বিনামূল্যে ১১০টি রোগের চিকিৎসা পাবেন ২৭ সহস্রাধিক দরিদ্র মানুষ


দরিদ্র ও বঞ্ছিত মানুষের বিনামূল্যে শতভাগ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বরিশালেও চালু হচ্ছে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি’। এই কর্মসূচির আওতায় একজন দরিদ্র মানুষ চিকিৎসা, পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং ওষুধসহ সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা মূল্যে ১১০টি রোগের চিকিৎসা সেবা পাবেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
পাইলট প্রকল্পের আওতায় বরিশাল মহানগরী ৩০টি ওয়ার্ডে এই কার্যক্রম শুরু হবে। এরই মধ্যে বরিশালে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্ড পাওয়ার জন্য দুস্থ নাগরিকদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এই কার্যক্রম শুরু করেছেন।
বরিশাল সিটি এলাকায় সরকারের এই স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) বাস্তবায়ন বিষয়ে সোমবার দুপুরে বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে অংশীজনদের সাথে মতবিনিময় ও পরামর্শমূলক কর্মশালা এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন- বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন-স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক।
এছাড়া স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক (গবেষনা) ড. সৈয়দা নওশীন পর্ণিনী, সহকারী পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবুল বাশার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল, বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ, জেলার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকারের একটি প্রাধিকারভুক্ত কর্মসূচি। ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। স্বাস্থ্য খাতে নিজ পকেট হতে ব্যয় এবং বিপর্যয়মূলক স্বাস্থ্য ব্যয় কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বরিশাল ও বরগুনাসহ ৬টি জেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
কর্মশালায় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে হতদরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে সর্বাধিক ৫০ হাজার টাকা মূল্যে ১১০টি রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। প্রত্যেক সুবিধাভোগীদের একটি করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্ড প্রদান করা হবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মনজুরুল ইমাম শুভ্র বলেন, ‘বরিশাল সিটিতে বসবাসকারী সকল দরিদ্র-বঞ্ছিত মানুষ স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আসবে। প্রকল্পটি যারা বাস্তবায়ন করছে তারা প্রাথমিকভাবে ২০১৮ সালের জনসুমারী অনুযায়ী বরিশাল সিটিতে থাকা ২৭ হাজার দরিদ্র-বঞ্ছিত মানুষকে এই কার্যক্রমের আওতাভুক্ত রেখেছে।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের পরে বরিশালে দরিদ্র-বঞ্ছিত জনগোষ্ঠির অবস্থা নতুন করে নীরিক্ষা করা হবে। এ ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠি বাড়তেও পারে এবং কমতেও পারে। জরিপে যা উঠে আসবে সেই অনুযায়ী কার্ড বিতরণ করবে। তাদের এই বিষয়ে জরিপ করতে সহযোগিতা করবে বলে সিটি করপোরেশন। আমরা জরিপের ফলাফল ঢাকায় তাদের কাছে প্রেরণ করবো। তারাই এই বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে এ ক্ষেত্রে কলোনী (বসতি) এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠি বেশি প্রাধান্য পাবে।
অপরদিকে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায়ভুক্ত দরিদ্র-বঞ্ছিত মানুষ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাবেন। যেমন- একজন কার্ডধারী রোগী বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে পৌঁছালে ভর্তি থেকে শুরু করে চিকিৎসায় যাবতীয় ব্যয় বহন করবে সরকার। তবে ওই রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে ওই রোগীর অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াও পরিশোধ করা হবে কর্মসূচির মাধ্যমে।
সূত্রটি জানিয়েছে, ‘বাইরে পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রয়োজন হলে সুনির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কার্ড প্রদর্শন করলে সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং চিকিৎসকের ফি’র প্রয়োজন হবে না। আবার ওষুধ কিনতে হলে নির্দিষ্ট ফার্মেসিতে গিয়ে কার্ড প্রদর্শন করলে বিনামূলে সকল ওষুধ পাবেন। অস্ত্রপচার থেকে শুরু করে সবকিছুই হবে বিনামূল্যে।
এদিকে, কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরিশাল সিটি করপোরেশনকে অন্তর্ভূক্ত করায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি অত্যন্ত গর্বিত কার্যক্রম। ব্যয়বহুল চিকিৎসা সেবা গ্রহণে অক্ষম, দুর্বল জনগোষ্ঠী যাতে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পায় সেজন্যই প্রধানমন্ত্রী এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।
এসময় স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচিতে বরিশালকে অর্ন্তভূক্ত করতে ভূমিকা রাখা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র বলেন, প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তথ্য নিয়ে সকলের সমন্বয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা সকলের দোড়গোড়ায় পৌঁছানোর দায়িত্ব আমাদের সবার। আমরা যদি সমন্বয় করে কাজ করতে পারি তাহলেই কেবল কর্মসূচির প্রকৃত উদ্দেশ্য যথাযথভাবে সফল হবে।’
মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি আমার দায়িত্বকালীন সময়ে নিষ্ঠার সাথে কাজ করার চেষ্ঠা করেছি। ভুল হতে পারে। সেজন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে আমি যে, ভালো কাজগুলো শুরু করেছি তার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আহ্বান জানাবো। আমি মেয়র থাকি আর না থাকি, জনগণের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো।
আরজেএন
