টমেটোর কেজি ২ টাকা

উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে বাজারে নেওয়ার খরচই উঠছে না কৃষকের। ফলে টমেটো তুলছেন না তারা। কেউ কেউ কাঁচা ও আধাপাকা বড় বড় টমেটো তুললেও ছোট ও পাকাগুলো তুলছেন না। ফলে অধিকাংশ টমেটো ক্ষেতেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বুধবার (০৭ এপ্রিল) সরেজমিনে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার লোহারপুল, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ধীপুর, আউটশাহী, কাইচচাইল, রাউৎভোগ ও মারিয়ালয় এলাকায় ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়।
এসব এলাকার অধিকাংশ ক্ষেতে রয়েছে টমেটো। কোনো কোনো ক্ষেতের পাকা টমেটো মাটিতে পড়ে আছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। টমেটোসহ গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। পাকা টমেটোগুলো পাখি খাচ্ছে। নানা প্রজাতির পাখির ডাকে মুখর টমেটো ক্ষেত।
রাউৎভোগ গ্রামের ক্ষেতগুলো থেকে টমেটো এনে পাশের কাঠবাগানে জড়ো করেছে পাখিরা। কাঠবাগানের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে টমেটো। হতদরিদ্ররাও নিচ্ছেন না এসব টমেটো।
পাশাপাশি আউটশাহী এলাকার অনেক ক্ষেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে টমেটো। দেখে মনে হয় টমেটোর প্রতি কারও আগ্রহ নেই।
উপজেলার ধীপুর গ্রামের চাষি মো. পলাশ বলেন, এ বছর ১২ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছি। লাভ তো দূরের কথা জমি থেকে টমেটো তুলে আড়তে বিক্রি করে যাতায়াত খরচও উঠছে না। একদম ভালো টমেটোর কেজি ২ টাকা। পাকা ও ছোট টমেটো আড়তদাররা কেনেন না। টমেটো কেনার লোক নেই। কয়েকদিন আগে বেছে বেছে বড় ও ভালো টমেটোগুলো তুলে ২ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। বাকিগুলো ক্ষেত থেকে তুলিনি। ক্ষেতেই পচে যাচ্ছে।
একই গ্রামের জহিরুল ইসলাম বলেন, হাইব্রিড জাতের টমেটোর চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। শ্রমিক দিয়ে তুললে ৪০০ টাকা দিতে হয়। অথচ বাজারে নিয়ে দুই-তিন টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করতে হয়। এজন্য তুলছি না। ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। আমাদের পুঁজি শেষ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, এ বছর মুন্সিগঞ্জে ৩১৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় আবাদও হয়েছে বেশি। সদর উপজেলায় ৬৫ হেক্টর, টঙ্গিবাড়ীতে ৩৫ হেক্টর, শ্রীনগরে ৪০ হেক্টর, সিরাজদিখানে ৭৩ হেক্টর, লৌহজংয়ে ২০ হেক্টর ও গজারিয়ায় ৮২ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় টমেটোর উৎপাদন বেশি হয়েছে। তবে চাহিদা কম থাকায় টমেটোর দাম কমে গেছে। চাষিরা টমেটো ফেলে না দিয়ে বিকল্প উপায় অনুসরণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে কোনো চাষি পরামর্শ চাইলে সহযোগিতা করা হবে।
এমবি
