বরিশালে বাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন বাতিলের দাবীতে মামলা, সংঘর্ষের আশঙ্কা


বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন আগামীকাল মঙ্গলবার। নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রূপাতলী বাসর্টামিনাল। ভোটের দিন সংঘর্ষের আশঙ্কা করেছে সাধারণ শ্রমিকরা।
তারা জানান, আমাদের ভিতরে অধিকাংশ সাধারণ শ্রমিক প্রার্থী হয়ে নিবার্চনে অংশ নিয়েছেন। তারা বিজয়ী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। কিন্তু একটি পক্ষ তাদের সকল প্রার্থীদের বিজয়ী করার পায়তারা চালাচ্ছে। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
যার প্রতিফলন নির্বাচনের দিন ঘটতে পারে বলেন তারা। তবে নির্বাচন কেন্দ্র করে অপ্রতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে কঠোরভাবে তা প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছেন কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান।
এদিকে নির্বাচন বাতিল ও বৈধ সদস্যদের ভোটার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত চেয়ে বরিশাল শ্রম আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। গত ১৯ ফ্রেব্রুয়ারি ৫ জনকে বিবাদী করে এ মামলা দায়ের করেছেন রাজ্জাক মৃধা নামে এক শ্রমিক।
বিবাদীরা হলেন, ঢাকা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-মহাপরিচালক, খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক সেলিম সরদার ও সদস্য সচিব কালাম চৌধুরী।
শুনানী শেষে আদালতের বিচারক মো. আল-মামুন বিবাদীর বিরুদ্ধে কারন দর্শানো নোটিশ জারি করেছেন বলে নিশ্চিত করেন বেঞ্চ সহকারী মাহমুদুল আলম মাসুদ। তিনি বলেন, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে বিবাদীদের উপস্থিত হয়ে ব্যাখা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রে ৩ বছর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু তা না করে একটি পক্ষ নিজেদের লোক দিয়ে কৃত্রিম কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করে সাধারণ শ্রমিকদের ভিতরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছেন। এতে বাধা দিলে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের সদস্যপদ ও কার্ড বাতিল করা হচ্ছে।
বিষয়টি অন্যান্য বিবাদীসহ স্থানীয় প্রশাসন জানলেও তারা কার্য্যকরী কোন পদক্ষে নেয়নি। এতে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি অবনিতীর দিকে যাচ্ছে। এমতাঅবস্থায় পূর্বের কমিটির মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও গত ৫ ফেব্রুয়ারি সেলিম সরদারকে আহবায়ক ও কালাম চৌধুরীতে সদস্য সচিব এবং আনোয়ার হোসনকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত করা হয়।
তবে বাতিল হওয়া সদস্যপদ বহাল রাখা ও কার্ড ফিরিয়ে দেয়াসহ সকলের উপস্থিতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করা হলেও তা না মেনে তফসিল ঘোষণাসহ ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি (আজ) নির্বাচনের দিন ধার্য় রাখা হয়।
এই নির্বাচনে অংশগ্রহনের জন্য বাদী মনোনয়ন সংগ্রহ করতে গেলে তাকে হত্যার হুমকি দেয় এবং তাকে শ্রমিকের সদস্যপদ থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। এ ঘটনায় আদালতে তিনি মামলাটি দায়ের করেন।
জানা যায়, সভাপতি ও নির্বাহী সভাপতি পদ ছাড়া ১১টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জন, সহ-সভাপতি ৪ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক ৪ জন, লাইন সম্পাদক পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করচ্ছেন। এছাড়া অন্যান্য পদে নির্বাচন অংশ নিয়েছেন একাধীক প্রার্থী। সাধারণ সম্পাদক পদে
নির্বাচনে অংশ নেয়া জেষ্ঠ্য শ্রমিক বাবুল মল্লিক বলেন, জীবনের শেষ সময়ে সাধারণ শ্রমিকদের পাশে থাকার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ইতিমধ্যে শ্রমিকদের সাড়াও পেয়েছি। কিন্তু আমাকে পরাজিত করার জন্য বিভিন্নভাবে পায়তারা চালানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি হলে সাধারণ শ্রমিকরাই তা প্রতিহত করবেন।
সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রিয়াজ মোল্লা জানান, নির্বাচন সুষ্ঠ হলে আমি বিজয়ী হব। তবে কারচুপি হলে তা মেনে নেয়া হবে না।
এ বিষয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, শ্রম দপ্তরের নির্দেশনায় নিবার্চন পরিচালনা করা হচ্ছে। মামলার বিসয়টি আদালতে জবাব দেয়া হবে।
তবে খুলনা বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পরিচালক মনিরুল আলম বলেন, মামলার বিয়টি আমি জানি না। নির্বাচনের জন্য অনুমতি নেয়া হয়েছে কিনা তা কাগজ না দেখে বলতে পারবো না। অনুমতি ব্যতিত নির্বাচন করা হলে পরবতী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, বরিশাল জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নে গত বছরের ২৫ আগস্ট নাসির উদ্দিন সভাপতি ও আবেদ মোল্লাকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭ বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
এইচকেআর
