এলজিইডির একাধিক প্রকল্পে অনিয়ম, ছয় প্রকৌশলীকে শোকজ


পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা এলজিইডির একাধিক প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা সরেজিমন পরিদর্শন করে কাজ বন্ধ করে দেয়।
পরে ওই উপজেলার একাধিক কাজে অনিয়মের অভিযোগ উল্লেখ করে আলাদা আলাদা পত্রে উপজেলা প্রকৌশলীসহ ৬ জনকে শোকজ করেছে পটুয়াখালী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৫২ নং নোটিসে এফডিডিআরআইপি প্রকল্পের আওতায় কাঠালতলী জিসি (ত্রিমুখী) ছৈলাবুনিয়া ¯স্লুইজ আরএইচডি রোড ভায়া শিশুর হাট সড়কে প্রায় তিন কোটি লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ কিলোমিটার কার্পেটিং দ্বারা উন্নয়নের কাজ পায় ঠিকাদার এনায়েত হোসেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কার্যাদেশ পাওয়ার অন্তত দুই বছর পর অফিসের লোকজন ম্যানেজ করে ইচ্ছা মতো কাজ শুরু করে ঠিকাদার। কোন মতে খোয়া ফেলে যেনতেনভাবে রোলিং করে কাজ ফেলে গত বর্ষার আগে ঠিকাদারের লোকজন চলে যায়। এতে গত বর্ষা মৌসুমে ওই ৪ কিলোমিটারের সড়কে বসবাসরত এবং চলাচলরত মানুষে দুর্ভোগ চরমে পৌছে।
উপজেলা প্রকৌশলীর অফিসে বারবার ধর্না দিয়েও কোন সুরাহা মেলেনি। পরবর্তীতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি কার্পেটিং এর কাজ শুরু করা হয়। উপজেলা প্রকৌশলীসহ অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ দায়িত্বরপ্রাপ্তরা ঠিকাদারের যোগসাজোসে প্রাইমকোট ছাড়াই কাপেটিং করা শুরু করে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, চার কিলোমিটার সড়কের দুই কিলোমিটারই ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার না করে প্রাইমকোট না দিয়ে কার্পেটিং কাজ করে ফেলেছে। এমন অনিয়মের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে এলাকাবাসী ফুসে উঠে।
খবর পেয়ে পটুয়াখালী এলজিইডি কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী দিপুল কুমার বিশ্বাসসহ প্রকৌশলীরা ও পরীক্ষাগারের (ল্যাব) কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে গত ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাহী প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত পত্রে কাজে নানান অনিয়ম পাওয়া গেছে মর্মে শোকজ করা হয় মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট চার জনকে।
পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমান আপনার উপজেলাধীন বিষয় বর্ণিত কাজটির কার্পেটিং কাজে অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে অত্র দপ্তরের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী কার্পেটিংএ টেন্ডারে উল্লেখিত করা হয় নি। কাজের ক্রটির জন্য আপনার বিরুদ্ধে কেন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার সন্তোষজনক জবাব আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
ওই সড়কেই সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ডেন্স কার্পেটিং উন্নয়নের কথা থাকলেও বিভিন্ন সাইজের চারটি পাথরের মিশ্রণ যথাযথভাবে করা হয়নি। অনিয়মের অভিযোগে চলমান কাজ বন্ধ করে দেয়া চার কিলোমিটারের পুরো ১৯০০ মিটার অংশের সড়কের উপরে এব্রোথেব্রো ভাবে করা কার্পেটিং কাজে বড় বড় পাথর দেখা গেছে।
চারটি পাথরের মিশ্রণে ডেন্স কার্পেটিং এর সড়ক হওয়ার কথা মসৃণ। কার্পেটিং করণের পর ওই সড়কে বহু জায়গায় ঘাষ ফুটে উঠেছে। নিয়ম মেনে করা হয়নি মাটির কাজ। রাস্তার দুই পাশে দুই ফুট করে সোল্ডার বাধার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় সোল্ডারে এক ফুট করেও মাটি নেই।
সড়কের শুরুতে শ্রীনগর বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ রাস্তায় ময়লা আবর্জনা পরিস্কার না করে এবং প্রাইমকোট (কোরোসিন-বিটুমিন মিশ্রিত আস্তর) না করে কার্পেটিং কাজ করা হয়েছে।
শ্রীনগর বাজারের ব্যবসায়ী হাওলাদার স্টোরের আবুল খায়ের বলেন, যে ভাবে রাস্তার কাজ করেছে তাতে এ বর্ষা গেলে আর রাস্তা থাকবে না। এ লাকার জলিল মাস্টার বলেন, শুনেছি রাস্তার মাঝ খানে অনিয়ম হয়েছে তাই কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমীন বলেন, কাজ বন্ধ হওয়ার পর বড় স্যারেরা পরিদর্শনে আসার খবর পেয়ে ঠিকাদারের লোকজন দু’দিন পর বাজারের অংশ (২০০) ফুট উপর থেকে আবারও গুড়া পাথর ও বিটুমিন দিয়ে (সিলকোট করা হয়েছে) নিচের কাজ ঢেকে দিয়েছে।
প্রকল্পের আওয়তায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাকেরগঞ্জ-মির্জাগঞ্জ-বরগুনা মহাসড়কের পশ্চিম সুবিদখালী সিরাজ ইলেক্ট্রিসিয়ান বাড়ী ওয়াপদা রোড ভায়া ব্যাপারী বাড়ী রোডের খালে প্রায় ৪৮ লাখ টাকা ব্যায়ে ৩টি কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স লিংক ট্রেডার্স।
দুই বছর আগে একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হলেও তার অ্যাপ্রোচ সড়ক করা হয়নি। যে কারনে জনসাধারনের কাজেই আসছে না কালভার্টটি। ওই সড়কের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে জনসাধারন। এলাকাবাসীর অভিযোগ দুই বছর আগে কালভার্ট নির্মাণ করে দু’পাশের সংযোগ না করায় নিজেরা কাঠের পাটাতন দিয়ে চলাচল করছেন। কোমলমতি শিশুরা স্কুলে যাওয়া-আসা বিপদজনক।
এলাকাবাসীরা জানান, সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। রাস্তায় কাজ চলে কিন্তু অফিসের কোন লোকজন থাকে না। মাঝে মধ্যে দেখা গেলেও এসে আবার কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়।
অনিয়মের ব্যাপারে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফ হোসেন জানান, এসব ঘটনায় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শোকজ ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এইচকেআর
