ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ট কলাপাড়া পৌরবাসী


কলাপাড়া ১৯৯৭ সালে পৌরসভা নির্মিত হলেও বর্জ্য ফেলার ডাম্পিং ষ্টেশন না থাকায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে যেখানে সেখানে। দিন দিন রোগ জীবাণু ছড়িয়ে স্থানীয় জনসাধারণ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ময়লা আবর্জনার কারনে শহরের মশা, মাছি ও দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পৌরবাসী। ময়লা আবর্জনার লোকালয় থেকে দূরে সরিয়ে আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। জনবসতীর কাছে আগুন দিয়ে ময়লা পোড়ানোর ফলেধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টে ভুগছে শিশু-বৃদ্ধসহ শহরবাসী। ওই এলাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে বলে ভুক্তোভোগীরা অভিযোগ করেন।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কলাপাড়া পৌর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে টিয়াখালী ইউনিয়নের নাচনাপাড়া টেন্ডোলের গোজা ও টিয়াখালী ইউনিয়নের ২০ কানী নামক স্থানে ৫-৬ বছর আগে কিছু জমিতে ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করেন। কিন্তু ময়লা আবর্জনা ফেলার কাজ নিয়োজিত পৌর পরিচ্ছন্ন কর্মীরা রাতের বেলা দুরবর্তী ওই ডাম্পিং স্টেশনে বর্জ্য না ফেলে শহরের আশপাশের খালি জায়গায় এবং নদীতে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষিত করছে। ময়লা আবর্জনা ও পলিথিনসহ প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো ধোঁয়া ও দূর্গন্ধে দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছে এখানকার বাসিন্দারা।
নাচনাপাড়া টেন্ডোলের ঘোঁজা এলাকার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান বলেন, খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলার কারনে এলাকার পরিবেশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। ময়লা আবর্জনা পোড়ানো অস্বাস্থ্যকর দূর্গন্ধময় ক্ষতিকর ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। এমন কি বন্ধুবান্ধব ও আত্নীয় স্বজনের কাছে বাড়ীর ঠিকানা দিতে লজ্জাবোধ করেন বলে একাধিক ভুক্তোভোগী জানান। ষাটোর্ধ এক ভুক্তোভোগী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, আমার বিবাহ যোগ্য কণ্যার একাধিক বার বিয়ে পাকাপাকি হওয়ার পরেও শুধু নোংরা পরিবেশের কারনে বিয়ে ভেঙে গেছে। তাই ময়লার ভাগাড়টি যত দ্রæত সম্ভব এখান থেকে সরিয়ে ফেলা হোক।
পৌরসভার সাবেক কাউন্সিল বিশ্বাস শফিকুর রহমান টুলু বলেন, ২৬-২৭ বছর আগে পৌর সভা গঠন করা হয়েছে। কিন্তু পৌরবাসী সঠিকভাবে পৌর কর পরিশোধ করলেও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। পৌরসভার সব বর্জ্য নাচনাপাড়া-টয়াখালী ডাম্পিং ষ্টেশনে না ফেলে শহরের আশপাশের খালী জায়গায় বর্জ্য ফেলায় দুর্গন্ধে আমরা অতিষ্ঠ। মশা- মাছি এত বৃদ্ধি পাচ্ছে শিশুদের সন্ধ্যার আগেই বাসাবাড়ীর দরজা জালানা বন্ধ করে মশারি টাঙ্গিয়ে রাখতে হয়।
বর্তমানে কলাপাড়া শহরে আশংকাজনক হারে মশার উপদ্রব দেখা দিয়েছে। কিন্তু মশা নিধন কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। মশা নিধনের নামে একটি মেশিন দিয়ে কিছু ডিজেল মিশ্রিত নামমাত্র মশা নিধন অভিযান পরিচালনা করে নাগরিকদের শান্তনা দেয়া হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।
কলাপাড়া পৌর ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম (৪৫) জানান, পৌর সভায় জম্মগ্রহন করেছি। পৌরসভা নির্মিত হয়েছে ১৯৯৭ সালের মার্চ মাসে তাতে প্রায় ২৬/২৭ বছর অতিবাহিত হয়েছে। আমরা নাগরিকরা রীতিমত পৌরকর পানির বিল বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন কর আদায় করে থাকি। কিন্তু নাগরিকদের যে সুযোগ- সুবিধা পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে পাওয়া উচিত তা কি আমরা আজও পেয়েছি? এ ছাড়া পৌরসভার প্রতিটি রাস্তার আশপাশে ময়লা আবর্জনায় ছড়িয়ে থাকে।
কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সামনে, কলাপাড়া উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে, কবরস্থানে পুর্ব পাশে খালের পাড়ে, বাদুরতলী স্লু ইসের পশ্চিম পাশে, খেপুপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে, রহমতপুর গ্রামীণ ব্যাংকের পাশে, মাদ্রাসা রোডে, খেপুপাড়া মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস সরকারী ডিগ্রি কলেজের পূর্ব পাশে ময়লা আবর্জনা স্তুপ রয়েছে। ওই ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে জনসাধারণ পথচারী ও এলাকাবাসী।
কলাপাড়া পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে কলাপাড়া প্রেসক্লাবের সামনে ভূমি অফিসের সীমানার মধ্যে উম্মুক্ত স্থানে ময়লার ভাগার থাকায় এখানে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক বেওয়ারিশ কুকুর খাবারের সন্ধানে এসে ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দুর্গন্ধ আরও বৃন্ধি করে। প্রেস ক্লাবের সদস্যসহ পথচারী ও ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র হুমায়ূন কবির বলেন, কলাপাড়া পৌরসভা পরিচালনায় জনবল কম থাকায় পরিচ্ছন্নতায় ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া জনসাধারণ সচেতন নয়। পৌরসভা পরিপাটি রাখার জন্য সকল নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য রয়েছে।
কিন্তু পৌরসভার ব্যবসায়ী ও দোকানদারেরা আমাদের পৌরসভা থেকে রাস্তায় রাস্তায় ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য প্লাস্টিকের ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। ওই ডাস্টবিনে ময়লা আবর্জনা না ফেলে তারা প্রেসক্লাবের সামনে খালী জায়গায় বর্জ্য ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে। আমাদের পরিচছন্ন কর্মীরা ময়লা আবর্জনা নাচনাপাড়া ও টিয়াখালী পৌর ডাম্পিং ষ্টেশন এ নিয়ে ফেলে আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলছে।
এইচকেআর
