ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

Motobad news

'৪ দিন ধরে পানিতে ভাসছি, ছিল শুধু একটা বয়া'

'৪ দিন ধরে পানিতে ভাসছি, ছিল শুধু একটা বয়া'
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

৩-৪ দিন ধরে পানিতে ভাসছি। ছিল শুধু একটা বয়া। তাও ঢেউয়ে বার বার ছুটে যাচ্ছিল। না ছিল খাওয়ার পানি, না ছিল অন্য খাবার। সাগরের পানিও লবণাক্ত। শুধু সাঁতরে বেরিয়েছি। অবশেষে একটি জেলে ট্রলারের সহযোগিতায় বাড়িতে ফিরে আসছি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার কালাইয়া গ্রামের ইব্রাহিম মোল্লার ছেলে সেলিম মোল্লা।

তিনি আরও বলেন, সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার দিন সকালে আমার লোকের কাছে জিজ্ঞাসা করছিলাম, নদীর অবস্থা কেমন? কোনো সিগন্যাল আছে কি না? সে বলেছিল, নেই। পরে আমি বললাম, সাগরে নামব নাকি পাড়ে ধরব? সে বলল, নামো সমস্যা নেই। নদীর অবস্থা খারাপ দেখে আমরা নৌকা পাড়ে নিয়ে গ্রাফি দিয়া দাঁড়াইলাম। দক্ষিণ দিক থেকে হঠাৎ দেখলাম, বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে।যারা নিচে ঘুমাচ্ছিল, তাদের বললাম বের হও সবাই। এই ঢেউয়ে হয় ট্রলার খাবে, না হলে মানুষ খাবে। 


ট্রলারে ঢেউ ধাক্কা দিলে সবাই ছিটকে পড়ে যাই। আমার ভাই রশিদ বয়া ছুঁড়ে দিলে, সেটা আমি সাঁতরে ধরি। আমরা ট্রলার উদ্ধারের অপেক্ষায় বয়া ধরে ভাসতে ভাসতে অপেক্ষা করলাম। পরে একজন একজনকে ধরে বয়া নিয়ে ভাসতে থাকি। আমরা আমাদের নৌকা থেকে দূরে ভাসতে ভাসতে হারিয়ে যাই। পরে ২-৩ দিন পানিতে ভাসার পরে দূরে দেখি কুয়াশার মতো কি একটা দেখা যায়। মনে করেছিলাম, আল্লাহ অন্য নৌকার সাহায্যে বাঁচাইছে। অবশেষে দূরবীন দিয়ে তারা আমাদের বয়াসহ ভাসতে দেখে উদ্ধার করে। 

সেলিম মোল্লার স্ত্রী রোকসানা বেগম বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, তাদের ট্রলার ডুবে গেছে। আমরা ধারণা করেছিলাম, তাদের আর ফিরে পাব না। আল্লাহর কাছে কত কান্না করছি, দোয়া করছি। তারপর ৪-৫দিন পরে শুনি, দুজন লোক পাওয়া গেছে। 

উদ্ধার হওয়া একই গ্রামের সালাম হাওলাদারের ছেলে মিরাজ হাওলাদার জানান, পানিতে সাড়ে চার দিন না খাইয়া ভাসছি। মঙ্গলবার ৫টার দিকে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে রওনা দেই। পরদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জাল ফেলছি। দুপুরের পর তুফান আসছে। মূল মাঝিকে নৌকার সঙ্গে উল্টে ফেলে দিয়েছে ঢেউ। নৌকার ভেতর থেকে যে যেভাবে পারছি বের হইছি।

আমাকে তুফানে ঠেলে নিয়া গেছে। আরেক লোক দেখি পানিতে ভাসে। তারপর তাকে বাঁচাতে আমিও লাফ দিয়েছি। অনেক সাঁতরে একটা বয়া পেয়েছি। সেই বয়া ধরে আল্লাহকে বললাম বাঁচাও। এভাবে ২ রাত ৩ দিন ভাসছি। অবশেষে একটি মাছ ধরার ট্রলার আমাদের উদ্ধার করে।

মিরাজের বাবা সালাম হাওলাদার জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়েছি মঙ্গলবার বিকেল ৫টায়। তারপর বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াইছি।বিভিন্ন ভাবে খোঁজ নিছি।  

ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুৎফন্নেছা খানম জানান, বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ দুই জেলের উদ্ধারের খবর পাওয়ার পর আমরা তাদের সরকারি খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। পাশাপাশি তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। ট্রলারের ক্ষয়-ক্ষতির জন্য আমাদের কাছে আবেদন করলে, আমরা তাদের যথাযথ সহায়তার চেষ্টা করবো।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন