ঢাকা রবিবার, ২২ জুন ২০২৫

Motobad news

বঙ্গোপসাগরের উপকূলে জাহাজ ডুবে যাওয়ার ৭ দিনেও উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়নি

বঙ্গোপসাগরের উপকূলে জাহাজ ডুবে যাওয়ার ৭ দিনেও উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়নি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ভাসানচরের কাছে কনটেইনারবাহী একটি জাহাজ ডুবে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরও উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়নি। উদ্ধার কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় জাহাজটিতে থাকা আমদানি পণ্যের কয়েকজন মালিক উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, জাহাজ উদ্ধারে যত দেরি হচ্ছে, ততই কনটেইনারে থাকা পণ্য নষ্টের আশঙ্কা বাড়ছে।

ডুবে যাওয়া জাহাজটির নাম ‘এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস’। আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে ৬ জুলাই জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রওনা দেয়। জাহাজটি ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনালে যাচ্ছিল। পথে ভাসানচরের অদূরে জাহাজটি কাত হয়ে ডুবে যায়।

জাহাজটিতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা ৯৬ কনটেইনার পণ্য রয়েছে বলে বন্দর সূত্রে জানা যায়। জাহাজের ওপরের দিকের কিছুসংখ্যক কনটেইনার এখনো পানিতে ডোবেনি। তবে বেশির ভাগ কনটেইনার ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে। জাহাজটির মালিক চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। জাহাজটি ‘বেয়ারবোট চার্টার’ (পরিচালনাসহ সব দায়িত্ব ভাড়া নেওয়া প্রতিষ্ঠানের) চুক্তিতে পরিচালনা করে আসছে সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সিস লিমিটেড।

জাহাজটি উদ্ধারে কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় অন্তত ১৫ জন আমদানিকারক গত কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চট্টগ্রামে আসেন। জাহাজটি যাতে দ্রুত উদ্ধার করা হয়, সে জন্য তাঁরা তৎপরতা চালান। জাহাজটিতে থাকা আমদানি পণ্যের কয়েকজন মালিক গনমাধ্যমকে বলেন, উদ্ধার কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় তাঁরা খুবই উদ্বিগ্ন। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকজন আমদানিকারক গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় বন্দর চেয়ারম্যান জাহাজটি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দুই দিনের মধ্যে উদ্ধার কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন।

উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি না, তা দেখতে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি দল গতকাল বৃহস্পতিবার জাহাজ নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু তারা সেখানে গিয়ে জাহাজ উদ্ধারের কোনো কার্যক্রম দেখতে পায়নি বলে বন্দর সূত্রে জানা যায়। ঘটনাস্থলে জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটিরও কাউকে দেখা যায়নি। জাহাজটিতে কুমিল্লার মুঠোফোনের সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হালিমা গ্রুপের ৬০ হাজার ডলার মূল্যের এক কনটেইনার পণ্য রয়েছে। জাহাজটি এখনো উদ্ধার না হওয়ায় এই পণ্য অক্ষত পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক।

উত্তাল সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় জাহাজটিতে পানি ঢুকতে থাকে। এ সময় জাহাজটি সাগরের উপকূলের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তখনই ডুবতে শুরু করে।

জানতে চাইলে হালিমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল কালাম হাসান বলেন, এক সপ্তাহেও উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেনি জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সিস লিমিটেড। তাঁর পণ্য জাহাজের ওপরের দিকে থাকা কনটেইনারে আছে। এই পণ্য এখনো অক্ষত রয়েছে বলে তাঁর ধারণা। উদ্ধার করা গেলে এই পণ্য ব্যবহার করা যেত। কিন্তু এখনো উদ্ধার কার্যক্রম শুরু না করার ব্যাপারটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

ঢাকার পাটুয়াটুলীর ফেইথ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের দুই কনটেইনার ইলেকট্রিক সরঞ্জামের পণ্য রয়েছে জাহাজটিতে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতেই ঋণপত্র খুলতে হিমশিম খাচ্ছি। এখন আমদানি পণ্য উদ্ধারেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। আমি হতাশ।’

জাহাজটি দিয়ে মূলত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনালে নেওয়া হতো। আবার টার্মিনাল থেকে পণ্য নৌপথে চট্টগ্রাম বন্দরে এনে তা রপ্তানি করা হতো। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ভাড়ার শর্ত অনুযায়ী, জাহাজটি উদ্ধার করবে পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। জাহাজটি দ্রুত উদ্ধারের জন্য তাদের বলাও হয়েছে। বন্দরের বোর্ড সদস্যের (হারবার ও মেরিন) নেতৃত্বে একটি দল গতকাল দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে এসেছে। দুর্ঘটনার পর সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন বলেছিলেন, সাগর উত্তাল থাকায় উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। কবে নাগাদ উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা যাবে, তা–ও তখন তিনি বলেননি। এ বিষয়ে জানতে  শুক্রবার সকালে জহির উদ্দিনের মুঠোফোনে কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।


আরজেএন
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন