রক্তের প্রতিশোধ নিতে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হতে হবে-মির্জা ফখরুল
দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে র্যালি করেছে বিএনপি। এর আগে, নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহতসহ মানিকগঞ্জ, নেত্রকোণা, সিরাজগঞ্জের র্যালিতে পুলিশের হামলার ঘটনায় আগত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
এ সময় নেতাকর্মীরা ‘পুলিশ তুমি পোশাক ছাড়ো, মুজিব কোট গায়ে পরো’, ‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘আমার ভাই মরলো কেনো, খুনি হাসিনা জবাব দে' স্লোগান দিতে থাকে।
এরই মধ্যে র্যালি পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পুলিশের গুলিতে নিহত আমার ভাইদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এরপর জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পরাজিত করতে হবে।'
দুপুর ১টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে। র্যালিতে বিএনপিসহ এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে অংশ নেন। নেতাকর্মীরা তাদের হাতে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা বহন করেন। র্যালিতে ‘আজকের এই দিনে, জিয়া তোমার মনে পড়ে’, ‘লাল সবুজের পতাকায়, জিয়া তোমার দেখা যায়’, ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বলো’, ‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘গুম করে আন্দোলন বন্ধ করে যাবে না’, ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’সহ বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন নেতাকর্মীরা।
এছাড়া র্যালিতে হাতি, ঘোড়ার গাড়ি, ঢোল, সাউন্ড বক্স, ছোট ছোট কয়েকটি ট্রাক নিয়েও নেতাকর্মীরা র্যালিতে যোগ দেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লাল ও সবুজ টুপি পরে নেতাকর্মীরা র্যালিতে অংশ নেন।
অপরদিকে বিএনপির র্যালিকে ঘিরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ এর আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তার বলায় গড়ে তুলতে দেখা যায়।
কার্যালয়ে সামনে ট্রাকের ওপরে অস্থায়ী মঞ্চে র্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ বক্তব্যে দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম। সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক। পরে র্যালিটি কাকরাইল মোড়, পল্টন মোড় ঘুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
র্যালিতে আগত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি, সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় এবং আমাদের ভাইদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামতে হবে। এরপর সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হোক আজকে আমাদের লক্ষ্য।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, ‘যুবদল নেতা শাওনের হত্যার প্রতিশোধ যদি নিতে চাই, নূরে আলম এবং আব্দুর রহিমের হত্যার প্রতিশোধ যদি নিতে চাই, তাহলে আজকে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে দূর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথ দখল করে এই ভয়াবহ আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’
সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই র্যালির মধ্য দিয়ে সমগ্র দেশবাসী এবং বর্তমান সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, বিএনপি এখন সবচেয়ে বড় দল। বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এই দলকে বিকশিত করেছেন এবং জনগণের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। যিনি এখনো এই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন। আর এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের মিথ্যা মামলায় সাজা নিয়ে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় তিনি অন্তরীণ আছেন।’
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে আমাদের ভাই শাওনের প্রাণ গেছে। নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির অংসখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তারা এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিছুদিন আগে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে আমরা যে আন্দোলন করছিলাম, তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ভোলাতে আমাদের ছাত্রদল নেতা নুরে আলম, স্বেছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম শহীদ হয়েছেন।’
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করেছে। এই সরকার আজকে জনগণের অধিকারকে হরণ করছে। তারা মনে করছে, গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকারের জন্য এদেশের মানুষের যে ন্যায্য দাবি সেই দাবিতে যখন তারা আন্দোলন করছে। তখন তারা (সরকার) মনে করছে, গুলি, গুম, হত্যা, খুন ও নির্যাতন করে সেই আন্দোলনকে দমিয়ে দেবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দল থেকে খুব পরিস্কার করে বলেছি, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই সরকারকে আমরা বাধ্য করব, তাদের পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। আমরা বাধ্য করবো এই সংসদকে বিলুপ্ত করে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের মধ্যে দিয়ে নতুন সংসদ গঠন করে নতুন সরকার নির্বাচিত করতে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় র্যালি পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া শোভাযাত্রা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শামা ওবায়েদ, প্রচার সস্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানী, দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন
এএজে
