ভিজিএফের চাল উদ্ধার, ইউপি চেয়ারম্যানের আকাশকুসুম গল্প


পবিত্র ঈদ উপলক্ষে সরকারের দেয়া ভিএফএর এক টন (২০ বস্তা) চাল কালো বাজারে বিক্রির ঘটনায় ভৈরবপাশা ইউনিয়ন জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অসহায় দরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া চাল ইউনিয়নের সচেতন যুবক ও গ্রামবাসীর সহায়তায় পুলিশ উদ্ধার করেছে।
ঝালকাঠি জেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এ উদ্ধারাভিযান পরিচালিত হয়েছে। এ ব্যাপারে চাল ক্রেতা ইউপি চৌকিদার আয়নাল হক ও ধান-চালের ব্যবসায়ীর ইউসুফ হাওলাদার ইউপি মেম্বার জামাল ও মনিরের কাছ থেকে এ চাউল কিনেছে বলে স্বীকার করেছে।
এদিকে ভৈরবপাশা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ঘটনার কিছুই জানেনা দাবী করে চাউলের গোডাউনের চাবি সচিবের কাছে বলে জানিয়েছে। তবে সচিব চেয়ারম্যানের দাবী অস্বীকার করে গোডাউনের চাবি তার কাছে ছিলোনা বলে দাবী করেন। অন্যদিকে চাল বিতরন স্থলে সার্বক্ষনিক উপস্থিত থাকার দায়িত্বে নিয়োজিত ট্যাগ অফিসার লুৎফর রহমান জানিয়েছেন শনিবার চাল বিতরনের বিষয় তাকে না জানানোর কারনে তিনি আসেনি।
স্থানীয়রা সচেতন যুবক ও গ্রামবাসীর জানায়, শনিবার সকালে থেকে ভৈরবপাশা ইউনিয়নে ঈদ উপলক্ষে দরিদ্র মানুষের মাঝে হতদরিদ্রদের জন্য ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। দুপুরের পর ইউনিয়ন পরিষদের সেই চাল থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্থানীয় চৌকিদার আয়নাল হক ও ধান-চাল ব্যবসায়ী ইউসুফ হাওলাদারের কাছে এক টন গোপনে বিক্রি করে দেয়া হয়।
বিষয়টি টের পেয়ে এলাকাবাসী উক্ত চালের দুই ক্রেতার বাড়ি ঘেরাও করে ঝালকাঠি এনডিসি ও পুলিশ প্রশাসনকে জানালে পুলিশ এসে রাতে ১২ বস্তা চাল জব্দ করে। এ সময় তারা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষাভে ফেঁটে পড়েন ও তারা এ ঘটনার তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক বিচার দাবী করেন।
এ বিষয় ধান-চাল ব্যবসায়ী ইউসুফ হাওলাদার জানায়, শনিবার দুপুরে ইউপি মেম্বার জামাল ও মনির তাকে ডেকে পরিষদের নেয়। তাদের সাথে দরদাম ভেঙ্গে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি ও ইউপি চৌকিদার আয়নাল হক এক টন চাউল ক্রয় করেন। আর চৌকিদার আয়নাল হক বলেন আমি কার কাছ থেকে কিনেছে জানিনা, আমি ইউসুফের কাছ থেকে ১০ বস্তা চাউল ১৫হাজর টাকায় কিনেছি।
এ বিষয় ভৈরবপাশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হক জানায়, তার ইউনিয়নে ঈদ উপলক্ষে মোট ২৩৬৬ জন দরিদ্র মানুষকে বিতরণের জন্য ২৩ টন ৬’শ ৪০ কেজি চাল বরাদ্দ করা হয়। পরিষদের বড় গোডাউনের চাবি তার কাছে থাকায় শনিবার এ চাল থেকে ১৯৫০ জনকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। ছোট গোডাউনের চাবি সচিবের কাছে থাকায় পরে সচিবকে চাউল বিতরন করতে বলে আমি পাশের রুমে দলীয় লোকদের সাথে আলা করছিলাম। কিন্তু দরিদ্রদের এতোগুলো চাউল কিভাবে চুরি হলো আমি বলতে পারছিনা।
এ বিষয়ে সচিব জানায়, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের বক্তব্য মিথ্যা আমি এর প্রতিবাদ জানাই। কারন ইউনিয়নের বরাদ্দ আসে চেরম্যানের নামে, গোডাউনের জিম্মায় থাকে চেয়ারম্যান সম্পূর্ন তার এখতিয়ার। মামলা দায়েরের বিষয় বলেন, মামলা দায়েরের জন্য একটি অভিযোগ নিয়ে ইউএনও কার্যালয়ে এসেছি। তাকে দেখানোর পর থানায় এজাহার নিয়ে যাবেন।
মামলায় কোন আসামী আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আসলে পরিষদে বিতরনকৃত চালের ষ্টক, মাষ্টার রোল ও উদ্বৃত চালের পরিমান মোট বরাদ্ধ অনুযায়ী সম্পূর্ন ঠিক আছে। তাই সরাসরি কাউকে আসামী করা হয়নি। উদ্ধারকৃত চাল কোথা থেকে এসেছে বা কার কাছ থেকে কি ভাবে কেনা হয়েছে সেটা তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার।
শনিবার রাতে নলছিটি ইউএনও রুম্পা সিকদার জানান, ঘটনার খবর পেয়ে নলছিটি থানা পুলিশ পাঠিয়ে আমি নিজে রাত ১১টায় ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শন করেছি। ঘটনার বিষয়ে সচিবকে বাদী হয়ে মামলা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে আজ রবিবার তার সর্বশেষ বক্তব্য জানতে চেষ্টা করা হলেও তিনি মিটিংয়ে থাকায় জানা যায়নি।
