ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

বাজেট কী, কেন এই বাজেট?

বাজেট কী, কেন এই বাজেট?
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বাজেট হচ্ছে একটি দেশের সম্ভাব্য সব আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব-নিকাশের বিবরণী। যা একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য সরকারের ব্যয় ও রাজস্বসমূহের একটি পূর্বাভাষও।

বাংলাদেশ সরকারের বাজেটের সময়কাল ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। মূলত সরকারের এক বছরের আর্থিক পরিকল্পনাটাই বাজেট। বাংলাদেশের সংবিধানে বাজেট শব্দটি ব্যবহারের পরিবর্তে সমরূপ শব্দ ‘বার্ষিক আর্থিক বিবরণী’ ব্যবহার করা হয়েছে।

ব্যক্তি জীবনেও আমাদের আয় ও ব্যয়ের হিসাব রাখতে হয়। তবে ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের বাজেটের মৌলিক পার্থক্য আছে। ব্যক্তি আগে আয় করেন, তারপর ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্র করে ঠিক এর উল্টো। রাষ্ট্র আগে ব্যয়ের খাতগুলো ঠিক করে। এরপর কোথা থেকে আসবে সে অর্থ তা নিয়ে ভাবতে হয়। কারণ সরকারকে দেশ চালাতে হয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়, আবার নাগরিকদের উন্নয়নের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিতে হয়। অর্থাৎ ব্যয় বুঝে আয়। মানে সরকার আয় করে খরচ বুঝে, আর ব্যক্তি ব্যয় করেন আয় বুঝে।

বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় ও রাজস্ব ব্যয়ের হিসাব প্রতিফলিত হয়, একে রাজস্ব বাজেট বলা হয়। আয় ও ব্যয়ের ধরনের ভিত্তিতে এ রাজস্ব বাজেটের প্রধান দুটি অংশ থাকে।

রাজস্ব ব্যয়: 
রাজস্ব ব্যয় হলো অনুন্নয়ন বাজেট। এটি হচ্ছে সরকার পরিচালনার যাবতীয় খরচ। অনুন্নয়ন বাজেট মোটা দাগে তিনটি। যেমন- দেশরক্ষা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রশাসন চালানোর খরচ।

এর আওতায় নানা ধরনের সামাজিক কর্মসূচিও বাস্তবায়িত হয়। আবার কৃষি ও জ্বালানির মতো খাতে সরকারের ভর্তুকি, সুদ পরিশোধ করা হলো রাজস্ব ব্যয়। তবে সবচেয়ে বড় খরচের খাত হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান।

রাজস্ব আয়: 
ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারের প্রয়োজন আয়। রাষ্ট্রের বেশকিছু আয়ের উৎস আছে। আয়ের এসব উৎসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- প্রত্যক্ষ কর, পরোক্ষ কর এবং করবহির্ভূত আয়। প্রত্যক্ষ করের মধ্যে আছে ব্যক্তির আয়কর, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আয়কর বা করপোরেট কর, দান কর, উত্তরাধিকার কর, যানবাহন কর, মাদক শুল্ক, ভূমি রাজস্ব ইত্যাদি। আর পরোক্ষ কর হচ্ছে আমদানি কর, আবগারি শুল্ক, ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক ইত্যাদি।

কর ছাড়া রাষ্ট্রের আরও কিছু আয় আছে। যেমন- বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লাভ, সুদ, সাধারণ প্রশাসন থেকে আয়, ডাক-তার-টেলিফোন থেকে আয়, পরিবহন আয়, জরিমানা ও দণ্ড থেকে আয়, ভাড়া, ইজারা, টোল ও লেভি থেকে আয় ইত্যাদি।

বাজেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো উন্নয়ন বাজেট। যে বাজেটে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের হিসাব দেখানো হয়, তাকে মূলধনী বাজেট বা উন্নয়ন বাজেট বলা হয়।

সরকারের যে অর্থ আয় হয় তা দিয়ে দেশ পরিচালনায় যত ধরনের ব্যয় আছে তা পূরণ করে বাকি অর্থ দিয়ে সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে। এ জন্য বরাদ্দ রাখা অর্থই উন্নয়ন বাজেট। এই অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।

এত আলোচনার মধ্যে প্রশ্ন উঠতেই পারে সব ক্ষেত্রে আয়-ব্যয় কি সমান হয়? না, হয় না। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না হলেই ঘটে বিপত্তি। সে ক্ষেত্রে ব্যক্তি যেমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে ধার করে তেমনি রাষ্ট্র দেশ-বিদেশ থেকে অর্থ ঋণ নেয়।

আয় ও ব্যয় সমান কি না, সেই প্রশ্নেই রাষ্ট্রের বাজেট দুই ধরনের হয়ে থাকে। সুষম বাজেট ও অসম বাজেট।

সুষম বাজেট: 
সরকারের আয় ও ব্যয় সমান হলে সেটি সুষম বাজেট। মানে সরকারের মোট ব্যয় পরিকল্পনার সমানই হচ্ছে সম্ভাব্য আয়।

অসম বাজেট: 
যেখানে আয় আর ব্যয় সমান হয় না। অসম বাজেট আবার দুই রকমের হতে পারে। যেমন- উদ্বৃত্ত বাজেট ও ঘাটতি বাজেট।

ব্যয়ের তুলনায় আয় যদি বেশি হলে সেটি উদ্বৃত্ত বাজেট। ঘাটতি বাজেট হচ্ছে ঠিক উল্টোটা। এখানে ব্যয় বেশি, আয় কম।

সাধারণত উন্নত দেশগুলো সুষম বাজেট করে থাকে। কিন্তু আমাদের মতো দেশের পক্ষে সুষম বাজেট করা কঠিন।

যদিও সে ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, বাংলাদেশের মতো দেশে কিছুটা ঘাটতি থাকা ভালো।  এতে অব্যবহৃত সম্পদের ব্যবহার বাড়ে, ঘাটতি পূরণের চাপ থাকে। তাতে অর্থনীতিতে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।

এখন বড় প্রশ্ন উঠতেই পারে বাজেট ঘাটতি কীভাবে পূরণ করা হয়। এটার আসলে দুইটি উৎস আছে। একটি বৈদেশিক উৎস ও অন্যটি অভ্যন্তরীণ উৎস।

বৈদেশিক উৎস: 
এটি হলো বৈদেশিক ঋণ। সরকার বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থা থেকে সহজ শর্তে ঋণ নেয়। এই উৎস থেকে বেশি ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণ করা গেলে সেটি অর্থনীতির জন্য বেশি সহনীয়। কারণ, এতে সুদ কম এবং পরিশোধ করতে সময়ও বেশি পাওয়া যায়। তবে এ ধরণের ঋণে শর্ত থাকে বেশি।

অভ্যন্তরীণ উৎস: 
সরকার দেশের ভেতর থেকে দুইভাবে ঋণ নেয়। যেমন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবস্থা। ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবস্থা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। এর ফলে সরকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঋণ নেয়।

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার দুটি সমস্যা রয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের জন্য অর্থ কম থাকবে। ফলে বিনিয়োগ কমে যায়। আর ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিলে সুদ বেশি দিতে হয়। এতে পরের অর্থবছরের বাজেট বেড়ে যায়। আর সরকার বেশি পরিমাণ ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে।


এমইউআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন