ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news

ভিটামিন ডির ঘাটতি ৭০ শতাংশ নারীর

ভিটামিন ডির ঘাটতি ৭০ শতাংশ নারীর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

দেশে শিশু ও নারীরা উল্লেখযোগ্য হারে একাধিক অনুপুষ্টিকণা বা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতিতে ভুগছেন। এর মধ্যে সিংহভাগ নারী ভিটামিন ডির স্বল্পতায় ভুগছেন। এ ছাড়া নারীদের মধ্যে জিঙ্ক, আয়োডিন, ফোলেট এবং আয়রনের ঘাটতিও দেখা গেছে।

‘দ্বিতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১৯-২০-এর ফলাফল’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই তথ্য উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের জাতীয় পুষ্টিসেবা (এনএনএস) এবং আইসিডিডিআরবি যৌথভাবে গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ওই সেমিনারের আয়োজন করে। জাতীয় পুষ্টিসেবার সঙ্গে এই সেমিনারের সহআয়োজক ছিল দ্য গ্লোবাল হেলথ নেটওয়ার্ক-এশিয়া।

সেমিনারে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ড. আলিয়া নাহিদ। এতে জানানো হয়, গর্ভবতী নন অথবা সন্তানকে বুকের দুধ দিচ্ছেন না- এমন নারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ভিটামিন ডির স্বল্পতায় ভুগছেন। এ ধরনের নারীদের মধ্যে জিঙ্কের ঘাটতি দেখা গেছে ৪৩ শতাংশের, আয়োডিনের ঘাটতি রয়েছে ৩০ শতাংশের, ফোলেটের ঘাটতি রয়েছে ২৯ শতাংশের এবং আয়রনের ঘাটতি রয়েছে ১৪ শতাংশের। এ ছাড়া ২০ শতাংশ নারী ভিটামিন বি-১২ স্বল্পতা এবং ৭ শতাংশ নারী স্বল্পমাত্রায় ভিটামিন এ-এর স্বল্পতায় ভুগছেন।

মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা অনুপুষ্টিকণা হলো ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান, যেগুলো আমাদের শরীরে স্বল্পমাত্রায় প্রয়োজন হয়। স্বল্পমাত্রায় প্রয়োজন হলেও অনুপুষ্টিকণাগুলো শরীর গঠনে এবং সুস্থতার জন্য অপরিহার্য উপাদান। অতি ক্ষুদ্র এই উপাদানগুলো শরীরে প্রয়োজনীয় এনজাইম, হরমোন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরিতে সহায়তা করে।

সেমিনারে বলা হয়, পাঁচ মাস বয়স থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশু এবং ১৫-৪৯ বছর বয়সী গর্ভবতী নন অথবা যারা শিশুকে বুকের দুধ দিচ্ছেন না- এমন নারীদের ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, জিঙ্ক, ফেরিটিন, আয়োডিন এবং অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা জানার জন্য বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার্ভে ২০১৯-২০২০ পরিচালনা করা হয়। জরিপের সময় এই নারীদের ভিটামিন বি-১২ এবং ফোলেটও পরিমাপ করা হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের আট বিভাগের ২৫০টি উপজেলায় জরিপটি পরিচালনা করে আইসিডিডিআরবি।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, গর্ভবতী নন অথবা যারা শিশুকে বুকের দুধ দিচ্ছেন না, এমন নারীদের এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাব রয়েছে। এর মধ্যে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের খনিজ উপাদানের ঘাটতির মধ্যে জিঙ্ক ৩১ শতাংশ, আয়োডিন ২০ শতাংশ এবং আয়রনের ঘাটতি রয়েছে ১৫ শতাংশের। ভিটামিনের ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে ২২ শতাংশ ভিটামিন ডি এবং ৭ শতাংশ শিশুর মাঝারি মাত্রায় ভিটামিন এ-এর ঘাটতি ছিল।

প্রথম জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার্ভে ২০১১-১২-এর ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, শিশুদের ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি এবং জিঙ্ক ঘাটতির চিত্রে কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবে আয়রন ও ফোলেটের ঘাটতির মাত্রা আগের তুলনায় বেড়েছে। অবশ্য ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি-১২ ঘাটতির চিত্র প্রায় আগের মতোই রয়েছে। এই জরিপে প্রথমবারের মতো পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে আয়োডিনের বিষয়টি গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ২০ শতাংশ শিশুর আয়োডিনের ঘাটতি ছিল।

গবেষণার প্রধান গবেষক ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, ‘বাংলাদেশে শিশু ও নারীদের কোনো ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান গুরুতর অভাব রয়েছে, তা গবেষণায় উঠে এসেছে। এই তথ্য দেশের পরবর্তী হেলথ সেক্টর প্রোগ্রামসহ অন্য পুষ্টি কর্মসূচিগুলো প্রণয়নে নীতিনির্ধারকদের নতুন দিকনির্দেশনা দেবে।

সেমিনারে আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, এই সমীক্ষার ফলাফল খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রয়োজনীয় কৌশল প্রণয়নে এবং কার্যক্রম গ্রহণে সহায়তা করবে।’


এএজে
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন