ঢাকা শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

Motobad news

কলাপাড়ায় সাপের গর্তটি আজও কালের স্বাক্ষী

কলাপাড়ায় সাপের গর্তটি আজও কালের স্বাক্ষী
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নে বৌলতলীপাড়া গ্রামের আশিরোর্ধে অং চং চি কবিরাজ তাঁর মুখে শোনা ঐতিহাসিক আবদুল আলী গাড়ু লিয়াকে নিয়ে সাপের সেই কাহিনী। উনবিংশ শতকের শেষ ভাগে বা বিংশ শতকের প্রথম দিকে। মুন্সীগঞ্জ এলাকার এক সাপুড়ে সরদার আবদুল আলীকে রাতে স্বপ্নে দেখেন যে, বৌলতলী রাখাইনপাড়ার উওর পশ্চিম পাশ ৩৬০টি বাঁশের একটি বাঁশের ঝাড়ের নিচে একটি সাপ রয়েছে। স্বপ্ন বলে দেয় ওই সাপ ধরার আগে দু’টি পাঠা পুর্জ করে নিতে হবে। আবদুল আলী গাড়ুলিয়ার ও স্বপনের কথা আর মানলেন না। সে সাপ ধরতে যায়। সাপটিকে র্স্পশ করার সঙ্গে সঙ্গে রেগে গাড়ুলিয়াকে মুখে নিয়ে ৩৬০টি বাঁশের সঙ্গে পেচিয়ে রাখে।


যেটা এখন ও মানুষের মুখে মুখে সে সময়ের কোন প্রত্যক্ষদর্শী এখন বেঁচে না থাকলে ও অং চং চিং কবিরাজ শুনছেন সেই দিনের ঘটনা।“ছবিতে থাকা ঝোপ ঝাড় যেখানে সেখানে ছিলো একদা ১৬টি বাঁশের বাগান বিশাল সেই বাঁশ বাগানের পাশ দিয়ে দিনের আলোতে  ও মানুষ ভয় পেতো। সেই ভয়ের কাহিনী তাঁর দাদা মংলা ফুগ্নিনি মারা গেছে ৪৪ বছর আগে ও বাবা খোয়ালা কবিরাজ এর কাছে শুনছেন অং চং চিং। তখন পাকিস্তান শানামল। 

মেঘনাপাড়ে থাকতো আবদুল আলী গাড়ুলিয়ার বংশধররা। তাঁরা নৌকায় করে এ প্রান্ত থেকে অন্য পান্ত ঘুরতো আর সাপের খেলা দেখাতো। আবদুল আলী গাড়ুলিয়ার তাঁর পরিবারও সঙ্গীদের নিয়ে বৌলতলী খালে আশ্রয় নেয়। ওই সময় ফরিদপুর থেকে ধান কাটতে লোকজন আসতো এখানে। 

এক দিন ভোর রাতে ফরিদপুর থেকে আসা ৫ জন কৃষক ওই বাঁশ ঝাড়ে দেখতে পায় বিশাল ওই সাপটি। ৩৬০টি বাঁশ ঝাড়ে পেচাঁনো ছিল সাপটি। তাঁর বাঁশ ঝাড়ের কাছে ফোস ফোস শব্দ শুনে কাছে গিয়ে দেখতে পায় এই দৃশ্য সাপটি লম্বায় নাকি ছিল প্রায় ৪০ হাত। এ খবর পেয়ে আবদুল আলী গাড়ুলিয়া ওই সাপ ধরতে বাঁশ ঝাড়ের কাছে আসে বিশাল সাপটি হঠাৎ গাড়ুলিয়াকে মুখে নিয়ে বাঁশের ঝাড়ের উপর উঠে যায়। এ দৃশ্য দেখে তাঁর সঙ্গীরা পালিয়ে যায়। কিন্তু স্বামীকে বাঁচাতে তাঁর স্ত্রী বাঁশ ঝাড়ের নিচে বসে মন্ত্র পাঠ শুরু করে সাপটি তখন ও গাড়ুলিয়াকে মুখে নিয়ে বাঁশের ঝাড়ের উপর ছিলো। এক পর্যায়ে বিশাল সাপটি গাড়ুলিয়াকে মুখে নেয়া অবস্থায় বাঁশ ঝাড়ের উপর থেকে নিচে পড়ে যায়। সাপটি নিচে পড়ায় ওই স্থানে তৈরি হয় বিশাল এক গর্ত। পরবর্তীতে গাড়ুলিয়ার অন্য সঙ্গীরা সাপটিকে ধরতে সক্ষম হয়। অং চং চিং বলেন, এর পর গাড়ুলিয়ার দল তাদের নৌকার সাথে বেঁধে সাপটিকে মুন্সীগঞ্জ নিয়ে যায়। সেখানে গাড়ুলিয়ার জীবন বেঁচে যাওয়ার পুজা ৬ দাঁতের একটি মহিশ সাপটি খাওয়ানোর পর আবার ছেড়ে দেয়। কথিত মতে, ওই সাপটি আবার ও বৌলতলী গ্রামে চলে আসে। এর পর থেকে প্রতি দিনই রাতে গ্রাম বাসী সাপের ফোস ফোস শব্দ শুনেতো। কয়েক মাইল দুর থেকে ও শোনা যেতো নাকি এই শব্দ।

ঐতিহাসিক ঘটনার সত্যতা জানতে সরেজমিনে বৌলতলী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়. যে স্থানে বাঁশ ঝাড় ছিলো সেখানে এখন রাখাইনদের কবর স্থান, তবে বিশাল বাঁশ ঝাড় থেকে সাপটি যেখানে পড়েছিল। সেই স্থানের গর্ত এখন ও বিদ্যমান। আশে পাশের জায়গা উঁচু হলে ও ওই গর্ত কখনই ভরাট হয়নি।

বৌলতলীপাড়া গ্রামে শহিদ বলেন, এই গাড়ুলিয়ার ও সাপের কাহিনী তাঁ রা ও শুনছেন। কিন্তু কখন ও দেখেনি। তিনি আরো বলেন, তবে একটি বিষয় খুবই আশ্চর্যের যে, যেখানে সাপটি গাড়ুলিয়াকে নিয়ে পড়েছিলো। সেই গর্ত এখনও আছে ওই গর্তের পাশে মাটি কেটে রাস্তা বাঁধা হয়েছিল। আশে পাশের সব গর্ত ভরে গেছে কিন্তু ওই গর্ত কালের স্বাক্ষী হিসেবে সেভাবে আছে। যা তাদের বিস্মিত করেছে। একই কথা বলেন, ওই এলাকার শত শত মানুষ। আবদুল আলী গাড়ুলিয়াকে নিয়ে অনেক কল্প কাহিনী লোক মুখে শোনা গেলে ও এখনও তাং বংশধর কিংবা এই গল্প কতটা সত্য তা জানা যায়নি। তবে এলাকার মানুষ এখনও বিশ্বাস সেই রাতের কথা যে দিন গাড়ুলিয়াকে মুখে নিয়ে বিশাল সাপটি ৩৬০টি বাঁশের ঝাড় পেঁছিয়ে উপরে ওঠে এবং মন্ত্র বলে আবার সাপুরিয়াকে নিয়ে নিচে পড়ে যায়।  


মো.এনামুল হক/ এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন