ঢাকা রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫

Motobad news

বাড়াবাড়ি করলে খবর আছে : ওবায়দুল কাদের

বাড়াবাড়ি করলে খবর আছে : ওবায়দুল কাদের
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সরকার পতনের হাঁকডাক দিয়ে কোনো লাভ নেই। অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সমাবেশে কেউ বাধা দেবে না। তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে আবারও বলতে চাই, আসুন পরবর্তী নির্বাচনে। ফখরুল সাহেব গতকাল (বুধবার) বলেছেন সরকারকে নিরাপদ প্রস্থান নিতে। আমি বলতে চাই, নিরাপদ প্রস্থানের একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনেই প্রমাণ হবে কারা বিজয়ী হবে, আর কাদের পতন হবে। এরপরও বাড়াবাড়ি করলে, লাফালাফি করলে খবর আছে।’

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের পৌরপার্কের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘অপেক্ষা করুন। নির্বাচনে খেলা হবে। ডিসেম্বরে খেলা হবে। বিএনপির আগুন আর লাঠির বিরুদ্ধে খেলা হবে। আগুন আর লাঠি নিয়ে এলে খেলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে, ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে খেলা হবে।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উনারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বচ্ছন্দবোধ করছেন না। ফখরুলের মুখে মধু আর অন্তরে বিষ। এরই নাম ফখরুল। ফখরুল সাহেব, অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আপনাদের মিটিংয়ে কেউ বাধা দেবে না। আমরা রাজশাহীতেও বলে দিয়েছি, সেখানে যেন পরিবহন ধর্মঘট না করে। ঢাকায়ও পরিবহন ধর্মঘট হবে না, নেত্রী বলে দিয়েছেন।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল এখন নাটক শুরু করছেন। নাটক কী? কোথাও সমাবেশ দিলে সাত দিন আগে থেকে প্রচার করে, মিথ্যাচার করে যে, বাধা দেওয়া হচ্ছে। সরকার বাধা দিচ্ছে। আর কাঁথা-বালিশ-হাঁড়ি-পাতিল...তারপরে চালের বস্তা, টাকার বস্তা আর মশার কয়েল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসে। কুমিল্লাতে তো কেউ বাধা দেয়নি।’

ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পরেও যদি বাড়াবাড়ি করেন, লাফালাফি করেন, আগুন নিয়ে নামেন, লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে মাঠে নামেন, তাহলে খবর আছে। খেলা হবে দারুণ। পাল্টাপাল্টি আমরা করব না। আমরা শান্তি চাই। আমরা ক্ষমতায় আছি। ক্ষমতায় থেকে আমরা অশান্তি কেন করব? মানুষকে কেন আতঙ্কে রাখব? আমরা তো মানুষকে শান্তিতে রাখতে চাই। আমরা ক্ষমতায় আছি। অশান্তি হলে তো সেখানে মাথা ঘামাতে হবে।’ 

বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিশ্বের কি অবস্থা। যুদ্ধের জন্য, নিষেধাজ্ঞার জন্য আমরা আজকে একটু বিপদে আছি। মানুষ কষ্টে আছে। অভাবী মানুষ, সাধারণ মানুষ, স্বল্প আয়ের মানুষ কষ্টে আছে। এটা শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেন। চেষ্টা করছেন তিনি। এখনও বাংলাদেশে সোমালিয়া-সুদানের মতো দুর্ভিক্ষ হয়নি। এখনও আমরা অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছি। শেখ হাসিনা ভালো থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারেক লন্ডনে বসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তাই তারেকের হাওয়া ভবনের অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে খেলা হবে। সারা বাংলাদেশ থেকে কত টাকা পাচার করা হয়েছে, শেখ হাসিনা তা খতিয়ে দেখছেন। সব টাকা উদ্ধার করা হবে। টাকা পাচারকারী তারেক রহমানসহ যারাই আছে, প্রত্যেকের টাকা উদ্ধার করা হবে।‘

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো এত সৎ মানুষ ১৯৭৫-এর পর আর আসেনি। এত সাহসী রাজনীতিবিদ আর একজনও আসেনি। এই বাংলায় তার মতো ত্যাগী, বিচক্ষণ, দক্ষ প্রশাসক আর একজনও আসেনি। আমাদের নেত্রীকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। যত দিন আছে শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ।’

প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি বলেছেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এ দলের সৃষ্টি হলো ক্যান্টনমেন্টে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সংবিধানকে হত্যা করেছে। জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়ে হত্যার রাজনীতি শুরু করেছিল। 

তিনি আরও বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। বেশি পাগলামি করলে পাবনায় পাগলা গারদে অথবা পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা ঐক্যবদ্ধ। তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো শক্তিই আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে পারবে না।

গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, এসএম কামাল হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, নারী আসন-২৫-এর এমপি নার্গিস রহমান বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি কমিটি ঘোষণা করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে মাহাবুব আলী খান ও জিএম সাহাব উদ্দিন আজমকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি, কাজী লিয়াকত আলী লেকুকে সভাপতি ও আবু সিদ্দিক সিকদারকে সাধারণ সম্পাদক করে সদর উপজেলা কমিটি এবং গোলাম কবিরকে সভাপতি ও আলীমুজ্জামান বিটুকে সাধারণ সম্পাদক করে পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি।

এর আগে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল থেকে নেতাকর্মী-সমর্থক ও বঙ্গবন্ধুপ্রেমীরা মিছিলসহকারে সভাস্থলে আসেন। সম্মেলন শুরুর আগেই সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে জনস্রোত বঙ্গবন্ধু সড়ক ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ব্যানার আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো গোপালগঞ্জ শহর। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলাজুড়ে নেওয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এর আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ বেদিতে ফুল দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। পরে তিনি সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে অ্যাডমিন ভবনে পরিদর্শন বইতে মন্তব্য লিখে স্বাক্ষর করেন। এ সময় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, এসএম কামাল হোসেন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ, টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুলসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


এএজে
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন