নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন- চরমোনাই পীর


আওয়ামী লীগ দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই দরবারের পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেছেন, এ অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে সচেতন জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আগামী সংসদ নির্বাচন জাতীয় সরকারের অধীনে দিতে এখনই সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
গত ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ও দলের সিনিয়র নায়েবী আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ সিইসি’র পদত্যাগের দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চরমোনাই পীর এসব কথা বলেন।
দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকেল ৩টায় নগরীর সদর রোডে অশ্বিনী কুমার হলের সামনে অস্থায়ী মঞ্চে যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল জেলা ও মহানগর।
কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর অংশগ্রহণে সমাবেশ পরবর্তী বিক্ষোভ মিছিল শেষে অশ্বিনী কুমার হলের সামনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কুশপুত্তলিকা দাহ এবং তাঁর প্রতীকী কফিন প্রদশন করে প্রতিবাদ জানান নেতা-কর্মীরা।
এর আগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বরিশাল মহানগরের সহ-সভাপতি মাওলানা সৈয়দ নাছির আহমেদ কাওছারের সভাপতিত্বে সমাবেশে সঞ্চালনায় ছিলেন- দলের মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া হামিদী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করীম বলেন, “ব্যক্তি পর্যায়ে দলকে মজবুত করার লক্ষ্যে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে আমরা অংশ নিয়ে আসছিলাম। কিন্তু বরিশাল সিটি নির্বাচনে বর্তমান সরকার, ইসি ও প্রশাসন যে কা- ঘটিয়েছে তা বিশ্বে কলঙ্কের ইতিহাস হয়ে থাকবে। ধিক্কার জানাই এই কুলাঙ্গার সিইসিকে। তার পদত্যাগ দাবি করছি। মুক্তিযুদ্ধে আমরা জীবন দিয়েছি। আমরাই দেশকে রক্ষা ও জালেমদের উৎখাত করতে আরেকবার মুক্তিযুদ্ধ করবো।
তিনি বলেন, দেশ আজকে হুমকির মুখে। আজকে দেশ কিন্তু পরদেশের তাবেদারীতে চলে গেছে। ওখান থেকে যেভাবে সিদ্ধান্ত হয়, আমাদের বাংলাদেশে সেভাবে বাস্তবায়ন হয়। তাদের কথা এবং কার্যক্রমে লক্ষ্য করেছি, পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার জন্যই ফয়জুল করীমের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। আমার পানির ¯্রােতে ভেসে আসি নি। এই জালেমদের বাংলার মানুষ উৎখাত করে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবে।
হাতপাখার প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় সিইসি’র মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন?" শায়েখে চরমোনাইকে নিয়ে এমন কা-জ্ঞানহীন বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বের সাথে বেমানান। এমন বক্তব্য নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
তিনি আরও বলেন, আপনি (সিইসি) সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করুন। অন্যথায় দেশের জনগণ আপনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করবে।
চরমোনাই পীর বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। গণতান্ত্রিক পক্রিয়ায় ক্ষমতা পরিবর্তনের মুখ্য ভূমিকা নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু বর্তমান সরকার নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে বারবার একটি নিরপেক্ষ জায়গায় পক্ষপাতদুষ্ট কমিশন নিয়োগ দিচ্ছেন। যারা জাতিকে ধোঁকা দিয়ে বারবার প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করে চলছে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহাবুব।
চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ জিয়াউল করীম, ইসলামী আন্দোলন বরিশাল মহানগরের সহ-সভাপতি মাওলানা লুৎফর রহমান, বরিশাল জেলার সেক্রেটারী মাওলানা উপাধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম, মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবুল খায়ের আশ্রাফী, জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা কাওছারুল ইসলাম, মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হাফিজুর রহমান, জাগুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা হেদায়াতুল্লাহ আযাদী এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
এর আগে সমাবেশ ঘিরে জুমার নামাজের পর থেকে বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা দলে দলে খ- খ- মিছিল নিয়ে সদর রোডে আসতে শুরু করে। বিকেল তিনটা বাজার আগেই গোটা সদর রোড এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
কাকলীর মোড় থেকে জেলাখানার মোড়পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ভিড়ে সদর রোড এলাকায় সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সদর রোডের আশপাশের সড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। বিকাল সাড়ে ৫টায় সমাবেশ শেষ হলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তাছাড়া সমাবেশেকে ঘিরে সদর রোডসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিলো।
আরজেএন
