তিন বোনের এক স্বামী, শ্যালিকাকেও ছাড়েননি মাদ্রাসা অধ্যক্ষ


একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী; এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে তিন বোনের এক স্বামী- বিষয়টি যেনো বিস্ময়কর। আর বিস্ময়কর এমন ঘটনার নজির মিলেছে বরিশালে।
একে একে একই পরিবারের তিন বোনকেই বিয়ে করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষক আবু হানিফ। শুধু তাই নয়, তাদের আরও এক বোনকে নষ্ট করার অভিযোগও রয়েছে ৬০ বছর বয়সী এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
তবে এক বোনকেও শেষ পর্যন্ত স্ত্রী হিসেবে কাছে রাখেননি তিনি। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যু এবং অপর দুই স্ত্রীকে তালাক দিয়ে এখন অন্য নারীর পেছনে ছুটছেন বিয়ে পাগল শিক্ষক আবু হানিফ। তাই স্ত্রীর মর্যাদা ফিরে পেতে মামলা করেছেন ২৫ বছর বয়সী তৃতীয় স্ত্রী। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। অভিযুক্ত শিক্ষক আবু হানিফ বরিশাল সদর উপজেলার টুংগিবাড়িয়া ইউনিয়নের সাহেবেরহাট ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা।
পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ বোন এবং তৃতীয় স্ত্রী জাকিয়া বেগম জানিয়েছেন, তাদের গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলায়। ভান্ডারিয়া উপজেলায় চাকরি করা অবস্থায় পারিবারিকভাবেই জাকিয়ার বড় বোনকে বিয়ে করেন মাওলানা আবু হানিফ। বড় বোনের ছেলের বর্তমান বয়স ৩০ বছর। বিয়ের কয়েক বছর পর বড় বোনের মৃত্যু হয়। এর চার মাস না যেতেই বোনকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু সেই সংসারও টেকেনি বেশিদিন।
মেঝ বোনকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন স্বামী আবু হানিফ। একপর্যায় বিয়ের প্রায় ১২ বছর পর বিচ্ছেদ ঘটে তাদের। এরপর আবু হানিফের দৃষ্টি যায় পরিবারের সর্বকনিষ্ট মেয়ে জাকিয়ার দিকে। বিয়ে পাগল আবু হানিফের কু-দৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে জাকিয়াকে কিশোরী বয়সেই অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দেয় তার পরিবার। কিন্তু বেশিদিন সেই স্বামীর ঘর করতে পারেনি জাকিয়া। সেই স্বামীকে তালাক দিয়ে আবু হানিফকে বিয়ে করতে বাধ্য হন তিনি।
কিন্তু শেষমেষ জাকিয়ার সাথেও সংসার করতে রাজি নন মাদ্রাসা শিক্ষক আবু হানিফ। তাকে তালাক দিয়ে তিনি এখন পরোনারীতে আসক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ ২৫ বছর বয়সী জাকিয়ার। ফলে এক ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে দারুন কষ্টে দিন কাটছে এই নারীর।
জাকিয়া অভিযোগ করেন, তার বড় বোনের মৃত্যুও স্বাভাবিক ছিল না। তাকে কৌশলে হত্যা করেছে আবু হানিফ। শুধু তাই নয়, আমাদের পরিবারের তৃতীয় নম্বর বোনের জীবনও নষ্ট করেছে সে। যা তিনি নিজের মুখেই শিকার করেছেন। এখন লোকমুখে শুনছি আমাকেও সে তালাক দিয়েছে। তাই স্ত্রীর মর্যাদা ফিরে পেতে বরগুনা আদালতে মামলা করেছি। সে আমাকে তালাক দিলেও আমি তা মানি না।
তিনি বলেন, আমি ছোট ছোট দুটি ছেলে-মেয়ে নিয়ে মাদ্রাসার দুইশ গজের মধ্যেই স্বামী আবু হানিফের বাড়িতে বসবাস করছি। কিন্তু আবু হানিফ আমার এবং আমাদের দুই সন্তানের খোঁজ নেয় না। ভরণপোষণও দেননা। উল্টো অন্য নারীকে নিয়ে লঞ্চে এক কেবিনে ঢাকা গিয়েছে আবু হানিফ। তখন আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন সেই নারীকে তিনি বিয়ে করবেন।
তবে তিন বোনকে বিয়ের কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আবু হানিফ। বরং দম্ভ করে বলেন, তিনটা নয়, প্রয়োজনে আরও একশটা বিয়ো করবো। কেউ যেন আমায় কিছু করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু স্ত্রীদের সাথেই প্রতারণা নয়, বরং নিজ কর্মস্থল সাহেবেরহাট ফাজিল মাদ্রাসায় অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ আবু হানিফের বিরুদ্ধে। নিয়োগ বাণিজ্য, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত, নিয়ম বহির্ভুতভাবে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গঠন এবং ব্যাপক জাল জালিয়াতির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
এমনকি মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল কালামের ছেলে নাঈম আবদুল্লাহকে অফিস সহায়ক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি দিয়েছেন অধ্যক্ষ আবু হানিফ। তার এই অনিয়ম এবং দুর্নীতির সহযোগিতা করেন কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও সদস্য আবুল কালামসহ কয়েকজন শিক্ষক। এ কারণেই যোগ্য লোকদের বাদ দিয়ে নতুন করে পকেট কমিটি গঠন করেছেন অধ্যক্ষ। এসব বিষয় সম্প্রতি বরিশাল জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন সাহেবেরহাট ফাজির মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কামরুজ্জামান খান।
এ নিয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আবু হানিফ। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ যেখানে দেয়া হয়েছে সেখানেই আমার বক্তব্য দিবো। আগেও অনেক বড় বড় সাংবাদিক এসেছিল তারা কিছুই করতে পারেনাই। আপনারা যা পারেন করেন। এসময় সংবাদ প্রকাশ করলে মামলার হুমকিও দেন আবু হানিফ।
যদিও ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল কালামের ছেলে নাঈম আবদুল্লাহ। তিনি দাবি করেছেন, বাবার ক্ষমতায় নয়, যোগ্যতা অনুযায়ী পরীক্ষা দিয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি পেয়েছেন তিনি।
