ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

Motobad news

বরগুনায় এতিমের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ

বরগুনায় এতিমের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

এতিমের দেখা নেই, তবুও চলছে এতিমখানা। বরগুনাতে এতিম খানার নামে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারকচক্র। চিহ্নিত ওই প্রতারক চক্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে বরগুনা স্থানীয় প্রশাসন। রাষ্ট্রিয় অর্থ লোপাটের এ মহোৎসব বন্ধ করতে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছেন তাঁরা।

জানা যায়, বরগুনা শহরের মাদ্রাসা সড়কের ঐতিহ্যবাহী নেছারিয়া শিশু সদন। কাগজপত্র আর সাইনবোর্ডে এ এতিমখানাটির অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবতা সম্পুর্ন ভিন্ন। পাশাপাশি অবস্থিত বরগুনা দারুল উলুম নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র হোস্টেলটিকে দেখানো হয় নেছারিয়া শিশু সদন হিসেবে। এমনকি মাদ্রাসার হোস্টেলে থাকা ছাত্রদেরকে এতিম বলে চালিয়ে দেয়া হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বরগুনা পৌর শহরের  মাদ্রাসা সড়কে অবস্থিত নেছারিয়া শিশু সদনটি। এই এতিমখানায় ৮৪জন এতিম শিক্ষার্থী আছে বলে কাগজে কলমে দেখানো হয়েছে। সরকারের নিয়মানুযায়ী মোট এতিম শিক্ষার্থীর অর্ধেক অর্থাৎ ৪২ জন এতিম শিক্ষার্থীর জন্যে জন প্রতি ২ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়। সে হিসেবে এই এতিমখানায় ৪২ জন শিক্ষার্থীর জন্য  প্রতি মাসে ৮৪ হাজার টাকা এবং বছরে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। কিন্তু এই পুরো টাকাই আত্মসাৎ করছে একটি প্রতারকচক্র। অথচ বাস্তবে কোন এতিম শিক্ষার্থীও খুঁজে পাওয়া যায়নি এখানে।    

এবিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের পিপি এ্যাড. শাহজাহান বলেন, এই জেলার সর্বোচ্চ ইসলামী বিদ্যাপীঠ বরগুনা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসা। এই মাদরাসা কতৃপক্ষ ছাত্র হোস্টেলকে শিশু সদন বলে চালিয়ে দিচ্ছে এবং এতিম না থাকলেও লাখ লাখ টাকার অনুদান নিচ্ছে তারা। বাংলাদেশ সরকারের উচিত প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সরকারি শিশু সদন নির্মাণ করা। তাহলে সরাসরি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হলে দুর্নীতির সুযোগ থাকবেনা।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, যে সকল শিশু সদনে এতিম নেই তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হবে। বাবা-মায়ের ডিজিটাল মৃত্যু সনদ দেখে প্রকৃত এতিম শিশু বাছাই করা গেলে রাষ্ট্রিয় অর্থ লোপাটের এ মহোৎসব বন্ধ করা যাবে। এ বিষয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। এবং আমি অনেক গুলো এতিমখানার নামে অভিযোগ পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা বরগুনা জেলার সকল এতিমখানা গুলো ঘুরে দেখেছি। যে এতিমখানায় যে কয়জন প্রকৃত এতিম আছে তাদের নাম উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। এতিম নেই, অথচ ক্যাপিটেশন গ্রান্ড পাচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরগুনা জেলায় সরকারের তালিকাভুক্ত সর্বমোট ১২৪টি এতিমখানা রয়েছে। এসব এতিমখানায় এতিম শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে দুই হাজার তিনশত ৮৮ জন। বাস্তবতা সেখানে পুরোটাই ভিন্ন। এসব এতিমখানার নামে নানা কৌশলে প্রতিমাসে সরকারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি।

সকল অভিযোগ অস্বিকার করে শিশু সদনের দায়িত্বে থাকা বরগুনা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ বলেন, আমার এখানে ৪০-৪২ জনের মত এতিম আছে। বাকিরা দুস্থ ও গরীব। তাই তারাও এখানে থাকছে। আর এতিম খানার জন্য আলাদা কোন ভবন নেই, তাই মাদরাসার ভবনেই রাখা হচ্ছে তাদের।

যেখানে কাগজে কলমে ৮৪ জন এতিম থাকার কথা সেখানে কেনো একজন ও এতিম নেই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ব্যাস্ততা দেখিয়ে চলে যায়।


এমইউআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন