দুমকিতে জন্ম নিবন্ধন নিয়ে ইউপি সচিবের বাণিজ্য!


পটুয়াখালীর দুমকি ৩ নং মুরাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের বিরুদ্ধে জন্ম নিবন্ধন ও নাম-বয়স সংশোধনী সনদ প্রদানে নির্ধারিত ফি’র চেয়ে বেশি অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সচিবের এ বাণিজ্যে নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, দেশে শিশুর জন্ম থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সরকারি নিয়মানুয়ী জন্ম নিবন্ধনের কোনো ফি নেওয়া হয় না।
তবে শিশুর ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা ও ৫ বছরের উপরে সব বয়সীদের ৫০ টাকা ফি নেওয়ার নিয়ম করে দিয়েছে সরকার। তবে সরকারের এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দুমকি ৩ নং মুরাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সচিব কনা সরকারি বেঁধে দেওয়া টাকার জায়গায় নিজেই নতুন নিয়ম করেছেন। সে নিয়মে প্রতি জন্ম সনদে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ও জন্ম নিবন্ধনে নাম ভুল হলে সংশোধন বাবদ ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত ফি আদায় করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের।
জন্ম-নিবন্ধন নিতে আসা কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা জানিয়েছেন, জন্মনিবন্ধন আনতে গেলে নানা কাগজপত্রের ভুল ধরেন এবং তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলেই কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, উপজেলায় যোগাযোগ করেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদে এ অভিযোগ নতুন নয়।
সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে ইউপি সচিব কনা জন্ম নিবন্ধন সনদে অতিরিক্ত ফি আদায় করেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। তবে জন্ম নিবন্ধন মানেই ভোগান্তি। এটা দেখারও কেউ নেই বলে জানান স্থানীয়রা। তাঁরা আরো বলেন, পুরাতন জন্ম নিবন্ধন ভুল আছে এটা সংশোধন করে ডিজিটাল করতে হলে বিভিন্ন দপ্তরে অনেকবার যেতে হয়েছে। তাই তিন হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ওই জন্ম সনদ উঠাতে দিগুণ টাকা নেয় ওই সচিব। সূত্রে জানা গেছে, ইউপি সচিব তাঁর নিজস্ব ক্ষমতা বলে তাঁরই ভাই অয়নকে পরিষদে অস্থায়ীভাবে রেখে তাকে দিয়ে জন্ম নিবন্ধন ফরম প্রিন্ট দেয়ায়।
এর জন্য ভুক্তভোগিদের কাছ থেকে যত টাকা উপার্জন হয়, তা সচিব মিলে ভাগবাটারোয়া করে নেয়। এ ছাড়া ৭ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সৈয়দ মিজানুর রহমান ছেলে মন্টুকে দিয়ে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করানো হয়। বাহির থেকে আবেদন গ্রহনযোগ্যতা নেই সচিবের কাছে। সব মিলিয়ে সরকারী বিধি নিষেধ তোয়াক্কা করচ্ছে না সচিব কনা।
সূত্রটি আরো জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সম্প্রতি পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সরেজমিনে ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শন করেছেন। সেসময় তিনি উপস্থিত সাধারণ মানুষদের সরকারী নির্ধারিত ফির চেয়ে অধিক টাকা না দেয়ার পরামর্শ দেন। নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেটের এমন নির্দেশনা মানচ্ছে না সচিব কনা।
পরিষদটিকে নিজের ঘর বাড়ী বানিয়ে যা খুশি তা করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা। তবে অভিযোগের বিষয়ে দুমকি ৩ নং মুরাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সচিব কনা জানিয়েছেন, সরকারি ফি ৫০ টাকা করেছে ঠিক আছে। এর অধিক টাকা নেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ন বানোয়াট। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ সত্য নয়। তিনি বলেন, আমি এখানকার সাংবাদিক নেতার ভাতিজি।
আপনি আসেন সামনা সামনি কথা বলি। ফোনে কি আর বলা যায় বলে ফোনটি কেটে দেয় ইউপি সচিব। এ বিষয়ে দুমকি ৩ নং মুরাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান সিকদার বলেন, জন্ম নিবন্ধন থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া এবং অনান্য বিষয়গুলো সচিবের বিরুদ্ধে সতত্যা পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এসকল অনিয়মের বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক থেকে একজন ম্যাজিষ্ট্রেট আসছিলেন। তিনি তদন্ত করে গেছেন। পরবর্তিতে এ বিষয়টি নিয়ে সচিবকে সর্তক করা হয়েছে। বর্তমানে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে না। চেয়ারম্যান বলেন, অতিলোভের কারণে সচিব এই কাজগুলো করেছেন। এখনো যদি সচিব জড়িত থাকেন তাহলে জেলা প্রশাসকের কাছে জানানো হবে।
এইচকেআর
