সংশোধিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা একই থাকছে


চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, সংশোধিত বাজেটে তা অপরিবর্তিত রাখছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মূল বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে তাই থাকছে। তবে পরিবর্তন আসছে মূল্যস্ফীতির প্রক্ষেপণে। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখার ঘোষণা ছিল বাজেটে। পণ্যমূল্যসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সংশোধিত বাজেটে তা কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বিষয়গুলো ওঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে জিডিপির আকারও কিছুটা বাড়বে। চলতি অর্থবছরে চলতি বাজার মূল্যে জিডিপির আকার ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে জিডিপির আকার হবে ৩৯ লাখ ৪৩ হাজার ৩০১ কোটি টাকার।
এদিকে, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয় মনে করছে, আসন্ন অর্থবছরে জিডিপির আকার হতে পারে ৪৪ লাখ ১৭ হাজার ৮৮ কোটি টাকার। তবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেশি ধরা হলেও আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে আশা করছে অর্থ বিভাগ।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সমকালকে এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো সর্বশেষ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ছয় শতাংশের ওপরে। যদিও বিবিএসের প্রকাশিত তথ্য পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে। আর সরকার হিসাব করে বার্ষিক গড়ে। এরপরও বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনা কম। এ ছাড়া গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আলোচনা চলছে। যদি সরকার এসব ক্ষেত্রে দাম বাড়ায় তাহলে মূল্যস্ফীতি আরেক দফা বাড়বে। ফলে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খায় না।
অন্যদিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে সরকার যে প্রত্যাশা করছে, সেটি অর্জনও কঠিন বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হচ্ছে ঠিকই। তবে তা করোনার আগের অবস্থায় পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, রপ্তানি বেড়েছে। কিন্তু আমদানি ব্যয়ও অনেক বেড়েছে। আর আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ পণ্যমূল্য বৃদ্ধি। বাণিজ্য ঘাটতি এখন অনেক। চলতি হিসেবেও রেকর্ড ঘাটতি হয়েছে। সম্প্রতি বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়লেও ফেব্রুয়ারিতে জানুয়ারির তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে এবং করোনা-পূর্ববর্তী অবস্থায় যায়নি। রেমিট্যান্স পরিস্থিতিও ভালো নয়। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশাটাও বড় মনে হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ বা তার আশপাশে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
অর্থ বিভাগ বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক ইতিবাচকভাবে এগিয়েছে। আগামীতেও প্রধান প্রধান সূচক ইতিবাচক থাকবে। বিশেষ করে শিল্প ও সেবা খাতে চাঙ্গাভাব থাকবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার ঘটবে। করোনার টিকা কার্যক্রম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সচল করতে সহায়তা করেছে। এতে রাজস্ব সংগ্রহ ও সরকারি ব্যয় বেড়েছে। বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। বেড়েছে কৃষি ঋণও। রপ্তানি আয়, প্রবাসী আয়, আমদানি বেড়েছে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও বেড়েছে। আমদানি রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে। বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়ক হবে। ফলে প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সাময়িক অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৯-২০ অর্থবছরে কমে ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ হয়। সরকার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েছে। ফলে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের মতে, বৈশ্বিক মূল্যস্ম্ফীতির চাপ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে মূল্যস্ম্ফীতি কিছুটা বেড়েছে; যা সামনের দিনগুলোতে ধীরে ধীরে কমে আসবে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে দেশেও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
এমইউআর
