আমতলী মুক্ত দিবস ১৪ ডিসেম্বর


১৪ ডিসেম্বর আমতলী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১৪ডিসেম্বর বেলা ১১ টার দিকে জয়বাংলা ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত করেুষ উপস্থিত হলেন বরগুনার আমতলী থানায়। গ্রেপ্তার করা হলো পুলিশের তৎকালীন সিআই সিকান্দার আলী, ওসি রইস উদ্দিন ভূইয়া এবং তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গদের।
মুক্ত হলো আমতলী উপজেলা। পরবর্তী সময়ের জন্যে মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম পাশা তালুকদারকে অন্তবর্তীকালীন কমান্ডার নিযুক্ত করে ওসি রইস ভূইয়াকে নিয়ে যাওয়া হলো গলাচিপাতে। কারণ, যুদ্ধকালীন সময়ে গলাচিপায় তার অনেক কুর্কীতি ছিল। পরে সেখানে তাকে মেরে ফেলা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা বাকী আটকদের সাথে করে নিয়ে গিয়েছিলেন।
৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পর ১৫ মার্চ গঠন হয় স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে সংগ্রাম পরিষদ।
সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন নাসির উদ্দিন তালুকদার সংগ্রাম কমিটি গঠিত হওয়ার পর ২৩ মার্চ সারাদেশে মতো আমতলীতেও পাকিস্তাানের পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়। আর তৎকালীন ঢাকাস্থ ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ হেডকোয়ার্টারের অফিস ভবনে আমতলীর বীর সন্তান হাবিলদার শহীদ এম.এ. বারিক খান উড়িয়ে দিলেন বাংলাদেশের পতাকা।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা স্মৃতিচারণ করেন, সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্বে আমতলী বন্দরের (বর্তমান পৌর শহরেরর ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড) চারদিকে পরিখা খনন করে সুরক্ষিত করা হলো। আমতলীতে সর্বস্তরের সক্ষম পুরুষদের সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্যে এক সংক্ষিপ্ত সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলো। প্রশিক্ষণ পরিচালনায় ছিলেন আমতলী থানার পুলিশ সদস্য (বকসী) আ. বারেক এবং এমইউ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক বি. রহমান।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাক হানাদার বাহিনী আমতলী থানা দখল করলো। যুদ্ধকালীন পুরোটা সময়ে আমতলী বন্দর (শহর) ব্যাতীত পুরো গ্রামাঞ্চল ছিল মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। এ সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মেজর নাদের পারভেজের নেতৃত্বে বেশ কয়েকবার গান বোট নিয়ে আমতলী থানায় আসে।
তাদের নির্দেশে পরবর্তীতে থানার ওসি রইস উদ্দিন বন্দরের আসে পাশের এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের উপরে বেশ কয়েকবার হামলার চেষ্টা চালায় কিন্তু প্রত্যেকবারই ব্যর্থ হয়।
এলো ১৪ ডিসেম্বর। সিদ্ধান্ত নেয়া হোল আমতলী থানা দখলে নেবে মুক্তিবাহিনী। এবিএম আছমত আলী আকন এলেন নৌকাযোগে আমতলী বন্দরে। মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস এলেন দলবল নিয়ে। গলাচিপার সন্তান কমান্ডার রব এলেন তার দল নিয়ে। পুলিশ কর্মকর্তা রইস ভূইয়ার সাথে কথা হলো এবিএম আছমত আলী আকন সাহেবের সাথে চুক্তি হলো- থানার ফোর্স আত্মসমর্পণ করবে।
কমান্ডার রব তার বাহিনী নিয়ে অবস্থান নিলেন থানার পুর্ব পাশে আমতলী নদীর ওপাড়ে একে স্কুলের পুকুর পাড়ে। কথা ছিল মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করলে পুলিশ, রাজাকারসহ সবাই আত্মসমর্পণ করবে এবং তাদের সব অস্ত্রশস্ত্র নৌকাযোগে নদীর অপর পাড়ে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু তারা সিআই (সার্কেল ইনসপেক্টর) সিকান্দার আলীর নির্দেশে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিল।
এ সিদ্ধান্ত মুক্তিবাহিনীর অজানা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোররাতে মুক্তি বাহিনী আক্রমণ করলে রইস ভূইয়া তার সাঙ্গপাঙ্গসহ পাল্টা আক্রমণ চালাল। মুক্তিবাহিনী বুঝল রইস ভূইয়া কথার বরখেলাপ করেছে। গুলি বিনিময় চলল ভোর পর্যন্ত। একজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা হারুন-অর-রশিদ মতান্তরে ফেরদৌস হায়দার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থানার দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে একটা কলাগাছকে সম্বল করে চলে এলেন এপাড়ে। হাতে তরতাজা গ্রেনেড।
ওদিকে মুক্তিবাহিনী স্থানীয় জনতাকে একত্রিত করে জয়বাংলা ধ্বনিতে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুললো চারদিক থেকে। পরিস্থিতি ঘুরে গেল। পুলিশ ভাবলো মুক্তি বাহিনীর সংখ্যা কয়েক হাজার। ভয় পেয়ে গেল হানাদার বাহিনীর এদেশীয় দালালরা, আত্মসমর্পণ করলো তারা।
মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপস্থিত জনতা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আমতলী থানাকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করে।
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে স্মরণ করতে আমতলী উপজেলা পরিষদ চত্বরে ২০১২-১৩ সালে নির্মান হয়েছে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ। কৃষ্ণ বর্নের এ স্মৃতি স্তম্ভটির নির্মাণ কাজ ২০১৪ সালে সম্পন্ন হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে, বিজয় দিবসে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে পুস্পাস্তবক অর্পণসহ, র্য, আলোচনা অনুষ্ঠান, জাতীয় অনুষ্ঠানমালা সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ পালন করবে বলে জানিয়েছে।
এইচকেআর
