দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ভাইরাস নিয়ে ঈদ করছেন ৯৩৯ জন রোগী


দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণ আশাতীতভাবে হ্রাসের সাথে ভ্যাকসিন গ্রহণের হার ইতোমধ্যে ৮০ ভাগের ওপরে উন্নীত হয়েছে। গত দু মাসে এ অঞ্চলের ৬ জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ১২৯ জনে নেমে আসলেও এসময়ে মারা গেছেন দুজন। তবে মার্চের মধ্যভাগের পরে এঅঞ্চলে কোন মৃত্যু নেই। এমনকি পুরো এপ্রিল মাসে দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলায় মাত্র ৭ জনের করোনা শনাক্তের কথা জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর। চলতি মাসের প্রথম ৪ দিনের কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি দক্ষিণাঞ্চলে।
অপরদিকে প্রায় ১কোটি জনসংখ্যার দক্ষিণাঞ্চলে ১২ বছরের ঊর্ধ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৭০ লাখ মানুষ করোনা প্রতিষেধক ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ এবং ৬০ লাখ দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন। তবে বুষ্টার ডোজ গ্রহনকারীর সংখ্যা এখনো ৬ লাখের নিচে। ভ্যাকসিন গ্রহণকারী এ সংখ্যার মধ্যে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী প্রায় ১০ লাখ ৩৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী প্রথম ডোজ এবং ৯ লাখ দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছে বলেও জানা গেছে।
এপর্যন্ত বরিশাল মহানগরীতে প্রথম ডোজ গ্রহণকারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৪৫ হাজার হলেও দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৪ লাখের বেশী। যা এ নগরীর ১২ বছরে ঊর্ধ্বের জনসংখ্যার ৮০ ভাগের বেশী বলে মনে করছেন নগর কর্তৃপক্ষ। তবে এ নগরীতে বুষ্টার ডোজ গ্রহণ করেছে মাত্র ৮১ হাজার মানুষ।
করোনা সংক্রমন হ্রাসের সাথে সঠিক ধারনার অভাবে মহানগরীসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেই এখনো সাধারণ মানুষের মধ্যে বুষ্টার ডোজ গ্রহণে আগ্রহ কম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রচারনাসহ সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করারও তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি মাস্ক পড়াসহ পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য বিধি অনুসরনেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, বুধবার পর্যন্ত দক্ষিনাঞ্চলে করোনা সংক্রমনের সংখ্যা ৫২ হাজার ৭০৪ জনে উন্নীত হলেও ৫১ হাজার ৭৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৬৯০ জন। সে হিসেবে এখনো দক্ষিণাঞ্চলে সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন ৯৩৯ জন। এসব রোগীরা বেশ কিছুদিন ধরেই কোভিড-১৯’ এ ভুগছেন।
কারণ গত ২৫ দিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলে কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। এসময়ে কোন আক্রান্ত না হলেও দৈনিক গড়ে ১৫ জনের মত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আর বর্তমানের সক্রিয় রোগীদের নিয়েই দক্ষিণাঞ্চলে ঈদ উদযাপন করেছেন আক্রান্তদের স্বজনেরা। কারণ দক্ষিনাঞ্চলের কোন হাসপাতালেই এখন করোনা রোগী নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত বরিশাল জেলায় সর্বোচ্চ ২১ হাজার ২২ জন করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ২৩৫ জন। আবার দক্ষিনাঞ্চলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকার শীর্ষে বরিশাল নগর। এ নগরীতে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার আক্রান্তের মধ্যে ১০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলায় আক্রান্ত ৭ হাজার ৪১ জনের মধ্যে ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দ্বীপজেলা ভোলাতে আক্রান্তের সংখ্যা দক্ষিনাঞ্চলের দ্বিতীয়, ৭ হাজার ৮৬৪। মারা গেছেন ৯২ জন। পিরোজপুরে আক্রান্তের সংখ্যা বুধবার পর্যন্ত ছিল ৬ হাজার ৩০৬, মারা গেছেন ৮৩ জন। সর্বাধিক মৃত্যুহারের বরগুনাতে ৪ হাজার ৬৬৮ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছেন ৯৯ জন। আর দক্ষিনাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট জেলা ঝালকাঠী শনাক্ত হারের শীর্ষে। চার উপজেলা নিয়ে গঠিত এ জেলায় ৫ হাজার ৬০৪ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৭১ জনের।
আগামী জুনের মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলে ১১ বছরে ঊর্ধ্বের প্রায় শতভাগ মানুষকে করোনা ভ্যকসিনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. হুমায়ুন শাহিন খান। ফলে আগামীতে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি ও হার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারেও আশাবাদী এই কর্মকর্তা।
কেআর
