পদত্যাগ করলেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা


পদত্যাগ করলেন ভারতের কর্নাটক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা। এইচডি কুমারাস্বামীর জোট সরকারের পতন হওয়ার পর দুই বছর আগে ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই চতুর্থবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন ৭৮ বছর বয়সী এই বিজেপি নেতা।
ইয়েদুরাপ্পা পদত্যাগ করছেন, এমন গুঞ্জন কয়েকদিন ধরেই চলছিল। সম্প্রতি দিল্লিতে গিয়ে তিনি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ফিরে বলেছিলেন, দলের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ মতো সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবারও ইয়েদুরাপ্পা বলেছিলেন, ‘আমাকে এখনও পদত্যাগ করতে বলা হয়নি। তবে ২৬ জুলাইয়ের পর বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা যা সিদ্ধান্ত নেবেন, আমি মেনে নেব।’ সোমবার উপরমহল থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর পদত্যাগ করলেন তিনি।
সোমবার সকালে বিধানসভায় তার সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তারপর ঘোষণা করেন, সোমবার দুপুরে পদত্যাগ করবেন। সেই মতো দুপুরে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল থাওয়ার চাঁদ গেহলটের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
বিধানসভার ইয়েদুরাপ্পা বলেন, ‘দুপুরে পদত্যাগ করছি। প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী আমাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হতে অনুরোধ করলেও আমি কিন্তু কর্নাটক ছেড়ে যেতে চাইনি। আমাকে বরাবরই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। বিশেষ করে কোভিডের এই দুই বছর।’
ইয়েদুরাপ্পার মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকা উচিত কি না, তা নিয়ে অনেকদিন ধরে জল্পনা চলছিল। কিছুদিন আগে দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র সঙ্গে তার সাক্ষাৎ এই জল্পনাকে আরও জোরালো করে তোলে। অবশেষে সেই জল্পনাকে সত্যি করে পদত্যাগ করলেন তিনি।
বিজেপির নীতি অনুযায়ী, ৭৫ বছরের বেশি বয়সী নেতাদের বড় পদে রাখা হয় না। কিন্তু লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয়তার ‘চাপে’ দুই বছর আগে ইয়েদুরাপ্পাকেই মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপি। কারণ লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের হাতে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ ভোটব্যাংক রয়েছে।
কিন্তু ক্রমশ বিজেপির অন্দরে ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন কর্নাটক বিজেপি নেতাদের একাংশ। ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া ইয়েদুরাপ্পা দিল্লিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু মোদি, শাহ ও নাড্ডা তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
গত বৃহস্পতিবার ইয়েদুরাপ্পা বলেন, ‘আমার ওপর অপরিসীম আস্থা রয়েছে অমিত শাহ আর দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার। আপনারা জানেন যে ৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে কাউকে কোনও পদে বসায় না দল। কিন্তু আমার কাজের বিবেচনা করে আমাকে ৭৮ বছর পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দিয়েছেন। দলকে শক্তিশালী করা ও আবারও আমাদের সরকারকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনাই হলো আমার লক্ষ্য।’
তবে কর্নাটকে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়ের কয়েকজন নেতা রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তারা বলেন, ইয়েদুরাপ্পাকে মুখ্যমন্ত্রী থেকে সরিয়ে দিলে বিজেপিকে ‘ফল’ ভুগতে হবে। হুমকির মুখে পিছু না হটে উল্টো ইয়েদুরাপ্পাকে দিয়েই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে নিল বিজেপি।
এইচকেআর
