ঢাকা শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

Motobad news

পাওয়ার হিটিংয়ে কি জুলিয়ান তত্ত্ব আয়ত্ত করবেন আফিফরা?

পাওয়ার হিটিংয়ে কি জুলিয়ান তত্ত্ব আয়ত্ত করবেন আফিফরা?
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোচ হিসেবে বিশ্বজুড়ে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে জুলিয়ান রস উডের। বিশেষ করে পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে সবার নজর কেড়েছেন তিনি। মূলত ক্রিকেটের সঙ্গে বেস বলের হিট মিলিয়ে কৌশলের সংমিশ্রণে তিনি বের করেছেন পাওয়ার হিটিংয়ের কৌশল। 

বাংলাদেশ ক্রিকেটে জুলিয়ান পরিচিত হন বিপিএলের অষ্টম আসরে। তাকে ইংল‌্যান্ড থেকে উড়িয়ে এনেছিল সিলেট সানরাইজার্স। সেবার মিঠুন, এনামুলদের নিয়ে নিবিড় কাজ করেছেন তিনি। তাতে দুজনই উপকৃত হয়েছেন বলে নানা সময়ে গণমাধ‌্যমে বলেছেন। এবার তাকে প্রধান কোচ করে বিপিএলে যুক্ত করেছে চট্টগ্রাম চ‌্যালেঞ্জার্স। যেখানে জাতীয় দলে খেলা আফিফ হোসেন খেলছেন। 

পাওয়ার হিটিং নিয়ে জুলিয়ানের তত্ত্ব বেশ চমকপ্রদ। শরীরের পজিশন, ভারসাম‌্য, পায়ের পজিশন, রিস্ট পজিশন, ব‌্যাট স্পিড, হ‌্যান্ড স্পিড সম্পর্কযুক্ত। যা ক্রিকেটে প্রথাগত কৌশলের সঙ্গে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। যেখানে তিনি যুক্ত করেছেন বৈজ্ঞানিক ও পদ্ধতিগত ক্রিকেট কোচিংও।

কিন্তু সেসব কি ছোটখাটো গড়নের আফিফের জন‌্য খাটে? ধারণা করা হয়, যাদের পেশিশক্তি আছে তারাই কেবল পাওয়ার হিটিংয়ে পারদর্শী। যে কোনো বোলিং আক্রমণ তারা এলোমেলো করে দিতে পারেন। কিন্তু জুলিয়ান তত্ত্বে পাওয়ার হিটিংয়ে শরীরের পেশিশক্তি বাধ‌্যতামূলক নয়। বরং টাইমিং, শট নির্বাচন, পরিস্থিতি বিবেচনা, শরীরের ভারসাম‌্য, স্কিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। সেসব মানলে আফিফও ভালোমানের পাওয়ার হিটার হতে পারবেন বলে বিশ্বাস জুলিয়ানের। 

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদে বৃহস্পতিবার অনুশীলন করেছে স্বাগতিক দল। আফিফ, শুভাগত হোমরা বিদেশি উসমান খান, ম‌্যাক্স ও’ডাউডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শট খেলেছেন। আগ্রাসী ছিল প্রত‌্যেকের ব‌্যাটিং। তাতে বোঝা গেছে ব‌্যাটিংয়ে ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে কোচের পক্ষ থেকে। অস্বীকার করেননি জুলিয়ান। 

তিনি বলেছেন, ‘আমি শুধু তাদের মাঠে নেমে, মন খুলে স্বাধীনতা নিয়ে, কোনো ভয় না পেয়ে খেলার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করছি। আমি চাই মাঠে নেমে ইতিবাচক ব্যাটিং করবে। এতে আউট হয়ে গেলেও সমস্যা নেই। আমি কিছু বলবো না। কিন্তু উইকেটে গিয়ে ব্লক করে করে বল নষ্ট করলে তা মেনে নেওয়া হবে না। আমি চেষ্টা করছি তাদেরকে নিজের মতো খেলতে দিতে।’

জুলিয়ানের এ স্বাধীনতায় চট্টগ্রাম ঢাকার শেষ ম‌্যাচে জয় পেয়েছে। খুলনার দেওয়া ১৭৪ রানের লক্ষ‌্য পেরিয়ে গেছে ৯ উইকেট হাতে রেখে। যেখানে সেঞ্চুরি পেয়েছেন উসমান খান। ফিফটি হাঁকিয়েছেন ম‌্যাক্স ও’ডাউড। জুলিয়ান সেই কথাই বলেছেন গণমাধ‌্যমে, ‘এতে (স্বাধীনতা) কী হতে পারে তা সেদিন আমরা দেখেছি। উসমানকে আমরা স্বাধীনতা দিয়েছি এবং সে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছে। ব্যাটিংয়ে আপনি ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ম্যাচ জিততে পারেন। বোলারদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। তো ব্যাটসম্যানদের বলা আছে, যে কেউ গিয়ে ম্যাচ জিতে আসলেই হবে। এমনকি ১০ বল পেলেও ৩০ রান করে ফেলো। সেটিই দুর্দান্ত হবে।’

তবে প্রত‌্যেক ক্রিকেটার আলাদা। তাদের মেধা আলাদা, সামর্থ্য আলাদা। ভাবনাও আলাদা। উসমান যেমন পাওয়ার হিটার। আফিফ পাঞ্চহিটার। তবে তাদের দুজনের স্কিল এক, দুজনই প্রতিশ্রুতিশীল। তাই আফিফের পক্ষেও উসমানের মতো সেঞ্চুরির ইনিংস খেলা সম্ভব বলে মনে করছেন জুলিয়ান, ‘আফিফ একজন পরিপূর্ণ ক্রিকেটার। তার শক্তির জায়গায় থেকেই তার খেলা উচিত। পাওয়ার হিটিংয়ের বিষয়টি ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে। সে পাওয়ার হিটার নয়। সে মূলত একজন পাঞ্চার। আপনার কাছে হিটিং পাওয়ারসমৃদ্ধ ক্রিকেটার যেমন উসমান থাকতে পারে। আবার আফিফের মধ্যে আছে স্কিল ও টাচসহ পাঞ্চিং পাওয়ার। উসমানের তুলনায় আফিফ বেশি স্কিলফুল। উসমান হলো পাওয়ারফুল। আমি বিশ্বাস করি আফিফের পাওয়ার ও স্কিলের দারুণ ভারসাম্য রয়েছে।’

আফিফকে নিজের সামর্থ্য বুঝে এগিয়ে যাওয়ার তাড়না দিয়েছেন জুলিয়ান, ‘আফিফের দিকে দেখেন, তারা বড় না। তারা ছন্দ ও টাইমিংয়ের ওপর নির্ভর করে। তারাও বল জোরে মারতে পারে, কিন্তু মুভমেন্টে তাদের ছন্দ ও টাইমিং দরকার হয়। বড় ক্রিকেটাররা পেশি ব্যবহার করে। তারা পারবে না, যদি করতে যায় কাজ হবে না। এটা আসলে বুঝতে পারার ব্যাপার কীভাবে তাদের শরীর কাজ করে বল মারার সময়। যখন এটা হবে তাদের, আমি কিছু ট্রেনিং ও ড্রিলও করাচ্ছি। কিন্তু এটা শুধুই অনুশীলনের একটা ধরন। কিন্তু বুঝতে হবে কীভাবে তাদের শরীর কাজ করে বল মারার সময়। ’

গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে জুলিয়ানকে জাতীয় দলের জন‌্য নিয়োগ দেওয়ার ব‌্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। সেই আলোচনা আলোর মুখ দেখেনি। তবে এখন কাজ করার আগ্রহ আছে জুলিয়ানের, ‘কথা (আলোচনা-গসিপ) ছিল। বিশ্বকাপের আগে কথা হচ্ছিল। আমি পাকিস্তানে পিসিবির হয়ে কাজ করছিলাম। তখন কথাবার্তা হচ্ছিল, আমার সঙ্গে না যদিও, তবে লোকজনের সঙ্গে বলছিল আমাকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে। যদিও পরে কিছুই হয়নি। এটা এমন একটা ব্যাপার গত এক বছর ধরে আলাপ হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু কিছুই হয়নি। আমি এখানে আছি, অ্যাভেইলেবল।’

চট্টগ্রাম বিপিএলে দুই ম‌্যাচে একটি জিতেছে, একটি হেরেছে। চট্টগ্রাম পর্বে তারা খেলবে চার ম‌্যাচ। এখানে চার ম‌্যাচই জিততে চান জুলিয়ান। নিজের দল নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসীও এ ইংলিশ কোচ। সঙ্গে দলের সমন্বয় ও বন্ধন বেশ ভালো বলেও মন্তব‌্য করেছেন, ‘এখানে সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো দলের মধ্যে কোনো অহংবোধ নেই। আমার মতে, স্বল্প পরিচিত বা অপরিচিত ক্রিকেটারদের জন্য এটি (বিপিএল) দারুণ মঞ্চ। যেমন উসমান খানকে তেমন কেউই চিনতো না। সে এসেছে এবং সেঞ্চুরি করে ফেলেছে। সে যেভাবে খেলেছে তা রোমাঞ্চকর। তবে আমি বলছি না যে প্রতিদিনই সে এমনটা করবে। কারণ এভাবে খেলায় অনেক ঝুঁকি রয়েছে। তবে বেশিরভাগ দিন যদি সে সফল হয় তাহলে তা প্রতিপক্ষের মনে ভয় ধরাবে, দলকে জয়ের অবস্থায় নিয়ে যাবে। যেমনটা গত ম্যাচে হয়েছে। আমাদের আরও খেলোয়াড় রয়েছে যারা এখনও ব্যাটিং করেনি।’


এএজে
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন