ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news
প্রকল্পে গতি নেই

কাজে আসছে না পাউবোর অর্ধকোটি টাকার জিও ব্যাগ

কাজে আসছে না পাউবোর অর্ধকোটি টাকার জিও ব্যাগ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরগুনার বেতাগী পৌরশহর বিষখালী নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে। এতে আতঙ্কিত ও ভাঙনরোধে প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাছেন বাসিন্দারা।
উপজেলার আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙন কবলিত। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে নদীর তীর ঘেঁষে দেওয়া হয়েছে ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগের বস্তা।

ভাঙনরোধে তা কাজে আসছে না। এ কারণে বেতাগী পৌর শহরের তিন শতাধিক ব্যবসায়ীসহ বিষখালী তীরবর্তী ভাঙনকবলিত পাঁচ হাজার পরিবারের আতঙ্কে দিন কাটছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে প্রথম পৌরশহরকে রক্ষায় বিষখালী নদীতে ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়।

এরপর ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় ভেঙে যাওয়া শহর রক্ষাবাঁধ ব্লক রক্ষার জন্য ২০১১ সালে পুনরায় উদ্যোগ নেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুধু ব্লক তৈরি করে বাঁশ, বালু ও বস্তার চট রেখে লাপাত্তা হয়ে যায়।

পরে ২০১৭ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুল মালেক বিষখালী নদীর ভাঙন থেকে পৌর শহরকে রক্ষা করতে একটি প্রকল্প অনুমোদন করে এর ভিত্তিপ্রস্তর  স্থাপন করেন।

এ প্রকল্পের দৃশ্যমান যেটুকু ছিলো তা ওই ভিত্তিপ্রস্তরের নামফলকমাত্র। সেই ভিত্তিপ্রস্তরটিও বর্তমানে ভাঙনের মুখে পড়ে নদীগর্ভে বিলীনের পথে।
জানা গেছে, গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ১১তম সভায় বরগুনা জেলাধীন পোল্ডার নম্বর ৪১/৭-এ বেতাগী শহর রক্ষাসহ বিষখালী নদীর অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অংশের প্রতিরক্ষা কল্পে ৪০৪ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন ও বরাদ্দ দেওয়া হয়।

কিন্তু ভাঙন তীব্রতর হলেও অদ্যাবধি ভাঙন প্রতিরোধে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে তাও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছেন না।
কিন্তু ভাঙন তীব্রতর হলেও এখনো পর্যন্ত বাস্তবে কোনো কাজ শুরু হয়নি। ফলে নদীপাড়ের পৌরশহরের তিন শতাধিক ব্যবসায়ী এবং বিষখালী নদীর তীরবর্তী পাঁচ হাজার পরিবার বসতভিটা হারানোর শঙ্কায়ও রয়েছে। এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌরশহরের বালুখেকো ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

এসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা ভাঙন এলাকার অতি নিকটেই ড্রেজার বসিয়ে রাতের আধাঁরে বালু উত্তোলন করছেন একটি অবৈধ চক্র। ফলে বস্তা ফেলার কয়েকদিন যেতে না যেতেই ওই এলাকায় পুনরায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

এতে পাউবো কর্তৃপক্ষের অর্ধকোটি  টাকা ব্যয় হলেও ভাঙন রোধ হচ্ছে না। কোনো কাজেই আসছে না জিও ব্যাগের বালুর বাঁধ।
‘ভাঙন অব্যাহত রয়েছে আর কিছু দিনের মধ্যে বাপ-দাদার বসতবাড়ি নদীতে হারিয়ে যাবে।

বসতবাড়ি সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলে প্রকল্পের কাজ শুরু হলে মোগো দুঃখ ঘুঁচবে না', চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব কথা বলেন বিষখালী নদীর পাড়ের বেতাগী সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঝোপখালী গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য সমাজসেবক সত্তোর্ধ্ব আব্দুস সোবাহান হাওলাদার।

এখন ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নবনির্মিত মডেল মসজিদ, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, যাত্রী ছাউনি, ভেড়িবাঁধ, শত বছরে পুরোনো কালীমন্দির ও শহরের বাকি এলাকা।
বেতাগী পৌরশহর রক্ষাবাঁধ সংলগ্ন মুদি মনোহরী ব্যবসায়ী শুভ কুন্ডু বলেন, ভাঙনের কবলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। বাপ-দাদার বসতভিটাও চলে যাচ্ছে। এখনো ভাঙনরোধে প্রকল্পের কাজ শুরু না করে এভাবে চলতে থাকলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো?

বিষখালী নদীর ভাঙন শুরু হওয়ায় বেতাগী লঞ্চঘাটের পশ্চিম-উত্তর দিকে শহররক্ষা বাঁধের ওপর নির্মিত পাকা সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গত তিন মাস ধরে ফাটল ধরেছে।
সড়কের দুই পাশে স’ মিল, হোটেল, চায়ের দোকান, আসবাবপত্র ও কাঠের দোকান মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত দোকান রয়েছে। যেকোনো সময় রাস্তা দেবে ওইসব দোকান নদীতে বিলীন হতে পারে।

এ ছাড়া ভাঙনকবলিত স্থানের আধা কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে বেতাগীর বন্দর, উপজেলা পরিষদ, মডেল মসজিদ, হাসপাতাল, কালীমন্দির, শ্মশাণঘাট ও পুরাতন ডাকবাংলো।
যা বড় কোনো জলোচ্ছ্বাস হলে পুরো পৌরশহর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বেতাগী বন্দরের তীরে অবস্থিত দয়াল মিষ্টান্ন ভা-ারের স্বত্ত্বাধিকারী নেপাল কুন্ডু বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে তার দোকান এলাকায় ভাঙন বেড়েছে। বর্তমানে শহররক্ষা ব্লকগুলো দেবে গেছে।
প্রতিষ্ঠানের খুব কাছে নদীর ভাঙন চলে এসেছে। যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে।

এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শত বছরে  পুরনো কালীমন্দির যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেছেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী (হিন্দু) সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা।

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এবং বেতাগী বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পরেশ চন্দ্র কর্মকার বলেন, ভাঙনে যেভাবে ব্লকে ফাটল ধরেছে, এতে আর কিছু দিনের মধ্যে কালীমন্দির নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব বলেন, সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। অনেক জায়গায় ফাটল দেখা গেছে। খুব শিগগিরই একনেকের সভায় পাস হওয়া প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজটি  শুরু হবে।

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন,  ভাঙনরোধে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করা হবে।
নদী থেকে বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেট বন্ধে ইতোমধ্যে একজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
পৌরসভার মেয়র এবিএম গোলাম কবির বলেন, ইতোমধ্যে দরপত্র দাখিল করা হয়েছে। ঠিকাদার চূড়ান্ত করার পর দরপত্রের প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ শুরু হবে

 


আরজেএন
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন