চরফ্যাশনে স্যালাইন সংকট, বেশি দামে বিক্রি ফার্মেসিতে


আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সারা দেশে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তের রোগীর সংখ্যা। ব্যতিক্রম নয় ভোলার চরফ্যাশনেও।
প্রতিনিয়ত শিশু, কিশোর, প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধরাও আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন উপজেলা ১০০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আক্রান্তের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। এদিকে হাসপাতালে স্যালাইন সংকটের কারণে হাসপাতালের বাহির থেকে খাবার স্যালাইন এবং কলেরা স্যালাইন কিনে আনতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও তার স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ১৪ দিনে শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধসহ ১৬৩ জন রোগী ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। এদের মধ্যে ১৫৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ভর্তি হয়ে ৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, আক্রান্ত হয়ে ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার চরমানিকা ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অহিদ পাতলা পায়খানা হওয়ায় তার ৪ বছর বয়সের বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
তিনি জানান, স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়েছিলাম, তবে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। এখনো তাকে দেখতে আসেনি কোনো চিকিৎসক।
উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফারজানা বেগম বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তার ১ বছর বয়সি শিশু বাচ্চাকে বুধবার সকালে ভর্তি করি। এরপর নার্সদের পরামর্শে হাসপাতালের বাহির থেকে স্যালাইন সেট, ক্যানোলা ও কলেরা স্যালাইন এবং খাবার কিনে আনতে হয়েছে। হাসপাতাল থেকে কিছুই দেওয়া হয়নি। সরকারি হাসপাতাল হলেও সরকারি কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, তীব্র গরমে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে রোগীদের প্রয়োজনে হাসপাতালে চিকিৎসক তো দূরের কথা, কোনো নার্সকেও তারা ডেকে পান না।
হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধও সরবরাহ করা হয় না। নার্সরা স্লিপ ধরিয়ে দেন, তা দেখে বাইরে থেকে ওষুধ, স্যালাইন, ক্যানুলাসহ যাবতীয় সামগ্রী কিনে আনতে হচ্ছে। নামেই শুধু সরকারি হাসপাতাল। সবই কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। হাসপাতালে খাবার স্যালাইন থাকা সত্ত্বেও রোগীদের স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে না।
হাসপাতালের নার্স ইনচার্জ অপরাজিতা জানান, রোগীরা নার্সদের ডাকলে নার্সরা আসে না এ কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। রোগীদের সেবায় ১৭ জন নার্স সর্বদা নিয়োজিত রয়েছেন।
ডায়রিয়া রোগীদের খাবার স্যালাইন ও কলেরা স্যালাইন হাসপাতালে নাই বলে বাহির থেকে আনার জন্য স্লিপ ধরিয়ে দেন। এ বিষয় প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, গত ১৪ দিনে চরফ্যাশন হাসপাতালে ১৬৩ জন ডায়রিয়ায় (কলেরা) আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন।
বর্তমানে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে স্যালাইন সেট, বাচ্চাদের ক্যানোলা, কলেরা স্যালাইন, এন্টিবায়োটিক, মাইক্র বুলেট, জিং সিরাপ না থাকায় ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দানে কিছুটা বিঘ্ন হচ্ছে। তাই রোগীদের বাহির থেকে আনতে বলা হয়। যার ফলে রোগীরা এই অভিযোগগুলো তুলছেন।
এদিকে ডায়রিয়া রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় হঠাৎ করেই স্যালাইন নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড চলছে বাজারের ফার্মেসিগুলোতে। বাজারের একাধিক ফার্মেসিতে উধাও হয়ে গেছে খাবার স্যালাইনসহ শরীরে প্রয়োগকৃত স্যালাইন। আবার কোথাও কোথাও সংকট তৈরি করে ৯১ টাকার এক হাজার এমএলের স্যালাইন ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছে।
উপজেলার হাটবাজার ঘুরে জানা গেছে, সপ্তাহখানেক আগেও বিভিন্ন কোম্পারির প্রতি লিটার স্যালাইন বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়; যা বর্তমানে রোগীদের কাছ থেকে সংকট দেখিয়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন কুমারকে না পাওয়ায় আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাকলুকুর রহমান বলেন, জনবল সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সীমিতসংখ্যক কলেরা স্যালাইন সরবরাহ পাওয়ায় কোনোরকমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে রোগীদের বাহির থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে জেলা সিভিল সার্জন বরাবর ডায়রিয়া রোগীদের স্যালাইনসহ বিভিন্ন ওষুধের চাহিদা পাঠানো হয়েছে, আশা করি দ্রুতই এর সমাধান হবে।
এইচকেআর
