ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫

Motobad news

বাউফলে সংসদ সদস্যর পক্ষের সাংবাদিক সম্মেলন

বাউফলে সংসদ সদস্যর পক্ষের সাংবাদিক সম্মেলন
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখমের ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজকে দায়ী করে বক্তব্য দেন বক্তারা। 

ওই বক্তব্যকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও কুরুচিপূর্ণ দাবি করে শনিবার দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে দলীয় কার্যালয় জনতা ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের পক্ষের লোকজন। 

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের দপ্তর সম্পাদক পরিচয়দানকারী ফরিদ আহমেদ। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোসারেফ হোসেন খান, সূর্য্ মনি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ওরফে বাচ্চু, কেশবপুর ইউপি চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন ওরফে পিকু, ধূলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ন কবির, চন্দ্রদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক ওরফে আলকাচ মোল্লা, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে ফরিদ আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভার মেয়র মো. জিয়াউল হককে নামধারী আওয়ামী লীগ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে বিপথগামী ও ষড়যন্ত্রকারী উল্লেখ করেছেন। 

এছাড়াও তিনি (ফরিদ) লিখিত বক্তব্যে মেয়র জিয়াউলকে যুবলীগকর্মী তাপসসহ পাঁচ-সাত খুনের নেপথ্যের নায়ক বলেছেন। যদিও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব ঘটনার সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগসহ ভূমিদস্যু বলা হয়েছে এ সাংবাদিক সম্মেলনে। প্রতিবাদ সমাবেশে সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করা না হলে রাজপথে সমুচিত জবাব দেওয়ার ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত পৃথক কর্মসূচিকে ঘিরে বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ওই সময় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের অনুসারীরা।

ওই ঘটনার দীর্ঘ ১ মাস ১০ দিন পর চিকিৎসা শেষে গত বুধবার আবদুল মোতালেব এলাকায় ফিরেছেন। ফিরেই তিনি তাঁর ওপর হামলা ও কুপিয়ে আহত করার প্রতিবাদে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে উপজেলা সদরের শেখ রাসেল মিনি ষ্টেডিয়ামে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন।

প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জসীম উদ্দিন ফরাজি। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভার মেয়র মো. জিয়াউল হক। অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন এভিআর গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বীর উত্তম সামসুল আলম তালুকদারের ছেলে হাসীব আলম তালুকদার,কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম ইউসুফ,আওয়ামী লীগ নেতা তালুকদার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন,উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম গাঙ্গুলী,উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে শিপন , উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন,সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই তাঁকে অপমানিত হতে হয়। তাঁর ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকাকালীন কোনো সাধারণ সম্পাদক সম্মান নিয়ে দল করতে পারেননি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর বরিশাল শহরে কার নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল হয়েছিল তা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জানেন। তাঁর (আ স ম ফিরোজ) উপস্থিতিতে তাঁর লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী বাহিনী আবদুল মোতালেব হাওলাদের ওপর হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। বক্তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ সময় উপস্থিত কয়েক হাজার নেতা-কর্মী সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে হাতে হাত মিলিয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেন। 

এ বিষয়ে আবদুল মোতালেব বলেন যা সত্য প্রতিবাদ সভায় তা-ই বক্তারা বলেছেন। তিনি আরও বলেন,ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগ করি। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছি, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হয়েছি, বর্তমানসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। আমি যদি বিপদগামী ও ষড়যন্ত্রকারী হই, তাহলে যিনি (আ স ম ফিরোজ) আওয়ামী লীগের বিপক্ষে নির্বাচন করেছিলেন তিনি কি? তিনি (আবদুল মোতালেব) ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন,আমার ওপর হামলাকারী এবং এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ সাহেবের ভাতিজা এনামুল হকও এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এর চেয়ে দুঃখ আর কি হতে পারে?

এ বিষয়ে মেয়র জিয়াউল হক বলেন,‘ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের একাধিকবার কেন্দ্রীয় নেতা ছিলাম। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। এরপরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সাংবাদিকদের সামনে তাঁর বিরুদ্ধে  বিভ্রান্তিকর, অসত্য, মনগড়া ও মানহানিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন। যা সাংবাদিকদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন