জমজমাট ভাসমান পেয়ারার হাট, ঘুরে আসুন এই মৌসুমে


‘ভাসমান হাট’ দেখতে যারা চীন, মালদ্বীপ কিংবা থাইল্যান্ডে পর্যন্ত পাড়ি জমান, তারা হয়তো দেশের ভেতরেই যে চমৎকার ভাসমান মার্কেট আছে তার খোঁজও রাখেন না। তাই তারা কেবল দূরের দেশের ছবি দেখে হা-পিত্যেস করেন। তাদের খবর হলো এবার জমে উঠেছে ঝালকাঠির ভিমরূলী আর পিরোজপুর জেলার আটঘর-কুড়িয়ানা ভাসমান পেয়ারার হাট জমে উঠেছে।
পেয়ারার রাজ্য খ্যাত ঝালকাঠি-বরিশাল-পিরোজপুর জেলার ৫৬টি গ্রাম। বাংলার আপেলখ্যাত সুমিষ্ট পেয়ারা উৎপাদনের কারণে কুড়িয়ানা পরিচিতি পেয়েছে ‘পেয়ারার গ্রাম’ হিসেবে।
হাজার একর জমিতে গড়ে উঠেছে পেয়ারা বাগান। মৌসুমের তিন মাস পাকা পেয়ারার সুবাসে সুরভিত থাকে গ্রামের বাতাস। পেয়ারার পাইকারি বাজার ঝালকাঠি ভিমরুলীর ভাসমান বাজার। তিনটি খালের সংযোগস্থলে এ হাটটি অবস্থিত। একটি খাল থেকে নৌকা যায় স্বরূপকাঠি, একটি থেকে কাউখালী, অন্যটি থেকে ঝালকাঠির দিকে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকার ভাসমান এ বাজারে চলে পেয়ারার কেনাবেচা। ডিঙ্গি নৌকা করে পেয়ারা নিয়ে আসে চাষিরা। নৌকা ভরা পেয়ারা এই ভাসমান বাজারের পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়। ভিমরুলী, শতদশকাঠি, জগদীশপুরের খালে লাইন ধরে চলে পেয়ারা ভর্তি নৌকা। পাইকাররা পেয়ারা কিনে কার্গো ও ট্রলারযোগে চালান করে দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতিবছর পেয়ারার মৌসুমে বিভিন্ন স্থান থেকে নৌপথে পেয়ারা বাগানে আসে পর্যটকরা। পেয়ারা বাগানে এসে মুগ্ধ হয়ে এখান থেকে পেয়ারা কিনে নিয়ে যান পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য।
পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্ব দিকে আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের গ্রামগুলোসহ পাশের জলাবাড়ি ও সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের মোট ২২টি গ্রামের ৮৫০ হেক্টর জমিতে রয়েছে ২ হাজার ২৫টি পেয়ারার বাগান। শুধু কুড়িয়ানা গ্রামে ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। এখানকার মানুষের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস পেয়ারা। শত বছর ধরে গ্রামগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ করা হচ্ছে। নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, জিন্দাকাঠি, ভীমরুলী, আদমকাঠি, ধলহার খালে পেয়ারার মৌসুমে প্রতিদিন ভাসমান হাট বসে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা হাটে পেয়ারা কিনতে আসেন। প্রতিদিন হাটগুলোতে ১০ থেকে ১৫ হাজার মণ পেয়ারা বেচা-কেনা হয়। এসব এলাকায় গড়ে উঠেছে পেয়ারার ১৫-২০টি ছোট-বড় ব্যবসাকেন্দ্র।
দক্ষিণাঞ্চলের জেলা ঝালকাঠী ও স্বরূপকাঠীর বিভিন্ন জায়গায় বসে ভাসমান হাট। এ রকম কাছাকাছি তিনটি হাট হলো ভিমরুলি, আটঘর এবং কুড়িয়ানা। প্রথম দুটিতে বসে মৌসুমি ফল আর সবজির পসরা। অন্যটি নৌকার বাজার। বরিশাল থেকে মাত্র এক ঘন্টার পথ এই তিনটি বাজারে একদিনেই বেড়ানো সম্ভব।
