কলাপাড়ায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ


পটুয়াখালীর কলাপাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সহকারী নজরুল ইসলামের কম্পিউটার বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই, তারপরও তাকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে ৫ বছর আগে।
একই অফিসে তিনি ১৮ বছর ধরে চাকুরী করে আসছেন। একই কর্মস্থলে দীর্ঘ বছর চাকুরীর সুবাদে তিনি কাউকে তোয়াক্কা করছে না। সরকারী চাকুরী বিধি বহির্ভূত ভাবে একই কর্মস্থলে দেড় যুগ কর্মরত থেকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের গুঞ্জন উঠেছে তার বিরুদ্ধে। টাকা ছাড়া কোন ফাইল ছাড়ে না তিনি। পান থেকে চুন খসলেই শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরণ করছেন।
এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পায়নি শিক্ষকরা। উল্টো অভিযোগ করার কারনে রোশানলে পড়তে হয়েছে শিক্ষকদের। কলাপাড়ার প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা এক প্রকার তার কাছে জিম্বি।
১৯৯৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে এমএলএসএস হিসেবে চাকুরীতে যোগ দেন তিনি। এরপর ২০০৫ সালে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পদোন্নতি পান। সেই থেকে প্রায় ১৮ বছর পটুয়াখালীর কলাপাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কর্মরত আছেন মো. নজরুল ইসলাম।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম শিক্ষকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে টাকা আদায় করছেন। টাকা না দিলে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস তার টেবিলে ফাইল আটকে থাকে।
শিক্ষকদের পেনশন ফাইল, মাতৃত্বকালীন ছুটি, মেডিকেল ছুটি, শিক্ষক লোন, বকেয়া বিল, ক্ষুদ্র মেরামত, ¯িøপ, ওয়াশ বøক, শ্রান্তি বিনোদন, গ্রেড যুক্ত করন সহ রুটিন মেইনটেন্যান্সের ফাইল অফিস থেকে ছাড় করতে তাকে এক থেকে দেড় হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। ফাইল জমা দেয়ার সময় শিক্ষকরা নির্ধারিত পরিমান টাকা শিক্ষা অফিসের করনিক নজরুল ইসলামের হাতে গুঁজে দেন। যারা টাকা দেয় না অথবা নির্ধারিত পরিমানের কম টাকা দেয় তাদের ফাইল ঘুরতে থাকে মাসের পর মাস।
উপজেলার ১৩০ নং উত্তর টিয়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, তিনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে নজরুল ইসলামের অসৌজন্যমূলক আচরন ও ঘুষ নেয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যার অনুলিপি প্রাথমিকের ডিজি, ডিডি ও ডিপিইওকে দেয়া হয়েছে। যে আবেদনে একাধিক ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক একাত্মতা ঘোষনা করে স্বাক্ষর করেছেন। কিন্তু অদ্যবধি প্রতিকার মেলেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক প্রধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষা অফিসের করনিক নজরুল ইসলাম দীর্ঘ আঠারো বছর সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কলাপাড়ায় চাকুরী করছেন। দীর্ঘদিন একই অফিসে চাকুরি করার কারনে সকল শিক্ষক, কর্মচারীকে জিম্মি করে তিনি অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করছেন। যা যথাযথ কর্তৃপক্ষ তার বিত্ত, সম্পদ অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি কোন দুর্নীতি, অনিয়মের সাথে জড়িত নন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অচ্যুতানন্দ দাস বলেন, অফিস সহকারী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আমি কোন অভিযোগ পাইনি। এছাড়া সরকারী চাকুরী বিধি অনুযায়ী ৩য় শ্রেনীর কর্মচারী এক স্থানে তিন বছরের বেশী থাকতে পারে না, এরকম কোন বিধান নাই।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোল্লা বখতিয়ার রহমান বলেন, কর্মকর্তার সাধারনত তিন বছরের বেশি এক যায়গায় থাকতে পারে না। কিন্তু কর্মচারীদের বিষয় এরকমের কোন বাধ্যবাদকতা নেই। এছাড়া অফিস সহকারী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএজে
