ঢাকা সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

Motobad news

কুষ্টিয়ার কবুরহাট স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ!

কুষ্টিয়ার কবুরহাট স্বাস্থ্য কেন্দ্র বন্ধ!
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

কুষ্টিয়ার খাজানগরে চালকলের বর্জ্যের পানিতে একটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চারপাশে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে সাত মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর। সেখানে দেশ এগ্রো ও ইফাদ এগ্রো নামের দুটি চালকলের বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত পানিতে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চারপাশে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। 

সরেজমিন দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পুরো এলাকা বিষাক্ত বর্জ্য ও কচুরিপানায় ময়লার স্তূপে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। পাশে কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা সড়কের কুবুরহাট এলাকা দিয়ে চলাচলকারী হাজারও মানুষ বিষাক্ত পানির দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে চলাফেরা করছেন। ওই পানি গায়ে লেগে চর্মরোগসহ নানা অসুখ-বিসুখ দেখা দিচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের যাতায়াত না থাকায় এটি অনেকটাই পরিত্যক্ত ভবনে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, চালকলমালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় সবাইকে ম্যানেজ করে চলেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চারপাশে চালকলের বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত পানিতে সয়লাব থাকলেও সংশ্লিষ্ট কারো মাথাব্যথা নেই।

চালকলের বিষাক্ত বর্জ্য ও দূষিত পানিতে আশপাশের ফসলও নষ্ট হচ্ছে। আশপাশ এলাকায় বসবাসকারী লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। একটু বৃষ্টি হলেই ওই পানি উঠে যাচ্ছে সড়কে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কয়েকজন কর্মচারী  বলেন, ‘আমরা এখানে চাকরি করি। চালকলমালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে তারা হুমকি-ধমকি দেন। তাই এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করতে পারি না। আমাদের বিষয়টি উপজেলা ও জেলা কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’ 

দেশ এগ্রো ও ইফাদ এগ্রো'র গেটে গেলে সিকিউরিটি গার্ড  অফিসের মালিককে বলেন সাংবাদিক আপনার সাথে দেখা করতে চাই। গার্ড বলেন স্যার ব্যস্ত আছেন এবং সাংবাদিক ভেতরে যাওয়া নিষেধ। 

৪ নং বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্টু ফকির বলেন, ‘বুধবার সকালে বিষয়টি আমি দেখে এসেছি। চালকলমালিক পক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছি। তারা দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক আতাউর রহমান  বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত নন। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

কুষ্টিয়ার পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিজানুল হক বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ উপজেলা পযার্য়ের কর্মকর্তাদেরও জানিয়েছি। তবে তারা কেউই ব্যবস্থা নেননি।’ এ 


এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির নেতা জয়নাল আবেদিন সাধু বলেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের সকলের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এলাকার উন্নয়নের সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় সবাইকে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং প্রয়োজনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের দূর্ভোগ লাঘব করতে হবে। আমরা কেউ আইনের উর্ধ্বে না। 


বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধন কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বটতৈল ইউনিয়নের সাবেক আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সমাজসেবক মিজানুর রহমান ডাক্তার বলেন, আমার সময় কখনও এরকম ঘটনা ঘটেছে আপনারা সাংবাদিক ভাইয়েরা বলতে পারবেন না। আমি কবুরহাট স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ব্যপারে মর্মাহত। জনগণের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হল স্বাস্থ্য। আর এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আজ কেউ সেবা নিতে পারেন না। এ ব্যাপারে কর্মকর্তাগণ চোখের সামনে দেখেও না দেখার ভান করে বলেন, আমরা এখনো অভিযোগ পাইনি বা কেউ আমাদেরকে বলেন নাই। আমি মিজান ডাক্তার আপনাকে বলতে পারি একসপ্তাহর মধ্যে সবার সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার উদ্যোগ নিব । 


কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাকে কেউই জানাননি। আপনার মাধ্যমে আজ জানতে পারলাম। দ্রুত খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 


মো. হাবিবুর রহমান /এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন