ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news

বিদেশ ভ্রমণে সম্পদের তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক, বিল পাস

বিদেশ ভ্রমণে সম্পদের তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক, বিল পাস
ফাইল ছবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

আয়কর রিটার্নে বিদেশে থাকা সম্পদ না দেখালে জরিমানার বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ‘আয়কর বিল-২০২৩’ পাস করা হয়েছে। এতে বিদেশ ভ্রমণে যেতে সম্পদের তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

রোববার (১৮ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি পাসের জন্য প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর বিরোধী দলের সদস্যদের জনমত যাচাই প্রস্তাব ও সংশোধনীগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।  

প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থার আধুনিকায়নে জাতীয় সংসদে গত ৮ জুন এ ‘আয়কর বিল-২০২৩’ অর্থমন্ত্রী সংসদে উত্থাপন করেন। এ বিলের বিধান অনুযায়ী, ৪০ লাখ টাকার বেশি সম্পদ থাকলে সম্পদ ও দায়ের বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।  

পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। স্থায়ী কমিটি থেকে পাসের জন্য সুপারিশ করার পর রোববার এটি সংসদেও অধিবেশনে তোলা হয়। পাস হওয়া এ বিলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কার্যকর করা হবে।

নতুন এ আয়কর বিলে বিদেশে সম্পদের মালিক হলে সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে হবে। এমনকি চিকিৎসা বা ধর্মীয় কারণ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে বিদেশ ভ্রমণে যাওয়া ব্যক্তিদের সম্পদ বিবরণী জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সংসদে পাস হওয়া এ বিলের বিধান অনুযায়ী, তিন শর্তের একটি প্রযোজ্য হলেই সম্পদের বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই শর্তগুলো হলো- অর্থবছরে মোট সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ টাকা হলে, একটি মোটরগাড়ির মালিক হলে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় গৃহ-সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হলে। এসব সম্পদে বিনিয়োগ করলেই বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সম্পদের রিটার্ন দিতে হয়। এ ছাড়া কোনো কোম্পানির শেয়ারধারী পরিচালক হলেও সম্পদের বিবরণী জমা দিতে হবে।

যদি করযোগ্য আয় না থাকে, তবু দেশের সীমানা পেরোলেই ফ্ল্যাট, জমি, আসবাব, ব্যাংক ব্যালেন্সসহ যাবতীয় সম্পদের তথ্য জানানো বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে সংসদে পাস হওয়া এ বিলে। এতে বলা হয়েছে, দেশের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ট্যাক্স রিটার্নসহ তাদের সম্পদ ও দায়ের বিবরণী দাখিল করতে হবে। করদাতাদের ট্যাক্স রিটার্নে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে সম্পদ ও দায় উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।

এ বিলে বলা হয়েছে, কোনো করদাতা যদি তার রিটার্নে বিদেশে থাকা সম্পদ প্রদর্শন না করেন, আর সেই সম্পদের খোঁজ যদি কর কর্মকর্তারা পান এবং ওই সম্পদ অর্জনের উৎস ও অন্যান্য বিষয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারেন তবে কর কর্মকর্তারা জরিমানা করতে পারবেন। বিদেশে থাকা সম্পত্তির ন্যায্য বাজারমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা আদায়ও করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিলে আরও বলা হয়, দেশে অবস্থানরত বিদেশিদের বাংলাদেশে তাদের সম্পদ ও দায় ট্যাক্স রিটার্নে দেখাতে হবে। স্বামী বা স্ত্রী এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের যদি টিন নম্বর না থাকে, সেক্ষেত্রে পরিবারের করদাতাকে তাদের সম্পদ ও দায়ের বিবরণী দাখিল করতে হবে।

সংসদে পাস হওয়া এ বিলে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিভিন্ন সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়েছে। সংসদীয় কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত বাধ্যতামূলক ট্যাক্স রিটার্নে দাখিল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে। এর পরিবর্তে কমিটি উল্লিখিত পরিমাণের ব্যাংকে মেয়াদি বা স্থায়ী আমানত থাকা ব্যাংক আমানতকারীদের জন্য রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করে।  

আয়কর বিলে একজন করদাতা সারা বছরে সব ভাতার টাকার মধ্যে সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত কিংবা বার্ষিক মোট আয়ের দুই-তৃতীয়াংশ— এর মধ্যে যেটি কম তা করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়। সংসদ এসব প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।

এ বিলের সময় দেওয়া বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ আইনের ফলে দেশে যারা আয়কর দেন তারাসহ সংশ্লিষ্টরা উপকৃত হবেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বার বার বলে আসছেন, আমাদের কর রাজস্ব বাড়াতে হবে। সেই উদ্দেশ্যেই বিলটি আনা হয়েছে।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন