ভাণ্ডারিয়ায় জনসাধারণের আগ্রহ বাড়ায় হাসপাতালে ভ্যাকসিন সংকট


পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় বৈশ্বিক উচ্চ পর্যায়ে মহামারী করোনা সংক্রমণ ভাইরাস (কোভিড-১৯)এর সাথে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেলটা প্লাস যুক্ত হওয়ায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০,৩০ থেকে এক লাফে ৫০, ৫২%এ গিয়ে দাঁড়ায়।
পরে দ্বিতীয় বারের জন্য জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ১২শ ৫০ ডোজ ভ্যাকসিন গত সোমবার বিকেলে হাসাপাতালে এসে পৌঁছায়। গত মঙ্গলবার থেকে দ্বিতীয় বারে প্রথম ডোজ দেয়ার শুরুর দিনে মাত্র ৬৯ জে এ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ বুধবারে এক লাফে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৩০৯ জনে এবং বৃহস্পতিবার তৃতীয়দিনে গ্রহণ করেন ৫২২ জনে।
এবিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ননী গোপাল রায় জানান, জনগণের মধ্যে ভ্যাকসিন গ্রহণের আগ্রহ ব্যাপক হারে বাড়ার ফলে আমার হাতে (টি.এইচ.এ) যা আছে তা দিয়ে আগামী ১৭জুলাই শনিবার পর্যন্ত মাত্র ৩০০ জনকে দেয়া সম্ভব হবে। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, যে হারে মানুষের মধ্যে টিকা গ্রহণের আগ্রহ বাড়ছে তাতে শনিবারেই মানুষের সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের মনোমালিন্যের সৃষ্টি হবে।
তিনি আরো জানান, ১৩ জুলাই ৫৬ জনে শনাক্ত হয় ১৮ জন, ১৪ তারিখে ২২ জনে ৬জন এবং ১৫ জুলাই ৪৮ জনে ১৮ জন পজেটিভ শনাক্ত হয়। এ পর্যন্ত হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি আছেন ১১ জন এবং এ পর্যন্ত মারা গেছেন পাঁচ জন। যে পাঁচ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে রাজাপুর এবং কাঠালিয়া উপজেলার ২ জন রয়েছেন। দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রথম দিকে সংক্রমণের হার বিবেচনা করলে গত তিন দিনে করোনা টেস্টে পজেটিভের হার অনেকাংশে কম মনে হয় যা এ উপজেলার জন্য ইতিবাচক।
এদিকে অনুসন্ধানে জানাযায়, গেল বছরের মার্চ মাস থেকে বৈশ্বিক উচ্চ পর্যায়ের করোনার প্রথম ঢেউ ধীরে ধীরে যখন মহামারি আকার ধারণ করেছে তখন সারা দেশের ন্যায় পিরোজপুরের ভা-ারিয়া উপজেলায় কেন্দ্রীয় সরকার, স্থানীয় সরকার এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলাবাসীকে সুরক্ষায় থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে অব্যাহত ভাবে জনসচেতনতা মূলক প্রচার প্রচারণা চালানো ছাড়াও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় ছিল অপ্রতুল।
তবে এ উপজেলায় চাপ বাড়ার কারণ হলো এখানে জিনএক্সপার্ট মেশিনে বিনামূল্যে মাত্র ৩০ মিনিটে রেজাল্ট পাওয়া যায়। তাছাড়া যোগাযোগ বাবস্থা ভালো হওয়ায় এবং সহজে কম খরচে সেবা নেয়ার জন্য এ উপজেলা ছাড়াও পাশর্^বর্তী বিভিন্ন উপজেলার মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন এই হাসপাতালে। প্রথম ঢেউ মোকাবেলায় প্রথম বারে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এ উপজেলায় অক্সফোর্ডের ৪ হাজার ৭৯০ ডোজ ভ্যাকসিন আসে। যা ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রথম ডোজ এবং সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ২৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার কথা থাকলেও তখন সরকারি বে-সরকারি ব্যাপক প্রচারণা থাকলেও মানুষের মাঝে ভ্যাকসিন নেয়ার প্রবণতা খুবই কম ছিল। তার পরেও সরকারি, বেসরকারি নানা প্রচারণা, লকডাউন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ফলে প্রথম বারের প্রথম ডোজ ৪ হাজার ৭৯০ জনকে দেয়ার পরে দ্বিতীয় ডোজে প্রায় ১ হাজার প্রথমডোজ গ্রহণকারী বাদ পড়েন। তবে আশারবাণী হলো খুব শীঘ্রাই প্রথম ডোজে বাদ পড়াদের জন্য ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।
আর দ্বিতীয় বারে যে ভ্যাকসিন এসেছে তা হলো চায়না সিনেফার্মা কোম্পানীর, তাই প্রথম ধাপের টিকা গ্রহণকারীদের দেয়া যাবেনা। কারণ দুটি দুই কোম্পানীর। অন্যদিকে বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বাহির নিষিদ্ধ থাকলে চলতি মাসের প্রথম দিকে ১২৮, পিরোজপুর-২আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি তার নির্বাচনী এলাকার তৃণমূল গ্রামীণজনপদের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও ভা-ারিয়া- কাউখালী -ইন্দুরকানী স্বাস্থ্যবিভাগ ও স্ব স্ব স্থানীয় সরকার এবং জনপ্রতিনিধিদের সাথে স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি সভা করেন। সেখানে ভা-ারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ননী গোপাল রায় ২০২০সালের ইপিআই সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী একটি
পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ১লাখ,৭৮হাজার,৮৭৮জন। কোভিড-১৯ভ্যাকসিন গ্রহণকারী সরকারি বর্তমান নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৫ ঊর্ধ্বও যদি হয় তাহলে গড়ে আনুমানিক ৫০% হারে হলেও মোট চাহিদার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৮৬ হাজারের মত। যদিও বেসরকারি হিসেবে এ হার কম বেশি হতে পারে। তাতেও এ উপজেলায় প্রথাম বারে ৪হাজার ৯৭০ডোজ এবং দ্বিতীয় বাড়ে ১২শ৫০ডোজ মিলে মোট এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ৬হাজার ৪ ডোজ। সে হিসেব বিবেচনা করলে ভ্যাকসিনের বহু সংকট রয়েছে।
অন্যদিকে ভা-ারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক সীমা রানী ধর আলাপকালে জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধারেখে স্থানীয় অবস্থা বিবেচনা করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপির নির্দশে স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনসচেতনতা মূলক প্রচারণা,পথাচারীদের মাঝে মাস্ক বিতরণ, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কাজও করছি। সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ পালনের সময়কালে সেনা সদস্য, র্যাব, পুলিশ, আনছার আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছে।
ভা-ারিয়া থানার ওসি মো. মাসুমুর রহমান বিশ্বাস জানান, থানাপুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার মূল প্রবেশদ্বারে পুলিশি চেকপোস্ট রয়েছে।
এমবি
