ফুল ধরলেও ফল ধরেনি, শঙ্কায় আমতলীর তরমুজচাষিরা


বরগুনার আমতলীতে তরমুজগাছে ফুল ধরলেও ফল ধরেনি। আবার অনেক জায়গায় ফল ধরলেও অজ্ঞাত রোগে লতা শুকিয়ে ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। নির্ধারিত সময়ে গাছে ফলন না ধরায় শতকোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
দ্রুত কৃষি বিভাগ গাছের এমন সমস্যা নিরসনে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে এতে সর্বস্বান্ত হবেন উপজেলার কয়েক হাজার তরমুজচাষি। এমন দাবি ভুক্তভোগী কৃষকদের।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন- গুলিশাখালী, কুকুয়া আঠারোগাছিয়া, হলদিয়া, চাওড়া ও সদর ইউনিয়নে দুই হাজার পাঁচ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। চাষিদের নিরলস পরিশ্রমে তরমুজগাছ ভালো হওয়ায় কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশায় ছিলেন। উপজেলার প্রায় ৭০ শতাংশ তরমুজক্ষেতের অবস্থা এমন বলে দাবি করেন চাষিরা।
শুক্রবার সকালে আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম গাজীপুর, কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়াহাট, হলদিয়া ইউনিয়নের রাওঘা, গুলিশাখালীর আঙ্গুলকাটা, চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা, তালুকদার বাজার ও সদর ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মাঠভরা তরমুজক্ষেত। এসব তরমুজক্ষেতে প্রচুর ফুল ধরলেও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো গাছে ফল ধরেনি। আবার কিছু ক্ষেতে ফল ধরলেও অজ্ঞাত রোগে লতা শুকিয়ে ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পশ্চিম গাজীপুর গ্রামের অভিজ্ঞ তরমুজচাষি মো. আলমগীর মুছুল্লী জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গাছের এমন বিপর্যয় হয়েছে। তা ছাড়া যারা আগে ক্ষেতে তরমুজের বীজ বপন করেছে, তাদের এমন অবস্থা হয়নি। আর যারা পরে বীজ বপন করেছে তাদের তরমুজগাছে প্রচুর ফুল ধরলেও ফল ধরেনি।
তিনি আরো বলেন, জমিতে বেশি সার ও ওষুধ প্রয়োগের কারণেও এমন অবস্থা হতে পারে। কৃষি বিভাগ দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করতে না পারলে উপজেলার কয়েক হাজার চাষি সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে।
একই গ্রামের মনিরুল ইসলাম বলেন, ধার-দেনা করে এ বছর ২০ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। গাছে প্রচুর ফুল দেখে আশায় বুক বেঁধে ছিলাম এ বছর বাম্পার ফলন পাব। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, লতায় প্রচুর ফুল হলেও ফল হচ্ছে না। এ বছর আমাদের এই এলাকায় প্রায় সব তরমুজচাষির একই অবস্থা।
কুকুয়াহাট গ্রামের মো. আলমগীর গাজী ও জুয়েল মৃধা বলেন, আমাদের গ্রামের প্রায় সব তরমুজক্ষেতজুড়ে গাছে প্রচুর ফুল ধরেছে কিন্তু ফল ধরেনি। আবার অনেকের ক্ষেতে ফলনসহ তরমুজের লতা শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
চাওড়া চন্দ্রা গ্রামের কৃষক শানু মিয়া বলেন, 'এ্যাহন মুই কী হরমু? ধারদেনা কইর্যা তরমুজ দিছি, হেই তরমুজ খ্যাতে অনেক ফুল অইছে, কিন্তু তরমুজ অয়নি। মুই শেষ অইয়্যা যামু।
হলদিয়া ইউনিয়নের টেপুড়া গ্রামের চাষি ইউপি সদস্য আবু সালেহ আকন বলেন, আমাদের গ্রামে দুই শতাধিক কৃষক এ বছর তরমুজের আবাদ করেছে। এদের মধ্যে শতকরা ১০% তরমুজচাষিদের ভালো ফলন হয়েছে। ১০% গাছে মোটামুটি ফলন হলেও খরচ উঠবে না। ১০% তরমুজগাছ ফলসহ লতা শুকিয়ে গেছে। বাকি ৭০% তরমুজগাছে ফুল আছে, তবে ফল হয়নি।
সদর ইউনিয়নের মহিষডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মিঠু বলেন, দুই সপ্তাহ পরেই তরমুজ বাজারজাত করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এ অবস্থায় অজানা রোগের কারণে এলাকার কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছে। প্রথমদিকে তরমুজগাছগুলো ভালোই ছিল। এক সপ্তাহ ধরে অজ্ঞাত রোগের কারণে তরমুজক্ষেতে গাছের কাণ্ডগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, ডগাগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ছে। আবার কিছু গাছের আগা পুড়ে যাচ্ছে।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম বলেন, মানসম্মত বীজের জাত রোপণ না করা, জমিতে অধিক পরিমাণে সার, কীটনাশক ব্যবহারের কারণে ভোমর ও মৌমাছি প্রাকৃতিকভাবে যে পরাগায়ন ঘটায় সেটা না ঘটায় তরমুজক্ষেতে ফুল ফুটলেও ফল না আসার অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেতগুলোতে জিং ও সালফার স্প্রে করলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসবে। আমাদের মাঠকর্মীরা তরমুজচাষিদের সমস্যা জেনে প্রতিকারে পরামর্শ দিচ্ছেন।
এইচকেআর
