ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

Motobad news

বাউফলে এবার সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন

বাউফলে এবার সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজের বিপক্ষে আজ রোববার দুপুরে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভার মেয়র জিয়াউল হক এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারের অনুসারীরা।

এর আগে গত বুধবার (২৬ এপ্রিল) উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে হামলার ঘটনা ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে বিভক্তি করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজকে দায়ী করে বক্তব্য দেন বক্তারা।  বক্তারা তখন আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি করেন।

এর প্রতিবাদে  শনিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে দলীয় কার্যালয় জনতা ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের পক্ষের লোকজন। ওই সময় আ স ম ফিরোজের অনুসারী ফরিদ আহমেদ লিখিত বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভার মেয়র মো. জিয়াউল হককে বিএনপি পরিবারে বেড়ে ওঠা, আওয়ামী লীগ নামধারী নেতা ও বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল আলম তালুকদারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ও কালোটাকা ব্যবহার করে বাউফল পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন বলে উল্লেখ করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে উচ্চাভিলাষী, বিপথগামী ও একের পর এক নারী কেলেঙ্কারী, সরকারি-বেসরকারি জমি দখল করে নাম লিখিয়েছেন ভূমি দস্যুর খাতায়।বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ বীর উত্তম সামসুল আলম তালুকদারের সন্তান এভিআর বাংলাদেশ গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসীব আলম তালুকদারকে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আর্শিবাদপুষ্ট উল্লেখ করেন।

এর প্রতিবাদে আজ রোববার দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে বাউফল পৌরসভার কুণ্ডপট্রি এলাকার দলীয় কার্যালয়ে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন  উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রের অনুসারীরা। সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জসীম উদ্দিন ফরাজির স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য তাঁর-ই উপস্থিতিতে পাঠ করেন কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম ইউসুফ। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মদনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম মস্তফা, বগা ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদ হাসান, নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম মহসীন, উপজেলার সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম,উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ রাহাত প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে এসএম ইউসুফ বলেন, জিয়াউল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

আবদুল মোতালেব হাওলাদার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, যুবলীগের সভাপতি, ২০০৩ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। বিএনপি জোট সরকারের সময় হত্যা মামলায় আসামি করে তাঁকে ও তাঁর নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলেকে ৬৪ বছর সাজা দেওয়া হয়। দীর্ঘ বছর কারাভোগ করে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন।

বীর উত্তম সামসুল আলম তালুকদারের সন্তান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাসীব আলম তালুকদার। যিনি এবং তাঁর পরিবার আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ঘনিষ্ঠজন।

অথচ তাঁদেরকে নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট, ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে আ স ম ফিরোজের অনুসারীরা গতকাল শনিবার (২৯ এপ্রিল) সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। পাশাপাশি ওই বক্তব্য প্রত্যাহারেরও দাবি করছি।

লিখিত ওই বক্তব্যে এসএম ইউসুফ আরও বলেন,আ স ম ফিরোজ  ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে রিক্সা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। গত ইউপি নির্বাচনে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আমির হোসেন হাওলাদারের বিরোধিতা করেছেন। আমির হোসেনকে সাংবাদিক সম্মেলন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে তাঁরই ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক ওরফে আলকাচ মোল্লাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য বলেছিলেন। এ সংক্রান্ত অডিও তখন ভাইরাল হয়েছে এবং যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়াও তিনি ছাত্রজীবনে কখনও মূলধারার রাজনীতি করেননি। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামী নুরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে রাজনীতি করতেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর আ স ম ফিরোজের বিতর্কিত ভূমিকার কথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. জাহাঙ্গীর কবির নানক টকশোতে বলেছেন।

যদিও এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন আ স ম ফিরোজের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোসারেফ হোসেন খান।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দীর্ঘদিনের। এ কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ ব্যতীত কোনো পদের অনুমোদন নাই।

গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত পৃথক কর্মসূচি ঘিরে সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের উপস্থিতিতে বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ওই সময় উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের অনুসারীরা। এ ঘটনায় আ স ম ফিরোজের ভাতিজা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কালাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে মনির হোসেন মোল্লাকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন