ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news

সেতু আছে, দুপাশে নেই সড়ক

সেতু আছে, দুপাশে নেই সড়ক
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের মল্লিকডুবা ও ভরিপাশা গ্রামের মধ্যবর্তী খালের ওপর সাত বছর আগে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। অথচ এর দুই পাশে যানবাহন চলাচলের জন্য আগে থেকে কোনো রাস্তা ছিল না। সেতু নির্মাণের পর সাত বছরেও সেখানে রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। ফলে সেতুটি যেন ফাঁকা জায়গায় একরকম একাকী দাঁড়িয়ে আছে। এতে এই সেতু কারও কোনো উপকারে আসছে না।  

এদিকে পড়ে থেকে থেকে সেতুটির বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পড়ছে, রড বেড়িয়ে রয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, সড়ক নেই, অথচ সেতু আছে—এটা অপচয় ও পাগলামি ছাড়া কিছুই না। যে সেতু দিয়ে কোনো দিন কোনো মানুষ কিংবা যানবাহন কখনো চলাচল করেনি, মাত্র সাত বছরে সেই সেতুটির ঢালাইয়ের ইট-সুরকি খসে পড়ছে, রড বেড়িয়ে গেছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে, কতটা নিন্মমানের কাজ হয়েছে। ক্ষুব্ধ লোকজন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও তদারক কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট প্রকল্পের আওতায় ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩৬ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্ত এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ২৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। সেতুটির উত্তর পাশে কাঁচা রাস্তা রয়েছে, যা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। ওই রাস্তা দেড় কিলোমিটার দূরে কেশবপুর মহাবিদ্যালয়ের কাছে গিয়ে পাকা রাস্তায় মিশেছে। 

সেতুর দক্ষিণ পাশে পুরোপুরি ফাঁকা, প্রাকৃতিক বন-জঙ্গলে ভরা। দেড় কিলোমিটারের মধ্যে সেখানে কোনো সড়ক নেই। সেখান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে নুরানপুর-ভরিপাশা পাকা সড়ক রয়েছে। ফলে সেতুটি ব্যবহারের জন্য বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে ওই দেড় কিলোমিটারে রাস্তা নির্মাণ করতে হবে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের পশ্চিম সীমানা দিয়ে আলোকী নদী উত্তর-দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত। ওই নদী থেকে পূর্ব দিকে একটি সরু খাল প্রবাহিত হয়েছে। এটিকে মল্লিকডুবা ও ভরিপাশা গ্রামের সীমানা খাল বলা হয়। দুই গ্রামের পশ্চিম পাশের শেষ সীমানায় ওই খালের ওপরই উত্তর-দক্ষিণমুখী সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।

হেলাল উদ্দিন (৭০) নামে স্থানীয় এক কৃষক বলেন, ‘রাস্তা না কইরা সেতু বানাইছে। হেই লইগা এই সেতু দিয়া কোনো মানুষ যাইতে-আইতে পারে না।’ ভরিপাশা গ্রামের মো. মিলন মৃধা (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সড়ক নির্মাণ না করে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এটা অপচয় ও পাগলামি ছাড়া কিছুই না।’

মাহাবুবুর রহমান (৫৬) নামে এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতুটি দিয়ে মানুষ কিংবা যানবাহন কখনো চলাচল করেনি। মাত্র সাত বছরে সেই সেতুটির ঢালাইয়ের ইট-সুরকি খসে পড়ছে, রড বেড়িয়ে গেছে। তিনি নিম্ন মানের কাজের জন্য ঠিকাদার ও তদারক কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেন। 

মাদ্রাসাশিক্ষক ইব্রাহিম (৩৭) বলেন, সেতু নির্মাণের পর যদি যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করা হতো, তাহলে নদীর পাশের ভরিপাশা গ্রামের মানুষ মল্লিকডুবা বাজারে সহজে যাতায়াত করতে পারত এবং ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা কেশবপুর মহাবিদ্যালয় ও কেশবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে পারত। আর মল্লিকডুবা গ্রামের মানুষ খুব সহজেই নুরাইনপুর বাজার ও শিক্ষার্থীরা নুরাইনপুর কলেজে যাওয়া আসা-করতে পারত।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল আমিন বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে সড়ক ছাড়া সেতুর এ ঘটনা সত্যি হলে তা খুবই দুঃখজনক।  সরেজমিন পরিদর্শন করে মানুষের যাতায়াতের উপযোগী সড়ক নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, সেতু দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। অথচ এত অল্প সময়ের মধ্যে সেতুটির ঢালাইয়ের ইট-সুরকি খসে পড়ছে, এটা আরও দুঃখজনক। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন