ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

Motobad news

থাকছে না শেবাচিমের করোনা ইউনিট, হচ্ছে মেডিসিন বিভাগ

থাকছে না শেবাচিমের করোনা ইউনিট, হচ্ছে মেডিসিন বিভাগ
ফাইল ছবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে কমে গেছে করোনা মহামারির প্রকোপ। এ কারণে বিভাগের সর্বপ্রথম চালু হওয়া শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটটি আর থাকছে না। পাঁচ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি এখন সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

হাসপাতালের মূল ভবন থেকে কয়েকটি বিভাগ স্থানান্তর হচ্ছে করোনা ইউনিট নামে পরিচিতি পাওয়া পূর্ব পাশের ভবনটিতে। এরি মধ্যে এর সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। খুব শিঘ্রই স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি নতুন ভবনে রোগী ভর্তি এবং চিকিৎসা কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

এমনটিই জানিয়েছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। তার মতে এই ভবনে সাধারণ রোগী ভর্তিসহ চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হলে পুরাতন ভবনে রোগীর চাপ কমবে। এতে চিকিৎসা সেবার পরিবেশ যেমন সুন্দর হবে তেমনি সেবার মানও বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি।

তবে দক্ষিণাঞ্চল তথা এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ আয়োতনের এই হাসপাতালটিতে আধুনিক চিকিৎসা সেবার মান ধরে রাখতে চিকিৎসক এবং নার্সের পাশাপাশি জনবল নিয়োগ জরুরি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে ২০২০ সালে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়। তবে এর আগেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সারাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় পৃথক ইউনিট চালু করা হয়।

এর ধারাবাহিকতায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঁচ শয্যার করোনা ইউনিট প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের পূর্ব পাশে নির্মানাধীন পাঁচতলা বিশিষ্ট বর্ধিত ভবনটিকে করোনা ডেডিকেটেড ইউনিট হিসেবে প্রস্তুত করেন কর্তৃপক্ষ। আর এই ভবনে সর্বপ্রথম ২০২০ সালের ১৭ মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগী ভর্তি হন। এরপর থেকেই করোনা ইউনিটটিতে বাড়তে থাকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যে কারণে করোনা ইউনিটের শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। যার মধ্যে ২৭০টি করোনা এবং আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ৩০ শয্যার আইসিইউ করা হয়।

শেবাচিম হাসপাতাল পরিচালকের তথ্য সংরক্ষক আবু জাকারিয়া খান স্বপন জানিয়েছেন, ‘শুরু থেকে বুধবার ২৯ মার্চ পর্যন্ত গত দুই বছরে করোনা ইউনিটে মোট চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন ৭ হাজার ৬৭২ জন। যার মধ্যে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ৪৮৯ জন। এছাড়া মৃত্যুবরণ করেছেন এক হাজার ৪৭৫ জন।

এদিকে, ‘বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং সনাক্তের হার একেবারেই কমে গেছে। যে কারণে তিনশত শয্যার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন মাত্র একজন। বাকি শয্যাগুলো একেবারেই শূণ্য পড়ে আছে। এ কারণে মার্চ মাসের শুরুতেই করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মচারীদের প্রত্যাহার করে পুরানো ভবনে পুনরায় সংযুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া আক্রান্ত রোগী ছাড়া করোনা ইউনিটে সন্দেহজনক কোন রোগী এখন আর ভর্তি করা হচ্ছে না।

অপরদিকে, তিনশ শয্যার করোনা ইউনিটটি রোগী শূণ্য অবস্থায় পড়ে থাকলেও হাসপাতালের মূল ভবনে রোগীদের চাপ বাড়ছেই। কাগজে-কলমে হাজার শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন গদে দেড় থেকে পৌঁনে দুই হাজার রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। আবার বহিঃর্বিভাগ ভিত্তিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন আরও দুই হাজারের বেশি রোগী।

এর ফলে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জায়গা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ওয়ার্ডে জায়গা সংকটের কারণে বারান্দায় চাদর বিছিয়ে রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মহিলা মেডিসিন, শিশু ওয়ার্ড, মহিলা সার্জারী এবং প্রসুতী ওয়ার্ডের চিত্র খুবই ভয়াবহ। এসব ওয়ার্ডের বারান্দায় অতিরিক্ত শয্যা এবং চাদর বিছিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসার পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্য সেবাও ব্যহত হচ্ছে। তাই মুল ভবনে রোগীর চাপ সামাল দিতে করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটনিট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘পুরাতন ভবনের দন্ত, নাক-কান-গলা, চক্ষু, ফিজ্যিাল মেডিসিন, চর্ম ও যৌন বিভাগ স্থানান্তরের কথা রয়েছে। আর খালি হওয়া পুরাতন ভবনের ওয়ার্ডগুলোতে মহিলা মেডিসিন এবং প্রসুতী (লেবার) ওয়ার্ড স্থানান্তর হতে পারে। নতুন ভবনে স্থানান্তর হওয়া বিভাগগুলোর রোগীদের চিকিৎসায় ইনডোর (ওয়ার্ড) এবং আউটডোর (বহিঃবিভাগ) ব্যবস্থা থাকবে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, ‘ওয়ার্ড স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়ে ইতোপূর্বে স্ব স্ব বিভাগের প্রধানদের নিয়ে আলোচনা করেছেন হাসপাতাল পরিচালক। এসময় বিভাগীয় প্রধানরা পরিচালকের প্রস্তাবের সম্মতি জানিয়েছেন। যে কারণে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ণে স্ব স্ব বিভাগের প্রধানদের নিয়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করা হয়। তারা নতুন ভবনের প্রস্তাবিত ওয়ার্ডগুলো পরিদর্শন করেছেন। তবে নতুন ভবন সাধারণ রোগী ভর্তি রাখার জন্য উপযুক্ত নয় বলে মনে করছেন কমিটির সদস্যরা।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচ.এম সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘আমরা চাচ্ছি মুলভবন থেকে পুরো মেডিসিন বিভাগ সরিয়ে নিতে। মেডিসিন সংক্রান্ত যেসব বিভাগ রয়েছে সেগুলো পূর্ব পাশের নতুন ভবনে নেয়া হবে। যার মধ্যে মেডিসিন, ফিজিক্যাল মেডিসিন, কিডনি, নিউরো মেডিসিনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের ইন্ডোর এবং আউটডোর দুটিই নতুন ভবনে নেয়া হবে। এজন্য আমরা মোটামুটি প্রস্তুতি প্রস্তুতিও নিয়েছি। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ মহোদয়কেও সিদ্ধান্তের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘চাইলেই আমরা নতুন ভবনে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু করতে পারছি না। কেননা নতুন ভবনটি এখনো প্রস্তুত নয়। এটি করোনার কারণে আপদকালিন চালু করা হয়েছিলো। এটি রোগীদের ওয়ার্ড হিসেবে যেভাবে তৈরি করা প্রয়োজন সেভাবে করা হয়নি। পর্যাপ্ত বাধরুম এবং কেবিনের ব্যবস্থাও নেই। এ বিষয়ে আমরা গণপূর্ত বিভাগের সাথে কথা বলেছি। কিছু পয়লেট তৈরি করা খুবই জরুরি। পাশাপাশি নতুন ভবনে প্যাথালজিক্যাল ল্যাব চালু করতে হবে। এটা না হলে বিভাগ চালু করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘প্রসুতী বিভাগটিও স্থানান্তরের পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু এটা করতে হলে শিশু বিভাগও সেখানে নিতে হবে। তাছাড়া নতুন ভবনে অপারেশন থিয়েটার নেই। যে কারণে প্রসুতী বিভাগ সেখানে স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। গণপূর্ত বিভাগ যতদ্রুত এখানকার সমস্যা সামাধান করে দিবে তত দ্রুতই আমরা নতুন ভবনে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।


কেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন