ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news

‘মোরা অ্যাহোন পানিতে ভাসি’

‘মোরা অ্যাহোন পানিতে ভাসি’
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মোগো বাড়িঘর হগোল নদীতে লইয়া গ্যাছে। জায়গা-জমি অ্যাহোন কিছুই নাই। কোনো হানে গিয়া আশ্রয়ও নেওয়ার জায়গাটুকুও নাই। নদীর কিনারে একডা খুপড়ি ঘর তুইল্যা থাহি। বান-বইন্যা আইলে রাইতে পায়রা নদীর গর্জনে বুকডা ধরপর কইর‌্যা ওডে। একটা ড্যাপা (ঢেউ) আইয়া বারি দিলেই হেডাও শ্যাষ। মোরা অ্যাহোন পানিতে ভাসি। কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর  মির্জাগঞ্জ উপজেলার পিঁপড়াখালী গ্রামের গৃহবধূ সাজেদা বেগম (৫৫)।

একই গ্রামের আলতাফ হোসেন বেপারী (৬৫) বলেন, এই বর্ষার পর পিঁপড়াখালী গ্রামের কোনো চিহ্নই থাকব না। সবটুকুই পায়রা নদী গিলে খাইছে। বাপ-দাদাসহ পূর্বপুরুষদের কবরডাও নাই। মোরা সরকারের কাছে আবেদন করছিলাম অ্যাইহানে পাইলিং কইর‌্যা দিতে। কিন্তু দেয় নাই হ্যারা। তাই মোগো গ্রামডা অ্যাহোন সব নদীতে।

একই উপজেলার সুন্দা কালিকাপুর শাহজাহান হাওলাদার (৬৫) বলেন, মোরা অ্যাহন নিঃস্ব, অসহায় হয়ে গ্যাছি। মোর ঘরডা ভাঙনের কবল থেইক্যা তিনবার সরাইয়া অ্যাহোন অ্যাইহানে আছি। কিন্তু অ্যাহোন নদীর যে উত্তাল অবস্থা, এতে ঘরে থাকতে ডর (ভয়) করে। রাইতে ঘরে ঘুমাই না, নদী থেইক্যা দূরে অন্যহানে গিয়া ঘুমাই। আবার ভোরে চইল্যা আসি। এইভাবে দিন কাটচ্ছে মোগো।
 এ ছাড়া সুন্দা কালিকাপুরের আলেয়া বেগম (৫২), পিঁপড়াখালী গ্রামের হাবিবুর রহমান খান (৫৮), আলমগীর হোসেন খান (৫৪) একই কথা বললেন।

নদীভাঙনে উদ্বাস্তু জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের নয়ারচর এলাকার গৃহবধূ খাদিজা বেগম (৪৫) বলেন, নদীভাঙনে মোর বাড়িঘর হগোল শ্যাষ। জমি-জমা হগোল হারাইয়া মুই অ্যাহোন নিঃস্ব, অসহায়। এই বান্দের উপর (বেড়িবাঁধ) একটা খুপড়ি ঘর তুইল্যা ছেলে-মেয়ে লইয়া থাহি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুম পুরোদমে শুরু না হতেই পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। জেলার খরস্রোতা পায়রা, আগুনমুখা, রামনাবাদ, তেঁতুলিয়া, বুড়াগৌরঙ্গ, আন্ধারমানিক, দারছিঁড়া, ডিগ্রি, লোহালিয়া ও লাউকাঠি নদী রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। এসব খরস্রোতা নদী গিলে খাচ্ছে জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ। হুমকির মুখে রয়েছে জেলার ওইসব ভাঙনকবলিত এলাকার অন্তত ৬০টি গ্রাম।

এদিকে অব্যাহত ভাঙনে গত পাঁচ বছরে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে জেলার হাজারও পরিবার। বেশির ভাগ পরিবার জেলার উপক‚লের চরাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্মিত বেড়িবাঁধের ওপর খুপড়ি ঘর তুলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন।

রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, আগুনমুখা, দারছিঁরা ডিগ্রি নদীর ভাঙনে উত্তর চালিতাবুনিয়া ও বোরোভাঙ্গা গ্রাম বিলীন হওয়ার মুখে পড়েছে। এসব এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

মির্জাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার বলেন, আমার ইউনিয়নের পিঁপড়াখালী ও সুন্দা কালিকাপুর গ্রাম প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পটুয়াখালীর উপক‚লের ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত, ১৮ কিলোমিটার অতিঝুঁকিপূর্ণ এবং ৩৪ কিলোমিটার আংশিক ঝুঁকিপূর্ণ। 

পটুয়াখালী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফ হোসেন বলেন, নদীভাঙনের কারণে যেসব এলাকা বা গ্রাম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, তা সংস্কারের কাজ চলছে। মির্জাগঞ্জের পিঁপড়াখালী ও সুন্দা কালিকাপুর এলাকার ভাঙনকবলিত এলাকার কাজ দ্রæতগতিতে চলছে।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন