নদীর পাড় কেটে করা হচ্ছে মাছের ঘের


এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে নদীর পাড় কেটে সে মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে উঁচু বেড়িবাঁধ। তার মাঝে হবে মাছের ঘের। আবার কেউ নদীর তীরে জেগে ওঠা নতুন চরের মাটি কেটে বাঁধ তৈরি করছে। সেখানেও করা হবে মাছের ঘের।
এভাবে বেদখল হয়ে যাচ্ছে নদীর তীরভূমি। উপজেলা প্রশাসন সরকারের খাস জমি রক্ষায় অভিযান চালালেও বন্ধ হচ্ছে না নদীর তীরভূমি বেদখল। বরং নদীর তীরভূমির মাটি কাটতে গিয়ে প্রাকৃতিক বনের গাছও কেটে ফেলা হচ্ছে। উজাড় হচ্ছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। এ দৃশ্য পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি ইউনিয়নের আশাবাড়িয়া চরের।
গত বেশ কয়েকদিন ধরে চলছে এভাবে নদীর পাড় ও চর কাটা। এছাড়া সদর ইউনিয়নের চর কাসেম এলাকায় বুড়াগৌরাঙ্গ নদের পাড় কেটেও চলছে মাছের ঘের তৈরি। সব জায়গাতেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাছ চাষের নামে এ ধরণের অপকর্ম করে চলছে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা প্রশাসন নদীর পাড় ও নতুন জেগে ওঠা চরের মাটি কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সে নির্দেশ উপেক্ষা করা হচ্ছে।
কোনো কোনো জায়গায় রাতের আঁধারেও মাটি কাটার কাজ চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ও সরেজমিনে দেখা গেছে, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন মৌডুবির আশাবাড়িয়া গ্রামের দাঁড়ছিড়া শাখা নদীর পাড় এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে কেটে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয় শাহীন মৃধা নামের এক প্রভাবশালী মাছের ঘের করার লক্ষ্যে এ বাঁধ নির্মাণ করছে।
স্থানীয়রা জানায়, বেশ কয়েকদিন ধরে নদীর পাড় কাটা হচ্ছে। এছাড়া নদীর তীরে জেগে ওঠা নতুন চরের জমিও কেটে সে মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। অনেকটা এলাকা নিয়ে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করা হচ্ছে। এভাবে নদীর পাড় ও তীরভূমি কাটায় এক সময়ের গভীর ও খরস্রোতা দাঁড়ছিড়া শাখা নদী এখন অনেকটা শুকিয়ে গেছে। নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, নদীর তীরভূমির মাটি কেটে বাঁধ দেওয়ার খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় শাহীন মৃধা যে ঘের করছেন, সে ঘেরে খাস জমি রয়েছে। এ কারণে নদীর তীরভূমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে শাহীন মৃধা খাস জমি দখলের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, তার কাছে সব বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। মাছের ঘের তৈরির সব জমি তার রেকর্ডীয়। পাঁচ একর আয়তনের মাছের ঘের করতে গিয়ে কিছু গাছ কাটা পড়েছে, সে বনাঞ্চলও তার জমির প্রাকৃতিক বলে দাবি করেছেন।
এদিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন চর কাসেমেও নদীর তীরভূমি এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বেশ কয়েকদিন ধরে চলছে বুড়াগৌড়াঙ্গ নদের পাড়ের মাটি কাটার কাজ। এক্সেভেটর মেশিনের মালিক জাকির সিকদার জানান, চুক্তিতে তিনি ওই এলাকার ওহিদুল গাজীর মাছের ঘের তৈরির জন্য নদীর পাড়ের মাটি কাটছেন।
উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আনম মুরাদুল ইসলাম জানান, চর কাসেমে নদীর তীরভূমি ও পাড় সরকারের খাসজমি। তাদের মাটি কাটা বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে ওহিদুল গাজী নদীর তীরভূমি তার রেকর্ডীয় জমি দাবি করে জানান, নিজেদের জমিতে তিনি ঘের করছেন।
অন্যদিকে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, নদ-নদী ও খালে অবৈধ ভাবে দেওয়া বাঁধ অপসারণে উপজেলা প্রশাসন গত তিন মাসে অন্তত ১৩ টি অভিযান পরিচালনা করেছে। সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি চর কাসেম গ্রামে খাস জমিতে এক্সেভেটর দিয়ে মাটি কেটে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের করার দায়ে একজনকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু এরপরও বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ দখল ও মাটি কাটা।
নদ-নদীর তীরভূমির মাটি কেটে বাঁধ দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, নদ-নদী ও প্রবাহমান খালের পাড়ের তীর ভূমি থেকে মাটি কেটে এভাবে বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের নির্মাণ কেউ করতে পারেনা। এটা আইনগতভাবে বৈধ নয়।
এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. সালেক মুহিদ বলেন, মৌডুবি ইউনিয়নের আশাবাড়িয়া ও চর কাসেমে নদীর তীরভূমিতে মাটি কেটে মাছের ঘের করার খবর পেয়েছি। এটা অবৈধ। কোনো ভাবেই সরকারের খাস জমিতে এভাবে মাছের ঘের করতে দেওয়া হবে না। অবৈধ কাজ বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে অভিযান চালিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এইচকেআর
