ঢাকা শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

Motobad news
অসন্তোষ ও ক্ষোভ

বাউফলে ইউএনওকে বাদ দিয়ে কলেজ পরিচালনা কমিটি সভাপতি সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী

বাউফলে ইউএনওকে বাদ দিয়ে কলেজ পরিচালনা কমিটি সভাপতি সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

স্নাতকের ভুয়া সনদ ও নানা অনিয়মের অভিযোগে একজনকে বাদ দিয়ে দুই বছর মেয়াদি কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও)। কলেজটিও সুস্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। কমিটির মেয়াদ শেষ হবে আগামি ১২ নভেম্বর। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ইউএনওকে বাদ দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত সহকারীকে সভাপতি মনোনয়ন দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি দেন।

এ ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সুশীল সমাজের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এমন ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা সদরের ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা ডিগ্রী কলেজ পরিচালনা কমিটির বেলায়।

কলেজ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো চিঠির সূত্র অনুযায়ী,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা ডিগ্রী কলেজের দুই বছর মেয়াদি পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের ব্যক্তিগত সহকারী মো. আনিছুর রহমানকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনীত করে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠি দেন। আগামি ১২ নেভেম্বর ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। কোনো কারণ উল্লেখ ছাড়াই গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ইউএনওকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে আনিছুর রহমানকে সভাপতি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা সুলতানার স্বাক্ষরিত চিঠি কলেজের মেইলে পাঠানো হয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা সুলতানা সত্যতা স্বীকার করে বলেন,‘স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয় সভাপতি পরিবর্তনের জন্য ডিওলেটার দিয়েছেন। সেই ডিওলেটার অনুযায়ী অনিছুর রহমানকে ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের অনুমোদনক্রমে সভাপতি মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. সোহরাব হোসেন বলেন, নতুন সভাপতি মহোদয় (আনিছুর রহমান) মুঠোফোনে আগামি মঙ্গলবার তাঁকে সভা আহ্বান করার জন্য বলেছেন। আর এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কলেজের একজন শিক্ষক বলেন,‘দীর্ঘ বছর ধরে নানা অনিয়ম ও জবাবদিহি ছাড়াই রাজনৈতিকভাবে কলেজটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। এমনকি রাজনৈতিক প্রভাবে ২০১৭ সালে মো. হারুন অর রশিদ খান নামে একটি দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষককে এই কলেজটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তাঁকে (হারুন অর রশিদ) সরিয়ে যাঁকে (ইব্রিাহিম ফারুক) মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তাঁর স্নাতকের ভুয়া সনদের কারণে তাঁকে বাদ দিয়ে ইউএনও মহোদয়কে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনোনয়ন দেওয়া হয়। সেই থেকে কলেজটি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়াই ইউএনও মহোদয়কে সরানো কলেজটির জন্য অশনি সংকেত।

মাসুদুর রহমান নামে এক অভিভাবক বলেন,‘কলেজের সব শিক্ষকেরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী। সেখানে স্নাতক (বি.এ) ডিগ্রীধারী কাউকে সভাপতি করা ঠিক হয়নি।কলেজটি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য ইউএনওর বিকল্প নাই।’

কলেজ সংশ্লিষ্ট এলাকার বাউফল পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবদুল আজিজ সিকদার বলেন,‘উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তি ইউএনও মহোদয়কে সরিয়ে সংদস সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারীকে একটি মহিলা ডিগ্রী কলেজের সভাপতি করার খবরে আমিসহ এলাকার সুশীল সমাজের সবাই হতভম্ব হয়েছি।’ 

বাউফল পৌর নাগরিক ফোরামের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আবদুস ছালাম বলেন,‘যতটুকু জেনেছি ইউএনও মহোদয় নিয়মের মধ্যে কলেজটিকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত করে আসছিলেন। আর কমিটির মেয়াদ শেষ হতে মাত্র দেড় মাসের মত বাকি, সেই মুহুর্তে তাঁকে সরিয়ে রাজনৈতিক একজন কর্মীকে বসানো খুবই দুঃখজনক।

এ বিষয়ে ইউএনও মো. আল আমিন বলেন,‘বিষয়টি আমাকে অধ্যক্ষ সাহেব মুঠোফোনে জানিয়েছেন।’ তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন