রেকর্ড পরিমাণ বাড়লো খেলাপি ঋণ


ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও খেলাপি হওয়া থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন গ্রাহক। তবুও ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।
চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। গত বছরের (২০২১ সালের জুনে) একই সময়ে খেলাপির পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
তিন মাস আগে অর্থাৎ মার্চ শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। এই হিসেবে গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।
আর ছয় মাসে বেড়েছে ২১ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ তিন হাজার ২৭৪ কোটি টাকা।
করোনার কারণে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ২০২০ ও ২০২১ সাল জুড়ে কয়েক দফায় কোনও ঋণ পরিশোধ না করে কিংবা সামান্য পরিশোধ করে খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ ছিল। এ ধরনের বিভিন্ন সুবিধার বেশিরভাগই শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এর পরপরই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ব্যাপকভাবে।কেবল টাকার অঙ্কেই নয়, শতকরা হিসাবেও খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী জুন শেষে বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ খেলাপি হয়ে গেছে। মার্চ শেষে খেলাপি ছিল ঋণের ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২ সালের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর আগে, ২০২১ সালের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ২৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী মোট খেলাপির ৪৪ ভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ৬২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা, যা ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকের দুই হাজার ৯৫৭ কোটি ও বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে চার হাজার ১৯৪ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুশাসন না থাকায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, যতদিন না সরকার ব্যাংকের ঋণ ফেরাতে আন্তরিক হবে ততদিন দেশে খেলাপি কমবে না। সাবেক এই গভর্নর বলেন, মনে হচ্ছে ব্যাংকগুলো ফরেন এক্সচেঞ্জ, আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্স নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারা আপাতত খেলাপি ঋণ আদায়ের বিষয়ে ভাবছে না।
এএজে
