ধোঁয়ায় শুরু, মাদকে নাশ


শিশু বয়স, কিন্তু তাতে কী? কেউ বিড়ি, কেউ সিগারেট,কেউ বা আবার তামাক সেবন করছে। কেউ নেশা করছে শখের বসে, কেউ বা আবার অজ্ঞতায় জড়িয়ে পড়ছে। আমতলী বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী কিংবা পথশিশুরা এসব নেশার টানে বিভোর। তামাকের এ নেশা দিয়ে শুরু করে শিশুরা ক্রমেই জড়িয়ে পড়ছে অন্যান্য মাদক সেবনে।
যত্রতত্র শিশুরা লোকজনের আড়াল হয়ে সিগারেট কিংবা বিড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে নেশা করছে। নাম রিয়াজ (ছদ্দনাম) বাড়ি খেকুয়ানী। একটি খাবার হোটেলে এসে এক শলাকা সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে নিল। প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট বসে থেকে আরেকটি সিগারেট জ্বালায় সে। কত বছর থেকে সিগারেট সেবনের অভ্যাস জিজ্ঞেস করলে রিয়াজ বলে, 'আরো এক থেকে ২ বছর আগে থেকে সিগারেট খাই।এখন বয়স কত? উত্তরে জানায়, '১৩-১৪ অইবে।'কেন সিগারেট খাও- এমন প্রশ্নের জবাবে সে বলে, 'ব্যবসা করি তো, সিকারেট (সিগারেট) খাওয়া লাগে।অ ভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শিশুরা এভাবে জড়িয়ে পড়ছে তামাকের নেশায়।
আমতলী স্কুলগামী শিশুরা ও কিশোর শিক্ষার্থীরা কখনো ক্লাস ফাঁকি দিয়ে লোকজনের আড়াল হয়ে তামাকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি শহরের জনৈক এক অভিভাবক নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, 'আমার স্কুল পড়ুয়া ছেলে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে প্রথমে সিগারেটের নেশায় জড়িয়ে পড়ে।এঅভিভাবক আরো বলেন, স্কুল কিংবা কলেজ পড়ুয়া প্রত্যেক ছেলেমেয়েকে সব বাবা-মায়ের উচিত কঠোর নজরদারিতে রাখা।
এ ছাড়া শিশুদের কাছে সিগারেট কিংবা বিড়ি বিক্রি করা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও সে আইন মানে না দোকানিরা। এ কারণে ছোটরা খুব সহজে তামাকজাতীয় নেশা সংগ্রহ করতে পারে। দোকানি, অভিভাবক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবাই যে যার অবস্থানে থেকে নৈতিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে ছোট ছেলেমেয়েদের নেশায় জড়িয়ে পড়ার সুযোগগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।'
এদিকে শহরের শ্রমজীবী অভিভাবকের বেশির ভাগ সন্তান ১০ থেকে ১২ বছর বয়সে সিগারেট কিংবা বিড়ি সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। অভিভাবকদের আয়-রোজগারের ব্যস্ততার কারণে সন্তানদের সারা দিনে খোঁজ নেওয়ার সময় হয়ে ওঠে না।একারণে ওই সব শিশু খুব দ্রæত তামাকের নেশায় জড়িয়ে পড়ে। শিশুদের অল্প বয়সে ধূমপানে জড়িয়ে পড়া সম্পর্কে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসক ডা: মেনায়েম সাদ মুঠোফোনে বলেন, 'শিশু বয়স থেকে ধূমপান খুবই ভয়াবহ।
এতে প্রথমে বাধাগ্রস্থ হয় শিশুর মানসিক ও দৈহিক বিকাশ। এ ছাড়া অল্প বয়সে ব্রঙ্কাইটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, যক্সা, গ্যাস্ট্রিক আলসার, বার্জারসহ সিওপিডি রোগ হতে পারে। এ জন্য জনসচেতনতা, অভিভাবকদের বেশি দায়িত্বশীল হওয়া, তামাকজাত পণ্য বিক্রেতাদের নৈতিকভাবে সচেতন হওয়া ছাড়া শিশুদের এ পথ থেকে ফেরানোর বিকল্প নেই।'
আমতলী অফিসার ইনচার্জ মো.শাহ আলম হাওলাদার বলেন,'আইন দিয়ে সব অপরাধ দমন করা যায় না। শিশুর ধূমপান বন্ধের জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা। কারণ দোকানিরা লাভের আশায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করে।এজন্য অভিভাবকসহ ওই ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সচেতনতার বিকল্প নেই।'
এইচকেআর
