ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news

নারিকেল গাছের পাতার ছাউনি, বাঁশ খুঁটির ঘর

নারিকেল গাছের পাতার ছাউনি, বাঁশ খুঁটির ঘর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা পূর্ববানিয়ারী গ্রামের এক অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ফজলুর রহমানে কথা।

১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বাঙ্গালী দামাল ছেলেরা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জীবন উৎর্সগ করেছিল, সেদিনের মুক্তিকামী মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য ছিল শোষণ, বঞ্চনা, ন্যায় বিচার, মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আর লক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পরা এক অকুতোভয় সৈনিক ফজলুর রহমান। যুদ্ধ জয় হয়েছে, এসেছে স্বাধীনতা। বাংলাদেশ পেয়েছে এক সার্বভৌম রাষ্ট্র। কিন্তু জীবনবাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরা ফজলুর রহমানের জীবদ্দশা কেটেছে অসচ্ছলভাবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার ভাগ্যে জুটেনি একটি ভাল বসতঘর। নারিকেল গাছের পাতার ছাউনি আর বাঁশ খুঁটির ঘরেই হয়েছে তার মৃত্যু। বর্তমানে ঘরটি জরাজীর্ন অবস্থায় পড়ে আছে। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তার  ছেলেও ঘরটি মেরামত করতে পারেন নি। জীবিকার তাগিদে ছেলে শফিকুল ইসলাম তার মাকে নিয়ে চট্টগ্রামে থাকছেন। সেখানে প্রাইভেট-টিউশনী করে জীবন-জীবিকা চালাচ্ছেন। অথচ সরকার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দ্বিতল ঘর তৈরী করে দিচ্ছে। তবে সেই ঘর পাওয়ার তালিকায় নাম নেই ফজলুর রহমানের।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, নাজিরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিতল বিশিষ্ট সরকারী বাড়ি বরাদ্দের তালিকা থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের পরিবারের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করা অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের পরিবার ঘরের জন্য লিখিত আবেদন করেও বাদ পড়লেন তালিকা থেকে। বর্তমানে অসহায় ও অস্বচ্ছল গৃহহীন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের পরিবারকে থাকতে হচ্ছে নারিকেল গাছের পাতার ছাউনি আর পলিথিন দেয়া বাঁশখুঁটির ঘরে।

ফজলুর রহমানের ছেলে শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর বিতরণ তালিকা প্রনয়ণে কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্বেও আমার বাবার নামটি তালিকায় স্থান পেয়েও কি কারণে নামটি আবার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে তা জানি না।

জানা গেছে, নাজিরপুরে স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে রয়েছে সীমহীন বৈষম্যতা। মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান দেশ মাতৃকার টানে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে ঝাপিয়ে পড়েছিল দেশ স্বাধীন করার জন্য। আর বর্তমানে তার পরিবারের সদস্যরা সরকারের দেয়া একখানা ঘর পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করে চলছে বৈষম্যবাদী মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে।

দারিদ্রসীমার নিচে থাকা ফজলুর রহমানের মৃত্যুর পরে রেখে গেছেন এক ছেলে মো. শফিকুল ইসলাম (ডাবলু), তিন মেয়ে শানু, শাবানা, সেলিনা। যদিও মেয়েরা বিবাহিত। তবে মুক্তিযদ্ধার চার সন্তান সরকারী এতখানা ঘর পাওয়ার যুদ্ধে ধর্না দিচ্ছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে। কিন্তু বৈষম্যতার কারণে তালিকায় স্থান পাচ্ছে না। সকলের চোখের সামনেই নারিকেল গাছের পাতার ছাউনি এবং বাঁশ খুঁটির ঘরে থাকছে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের সন্তানেরা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন কন্যা সন্তান রেখে গত ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। সে সময়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাযা ও দাফন দিতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের ঘর দেখে নাজিরপুরের তৎকালিন নিবার্হী অফিসার এবং নাজিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আ. লতিফ সরকারী ঘর দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে নাজিরপুর উপজেলা সমাজকল্যাণ অফিসার মো, মাহাবুব হোসেন বলেন, আমি সব মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ী গিয়ে তদন্ত করে তালিকা করেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসক মহোদয়কে ব্যক্তিগতভাবে বলেছি নাজিরপুরে মুক্তিযোদ্ধারা ঘর পেলে ফজলুর রহমানের পরিবার সর্বাগ্রে ঘর পায়। তবে তালিকা থেকে তার নাম কিভাবে বাদ পড়লো আমার জানা নেই।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আ. লতিফ বলেন, নাজিরপুর উপজেলায় ৪৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। একবারে সবাইকে ঘর দেয়া সম্ভব নয়, মাত্র ৬ ভাগ মুক্তিযোদ্ধাকে ঘর দেয়া সম্ভব হয়েছে। তবে আমি বেঁচে থাকলে আগামী তালিকায় ফজলুর রহমানের পরিবার ঘর পাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের পরিবার জেলা প্রশাসক বরাবর আপীল করেছিল। আপীল শুনানীতে জেলা কমিটি ফজলুর রহমানকে বাদ দিয়েছে। তবে পর্যায়ক্রমে এরা ঘর পাবে।

এ বিষয়ে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর রবাদ্ধের তালিকা করার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি রয়েছে। তারাই যাচাই বাছাই করে তালিকা তৈরী করেন। তবে সরকার পর্যায়ক্রমে সকল অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে ঘর তৈরী করে দিবে। কোন মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের পরিবার ঘরবিহীন থাকবে না।


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন