর্ণতা দিয়ে ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট দেহাবসান হয় এই অমর কথাশিল্পীর। ৮০ বছর বয়সে দেহাবসানকৃত এই মৃত্যুঞ্জয়ী অমর স্রষ্টার ৮০ তম প্রয়াণ দিবসে আজ আমরা ১৬০ বর্ষ অতিক্রম করছি।  রবীন্দ্রনাথ আমাদের বাঙালি চেতনায় রৌদ্রকরোজ্জ্বল সকালের ন্যায় দীপ্যমান। তাকে অবলম্বন করেই আমাদের আবর্তন-বিবর্তন। তিনি আমাদের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। সুন্দর আলোকিত পাপমুক্ত পৃথিবী গড়ার জন্য তাকে আশ্রয় করে আমাদের বলা উচিৎ। তিনি আমাদের অগ্রজ। তিনি সৃজনশীল ব্যক্তিদের কাছে আপনজন স্বরূপ। রবীন্দ্র প্রতিভার প্রসার ও বিস্তার ঘটুক প্রবলভাবে। তাতে আসবে মঙ্গল ও কল্যাণ। মহা জ্ঞানসমূদ্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বিতর্ক/বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়ে সম্মিলিতভাবে আসুন আমরা মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি তোমাদেরই লোক’ রবীন্দ্র চেতনায় জীবন গড়ি, আলোকিত মানুষ হই। নব প্রজন্মকে দেই সৃজনশীল ও বাসযোগ্য সুন্দর পৃথিবী।

                       ... মানিক মজুমদার    

 লেখক পরিচিতিঃ কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সম্পাদক ও সমালোচক, সদস্য, বাংলা একাডেমি, ঢাকা। 


 


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন