ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
  • ‘মব জাস্টিস’ মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে : তারেক রহমান বৃহস্পতিবার শুরু এইচএসসি পরীক্ষা, অংশ নিচ্ছে ১২ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী হাসিনার সেই ‘৪০০ কোটি টাকার’ পিয়নের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট-সঞ্চয়পত্র ফ্রিজ একজন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, একমত বিএনপি পৃথিবীর সর্বনাশের জন্য আমরা আসামি : প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই: ফয়জুল করীম আইএমএফের অর্থছাড়: ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো রিজার্ভ বাকেরগঞ্জের কারখানা নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, আতঙ্কে গ্রাম ছাড়চ্ছেন মানুষ পন্টুনের ধাক্কায় ট্রলার থেকে ছিটকে নদীতে, জেলে নিখোঁজ
  • কলাপাড়ায় এক ‘আসমানী ’র জীবন সংগ্রাম

    কলাপাড়ায় এক ‘আসমানী ’র জীবন সংগ্রাম
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও , রহিমুদ্দির ছোট্র বাড়ী রসুলপুরে যাও।’ ‘পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের অমর লেখা আসমানী কবিতায় তিনি যে আসমানীকে তুলে ধরে ছিলেন, সেই আসমানী আজ বেঁচে নেই। 

    তবে কলাপাড়া উপজেলা নীলগঞ্জ ইউনিয়নে প্রত্যন্ত রহমতপুর গ্রামে আবেজান যেন তারই প্রতিচ্ছবি। আবেজানের থাকার যেন কবির আসমানীর ঘরকে ও হার মানায়। হাওয়ায় নড়বড় করা আবেজানের ঘরটিতে রয়েছে আগুন লাগার ঝুঁকি, রয়েছে পোকা-মাকড়ের - সাপেরভয়। কবির আসমানীর তার পরিবারের সাথে থাকলেও কলাপাড়ার আসমানীর জরাজীর্ণ ও ভাঙা ঝুপড়ি ঘরে বৃদ্ধ মা আর চার মেয়েকে নিয়ে আবেজানের দম্পতির বসবাস।

    ওপরে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে ও ছেড়া কাঁথার বেড়া,কাঠ চাপা দিয়ে ঝুপড়ি ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির বসবাস। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও দেখার যেন কেউ নেই তাদের। ঘরটিতে পলিথিনের ছাউনি থাকলেও বড় বড় ছিদ্র হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ, ভাঙা, ঘরের চালে বড় বড় ছিদ্র ও বেড়ার অবস্থা একেবারেই নড়বড়, লক্কর-ঝক্কর ঝুপড়ি ঘরে মারাত্মক দুর্ভোগের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই দম্পত্তি। রোদে শুকিয়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করেন ওই ভাঙা ঘরে। বিশেষ করে বর্ষাকালে একেবারেই স্যাঁত -স্যাঁতে হয়ে উঠে ঘরটি তারপর ও থাকতে হয় আবেজানের।

    ঘরের এমনই অবস্থা যে, ভেতরে ঢুকতে হলে হামাগুড়ি না খেয়ে ঢোকার কোনো উপায় নেই। বৃষ্টি হলে পানিতে সয়লাব হয়ে যায় ঘরের মেঝে। ঘরের ভেতর দিনের বেলাও পৌঁছে না সূর্যের আলো। এ অবস্থাতেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি কোনো সহযোগীতা।

    ঘরে শয্যাশায়ী শাসকষ্টে আক্রান্ত ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মা। চার মেয়ের মধ্যে ১৪ বছর বয়সী কিশোরী রিয়ামনি মানসিক ভারসাম্যহীন। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও। বেড়িবাঁধের বাইরে খড়কুটা দিয়ে যে আবাসস্থল গড়েছিলেন তাও হারিয়েছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগে। তাই পলিথিনের ছাউনির নিচে মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েকে বেঁধে রেখে বেরিয়ে পড়েন ঝিয়ের কাজে। আর মাঝে মধ্যে খাবার যোগাতে ব্যর্থ হলে সেদিন অনাহারে থেকেই কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েন সন্তানেরা। তাই বেঁচে থাকার ক্ষীণ আশাটুকু নিয়ে ঠিক এভাবেই চলছে এক স্বামী পরিত্যক্তার জীবন সংসার।

    আবেজান বিবি অসহায় গরিব জেলে পরিবারের সন্তান হওয়ায় একাধিক কন্যাসহ ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়েছেন স্বামী। আর বাবা মজিদ মিয়া জেলে পেশায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় রোগাক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ছেড়েছেন প্রায় দুই যুগ আগে। স্বামী পরিত্যক্তা এই নারীর বসবাস উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নে প্রত্যন্ত রহমতপুর গ্রামে সরকারি জমিতে তোলা মায়ের ঘরের বারান্দায় ।

    গত কয়েক বছর ধরে কোথাও মাথা গোঁজার ঠাই না পেয়ে চার মেয়েকে নিয়ে ওই বারান্দায় পলিথিনের ছাউনি দিয়ে গড়ে তুলেছেন আবাসস্থল। সেখান থেকেই অসুস্থ মায়ের দেখভাল করাসহ কন্যাদের আহার যোগাতে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তবে ঝিয়ের কাজ করে উচ্ছিষ্ট খাবার সংগ্রহে ব্যর্থ হলে সেদিন অনাহারে থেকেই কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়ে পরিবারের সব চেয়ে ছোট মেয়ে ৩ বছর বয়সী জান্নাতি।

    আর মানুষের বাড়িতে ঘামঝড়ানো কষ্টার্জিত যৎসামান্য অর্থও খরচ করতে হয় মায়ের চিকিৎসা ব্যয়ে। তবুও পরম মমতায় পরিবারকে আগলে রাখার অদম্য চেষ্টায় সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন আবেজান বিবি।

    সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা, মেলে এ অসহায় পরিবারটির করুণ চিত্র। মা আবেজান বিবি পরিবারের জীবিকার তাগিদে বেড়িয়েছেন অন্যের বাড়ির কাজে। দুপুর গড়িয়ে গেলেও মেয়েদের খাবারের কোনো হদিস নেই। তাই কৌটা কুড়িয়ে কাঁচা চাল চিবিয়ে খাচ্ছে মানসিক অসুস্থ মেয়ে রিয়ামনি। আর পলিথিনে মোড়ানো ছাউনি ঘরের ছোট্র রানী জান্নাতি মায়াভরা দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে মায়ের অপেক্ষায়। কিছ‍ুসময় অপেক্ষার পর আঁচলে পোটলা নিয়ে ঘরে ছুটে আসেন আবেজান।

    জানতে চাইলে অবর্ণনীয় কষ্টের কথা তুলে ধরে কাঁন্না জুড়ে দেন তিনি। জানালেন বাবা হারা, স্বামী হারা সংসারে অসুস্থ মা এবং পাগলি মেয়েসহ চার মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামের কথা। মা আমেনা বেগম শয্যাশায়ী প্রায় ২০ বছর ধরে।

    সংসারের অভাব আর একাধিক কন্যা জন্ম নেয়ায় স্বামীও ফেলে গেছেন। আর বাবার মৃত্যুর আগে সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে একমাত্র ভাইয়েরও সলিল সমাধি হয়েছে। তাই পরিবারে উপার্জানক্ষম কেউ নেই। যে ঘরটুকু ছিল রাস্তার পাশে তাও দুর্যোগে হারিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে মায়ের সরকারি ঘরের বারান্দায় পলিথিনের ছাউনি দিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ছাউনিতে বেড়া না থাকায় পাগলি মেয়েসহ কিশোরী মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। সরকারিভাবে কোনো ঘর তিনি পাননি। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না বলেও কপালে চিন্তার ভাঁজ।

    মা আমেনার দাবি, তার মৃত্যুর আগে মেয়ে আবেজান আর নাতনিদের জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা যেন করেন আল্লাহতায়লা।

    নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া জানান, আমি তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে অনেক জমা দিয়েছি। তার মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে যাচাবাচাই করে আবার তালিকা তৈরি করেছেন।

    কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, আবেজান বিবির কথা কেউ আমাকে অবহিত করেনি। তাকে ঘর দেয়ার জন্য অবশ্যই ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া যতটুকু সম্ভব সাহায্য সহযোগীতা করার চেষ্টা করা হবে।
     


    মো. এনামুল হক/ এইচকেআর 
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ