ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

আমতলীতে পলিথিনের কারণে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ 

আমতলীতে পলিথিনের কারণে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরগুনার আমতলীতে পলিথিনের ভয়ঙ্কর দূষণে জনস্বাস্থ্য ও প্রকৃতি-পরিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আইনি দুর্বলতার সুযোগে পরিবেশ বিপর্যয়ের এই পলিথিন আমতলীতে এখন সহজলভ্য। 

মাটির নিচে যে পলিথিন ৫০ বছরেও পঁচে না, আরতারই দাপট বাড়ছে জলাশয় আর স্থলভাগে। অপচনশীল পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহারের ফলে ভরাট হচ্ছে নদী-নালা,খাল-বিল। দূষিত হচ্ছে পানি। বিষ ছড়াচ্ছে বাতাসে। শুধু তাই নয় পলিথিন বর্জ্যের কারণে উর্বরত হারাচ্ছে মাটি। 

আমতলী শহরের স্থানীয় ব্যবসায়ী ওসমান আলী বলেন, আমাদের শহরে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে পলিথিন, যে কারণে নদী-নালা খাল-বিল, রাস্তাঘাটে অতিরিক্ত পলিথিনের আবর্জনা।  নিষিদ্ধ হওয়ার পরও প্রশাসনের চোখের সামনেই প্রকাশ্যে চলছে নিষিদ্ধ পলিথিনের রমরমা ব্যবসা। 

সরেজমিনে উপজেলার বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার বেড়েছে। ক্ষুদ্র একটি জিনিস থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্যই এখন পলিথিনের ব্যাগে করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন দোকানিরা। আর এটা দেখার যেন কেউ নেই।

পলিথিন ব্যবহারে আইনি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সব প্রয়োজনে পলিথিন ব্যবহার করছেন কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে আমতলীর সবজি বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, আমরা বিকল্প কোনো ব্যাগ না পাওয়াতে এই পলিথিনের ব্যাগ ক্রেতাকে দিতে হয়। আমরা পলিথিনের বিকল্প কিছু পেলে এটা আর ব্যবহার করব না।

শহরের সুশীল সমাজ মনে করেন, পলিথিন বন্ধে কঠোরভাবে আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। আইন শুধু কাগজে-কলমে থাকলেই হবে না। অবৈধ এই পলিথিন বিরোধী ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

আমতলীর আইনজীবি রেজাউল করিম বলেন, পরিবেশকে দূষণের কারণে পলিথিনকে সরকার নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু ইদানিং আমরা পলিথিন বন্ধের ব্যাপারে সরকার বা আইনপ্রযোগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে দেখছি না। 
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা একান্তভাবে জরুরি। একজন আইনজীবী হিসেবে মনে করি যেকোনো আইন হলে এই আইনকে প্রয়োগ করতে হবে। আইন শুধু কাগজে-কলমে থাকলে হয় না।

তিনি আরও বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধের আইন করা হয়েছে। তার শাস্তিও আছে, কিন্তু মোবাইল কোর্ট পরিচালনা না করে যদি আইন বাস্তবায়ন করা না হয় তাহলে দেখা যাবে আমাদের দেশের পলি মাটির উর্বরতা  শক্তি দিন দিন কমে যাবে এবং ফসল উৎপাদন কম হবে। এতে দেশ উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছাতে এই পলিথিন বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

হলদিয়ার কৃষক আলম মিয়া  বলেন, পলিথিন আমাদের বহু ক্ষতি করে। এই পলিথিন জমিনের নিচে পড়লে ধানের গুছাটা লাল হইয়া যায়।  উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাড়ীতে করে প্রকাশ্য বিক্রি করা হচ্ছে এ নিষিদ্ধ পলিথিন। 

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুনয়েম সাদ বলেন,  পলিথিনে বর্জ্য যত্রতত্র ফেলাচ্ছি, এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। প্রথমত নর্দমাগুলোতে পলিথিন আটকে থাকে। এতে পানি জমে থাকে। 

আর পানি জমে থাকায় এডিস মশা বংশ বৃদ্ধি পায়। আর এই পানিকে ধরে রাখছে পলিথিন। তিনি আরো বলেন, কিছু মানুষকে দেখা যায় বর্জ্য পদার্থ আগুনে পোড়াচ্ছে। পলিথিন পোড়ালে এর প্রভাব পরে মানবদেহ। এমনকি মানব শরীরে বাসা বাঁধতে পারে প্রাণঘাতী ক্যান্সারসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগ। 

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রাফুল আলম বলেন, পলিথিনের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুটি প্রচলিত আইন আছে। এই দুটি আইনের আওতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়েও করা হয়ে থাকে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন