ঢাকা শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

Motobad news

বিপিএলে তরুণদের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ সাবেকরা

বিপিএলে তরুণদের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ সাবেকরা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মান সম্পর্কে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সাকিব আল হাসান বলেছিলেন ‘একেবারে যা-তা’। শুরুর দিকে অদ্ভুতুড়ে ‘এডিআরএস’ নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। এমনকি অভাব ছিল মানসম্মত বিদেশী ক্রিকেটারেরও।

তবে আসর মাঝপ্থে পৌঁছানোর আগেই পাকিস্তান জাতীয় দলের একঝাঁক ক্রিকেটার এসে বাড়িয়েছেন বিপিএলের রোশনাই। আর শেষটায় তো স্যাম বিলিংস, মঈন আলী, সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেল সহ টি-টোয়েন্টির অনেক তারকাই অন্তত এক ম্যাচ হলেও খেলেছেন বিপিএলে।

গোটা আসরে বৃষ্টি বা অন্য কোন বাধায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি কোন ম্যাচ, শেষ দিকে দর্শকও জমেছে বেশ। সব মিলিয়ে শুরুটা ঢিমে তালে হলেও শেষটা খারাপ হয়নি বিপিএলের নবম আসরে। তারকা ক্রিকেটারদের পাশাপাশি এই আসরে ভাল করেছেন বেশ ক’জন উঠতি তরুণ যাদের ব্যাটিং–বোলিং মুগ্ধ করেছে সাবেক ক্রিকেটারদের।

রংপুর রাইডার্সের বোলিং কোচ ছিলেন তারেক আজিজ খান। আসরের অন্যতম তারকাবহুল দল ছিল রংপুর, তবে এই তারকাদের ভীড়েও হাসান মাহমুদের বোলিংটা নজর কেড়েছে তার, 'হাসান মাহমুদ জাতীয় দলে খেলেছে এরই মধ্যে, তার মানে সর্বোচ্চ পর্যায়েই খেলেছে। তবে সেই তুলনায় তার মনের জোরটা একটু কম। তাকে যদি আরও ভাল কোচিংয়ের আওতায় আনা যায় তাহলে তার মানসিক দৃঢ়তা আরও বাড়বে। তার বলে গতি আছে, নিয়ন্ত্রণ আছে। তাসকিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে হাসান যদি তার সেরা বোলিংটা করতে পারে তাহলে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে রান করা যে কোন দলের জন্যই কঠিন হবে।'

১৪ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হাসান, তার চেয়ে ২ ম্যাচ কম খেলে সমান উইকেট স্পিনার তানভির ইসলামের। তারেক দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, এবার উইকেট ভাল থাকায় বোলারদের কাজটা ছিল আরও কঠিন, ‘আমাদের বোলারদের জন্য এবার বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল বিপিএল, উইকেট অনেক ভাল ছিল। বোলাররা কঠিন সময়গুলোতে বল করেছে, চাপের মুখে তাদের পারফরম্যান্স কেমন হয় সেটা দেখা গেছে।’

হাসান মাহমুদ ছিলেন তারেক আজিজের দলে। কাছ থেকে তাকে দেখেছেন, সেই সঙ্গে প্রতিপক্ষের তানভির ইসলাম, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ’র বোলিংয়েও মুগ্ধ হয়েছে এই সাবেক পেসার। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বোলার মুস্তাফিজুর রহমানের এবারের বিপিএলে পারফরম্যান্সে খুব একটা ঝলক নেই, ১০ ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইকেট।

তবে তারেক আজিজ মনে করেন উইকেটের সংখ্যাই সব নয়, ‘মোস্তাফিজ উইকেট বেশি না পেলেও বোলিং ভাল করেছে। ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তার বোলিংয়ের যে দিকটা সবচেয়ে কার্যকর সেই কাটারগুলো ভাল ল্যান্ড করাতে পেরেছে।’

শরীফুল ইসলাম অল্প ম্যাচ খেললেও নজর কেড়েছেন তারেকের, তবে তাকে হতাশ করেছেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি, ‘মৃত্যুঞ্জয়কে আমার কাছে খুব প্রতিশ্রুতিশীল মনে হয়েছিল, তবে এই বিপিএলটা তার খুব ভাল কাটেনি। ওর দলটাও ভাল করেনি।’

সিলেট স্ট্রাইকার্সের প্রধান কোচ ছিলেন রাজিন সালেহ। সাবেক এই ওয়ানডে অধিনায়ক দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তৌহিদ হৃদয় আর জাকির হাসানের কাছ থেকে আশাতীত পারফরম্যান্স পেয়েছেন বিপিএলে, ‘তৌহিদ হৃদয়কে আমি এইচপি ও এ দলে দেখেছি। তবে সত্যি বলতে ও এতটা ভাল করবে সেটা আমি আশা করিনি। বিশেষ করে জাকিরের কাছ থেকে। নিলামে যখন ওর নাম আসল, তখন সবাই পাস করে যাচ্ছিল। যেহেতু টেস্টে শতরান করেছে সবাই ভেবেছে সে বোধহয় টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটার না। আমি বলেই ওকে দলে নেই, ওর কাছ থেকে আমরা অপ্রত্যাশিত সার্ভিস পেয়েছি। সিলেট স্ট্রাইকার্সের টপ অর্ডারে নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসান, মুশফিকুর রহিম ওরাই বেশিভাগ রান করেছে যেখানে অন্য দলগুলো ছিল অনেকটাই বিদেশী নির্ভর।’

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে শেষ পর্যন্ত এবার পুঁজির কাছে হার মানতে হয়েছে সবাইকে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের চেয়ারপারসন নাফিসা কামাল ফাইনালের ট্রফি হাতে সংবাদ সম্মেলনে এসে স্পষ্টই বলেছেন, ‘আমরা ১৫-২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করি।এখন রাসেল, নারাইনদের মতো ক্রিকেটাররা আমাদের দলে খেলেন।’

সেই জায়গায় মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘আমরা খুব সীমাবদ্ধ বাজেটের ভেতর একটা দল করেছি, আমাদের দল মালিকের আর্থিক সামর্থ্য অনেক উঁচু নয়।’

সেই ঘাটতিটা দূর করতেই রাজিন চেয়েছেন দেশীয় ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ভাল পারফরম্যান্স বের করে আনতে, যে কাজটায় তিনি অনেকটাই সফল, ‘আমরা শুরু থেকেই চেয়েছিলাম ভবিষ্যতের ক্রিকেটার বের করে আনতে। ফ্র্যাঞ্চাইজির নামই তো ফিউচার স্পোর্টস। আমরা দূরের কথা ভেবেছি। আমি দ্বিধাহীন ভাবেই বলতে পারি, সিলেট স্ট্রাইকার্স থেকেই তৌহিদ হৃদয়, রেজাউর রহমান রাজা, জাকির হাসান,তানজিম হাসান সাকিব…এরকম অনেক ক্রিকেটারই আগামীতে বাংলাদেশের ক্রিকেটে নিজেদের জায়গা করে নেবে।’

তরুণদের ভাল করার বিপিএলে তামিম ইকবালের ব্যর্থতাটা বড্ড চোখে লেগেছে রাজিনের, ‘তামিম বরাবরই বিপিএলের খুব নিয়মিত পারফরমার। সব আসরেই সে ভাল খেলে। এবার তামিম খুব একটা রান করেনি, তার দল খুলনাও খুব একটা ভাল করেনি। তামিমের ব্যাটিং আমাকে খানিকটা হতাশ করেছে। ইয়াসির রাব্বিও বিপিএলে ভাল করে, সেও ভাল করতে পারেনি।’

বিপিএল মানেই একটা সময় ছিল বিতর্ক। পারিশ্রমিক বকেয়া থাকা, ম্যাচ পাতানো, আম্পায়ারিং বিতর্ক সহ অনেক কিছুর কালো ছায়াই ঘিরে থাকত বিপিএলকে। এবার বিপিএলে শুরুর দিকের এডিআরএস বিতর্ক আর বিদেশী ক্রিকেটারদের আশা যাওয়ার মিছিল বাদ দিলে আসরটা উপভোগ্যই হয়েছে। দুটো ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে চারশ’র উপর রান হয়েছে, শতরান হয়েছে ৪টি। মুগ্ধ ইনিংসে ৫ উইকেটও পেয়েছেন। সব মিলিয়ে শুরুতে একটু তালগোল পাকালেও শেষটা ভালই হয়েছে বিপিএলের।

বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও বিপিএল শেষে প্রাণখোলা হাসি হেসেই বলেছেন, ‘আমাদের দেশীয় খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে যে একটা টুর্নামেন্ট কত ভালো হতে পারে কত জমজমাট হতে পারে এবং এ দেশের মানুষ তাদেরকে কতটা সাপোর্ট করতে পারে এটা এই প্রথম দেখলাম।’

একই সঙ্গে হয়তো টি-টোয়েন্টি দলে ফেরার শেষ সুযোগটাও হারিয়ে ফেললেন মাহমুদউল্লাহ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকা মাশরাফী, আন্তর্জাতিক টি-২০কে বিদায় বলা তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমও খারাপ করেননি বিপিএলে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ আলাদা কোন ছাপ রাখতে পারেননি কোনভাবেই। ১৩ ম্যাচের ১২ ইনিংসে ২০৮ রান, গড় বিশের একটু বেশি আর স্ট্রাইক রেট ১৩০ এর ঘরে। ভুলে যাবার মত একটা আসর কাটিয়ে মাহমুদউল্লাহ আরো দূরে সরে গেলেন আন্তর্জাতিক টি-২০ থেকে।


এএজে
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন